শ্রীমঙ্গলে রেলওয়ের অভিযানে শতকোটি টাকার ভূমি উদ্ধার 

    0
    262

    “৩৮ বছর পর রেলওয়ের শতকোটি টাকার ভূমি উদ্ধার,অভিযান চলবে,দখলদাররা আতংকিত সাধারণ জনগণ খুশী,কেহ কেহ বলছে স্বাধীনতার পরে এমন অভিযান শ্রীমঙ্গলে কখনো দেখিনি” 

    সোলেমান আহমেদ মানিক,শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দীর্ঘ ৩৮বছর পর রেলওয়ের শতকোটি টাকার ভূমি উদ্ধার করেছে রেল বিভাগ। আজ বুধবার সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযানে রেলওয়ে ও জেলা পুলিশের শতাধিক আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় ২টি এস্কেভেটর দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। এতে শহরের প্রভাবশালীদের দখলে থাকা ভানুগাছ সড়কের মুক্তিযোদ্ধা কৃষি নার্সারী প্রকল্প, অভিজাত রেস্টুরেন্ট ‘পাঁচ ভাই’, গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম, ফার্নিচারের শো-রূম, সেলুন, চা পাতার দোকান, বাসা বাড়ি, ভ্যারাইটিজ ষ্টোর, ফার্মেসী, হার্ডওয়্যারের দোকান, ওয়ার্কসপ, ট্রান্সপোর্ট অফিসসহ শতাধিক পাকা স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়।
    বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার-ঢাকা নজরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুর রহমান মামুন, বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (রেল) মইনুদ্দিন আহমেদ,  শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা, জিআরপি শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আলমগীর হোসেন, রেলওয়ের কানুনগো ইকবাল মাহমুদ, শ্রীমঙ্গল উপজেলা ভূমি অফিসের কানুনগো শ্রীপদ এসময় উপস্থিত থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম তদারকি করেন।
    এভাবেই ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে শ্রীমঙ্গলে দীর্ঘ ৩৮বছর ধরে দখলে থাকা রেলওয়ের শতকোটি টাকার ভূমিতে নির্মিত স্থাপনা। ছবি প্রতিনিধি।  

    সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিকেল ৪টা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযানে রেলের ২৮৭ শতক জমির উপর বিভিন্ন স্থাপনা সম্পূর্ণ গুড়িয়ে রেলের এসব সম্পত্তি উদ্ধার করা হয়। এসময় ভানুগাছ সড়কের উত্তর-পূর্ব দিক এক প্রকার ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়। এর আগে সকালে শহরের এই অংশের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা উচ্ছেদকালে দ্রুত মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। দোকানের যে যেভাবে পারে ভ্যান রিক্সা ট্রাকযোগে মালামাল সড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। এসময় উচ্ছেদ অভিযান দেখতে ভানুগাছ সড়কে বিপুল সংখ্যক উৎসুক জনতা ভীর করেন। এতে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

    জানা যায়, গত ৩৮ বছর ধরে অবৈধ দখলে ছিল রেলের শতকোটি টাকার ভুমি। এর আগে কয়েকদফা উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও উদ্ধার করা যায়নি এক ছটাক ভূমিও। বাংলাদেশ রেলওয়ের মালিকানাধীন শ্রীমঙ্গল স্টেশন এলাকার ভানুগাছ রোডের পূর্বপাশ সংলগ্ন রূপশপুর মৌজায় জেএল নং ৬৭, খতিয়ান নং-৩, এসএ দাগ-১৭৬১’এ ২৮৭ শতক ভূমি রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একাংশের নাম ভাঙ্গিয়ে এক শ্রেণীর দখলদার শহরের গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক এলাকায় ‘কৃষি নার্সারী প্রকল্প’র নামে ১৩৫ শতক ভূমি দখলে নিয়ে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে।
    এছাড়া শহরের শতাধিক প্রভাবশালী একই দাগের ১৫২ শতক ভূমি দখলে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন শতাধিক বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সূত্র মতে, এই ১৫২ শতক ভূমির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। এতে সরকার এখাত থেকে বছরে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল।
    মুক্তিযোদ্ধা কৃষি নার্সারী প্রকল্পসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পরে চিত্র । ছবি প্রতিনিধি।

    একটি সুত্র জানায়, সরকারী রাজস্ব বাড়াতে ১৯৮১ সালে টেন্ডারের মাধ্যমে এসব জমিতে ১৮২টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। সে সময় হানিফ ও অপরাপর দখলদারদের করা একটি স্বত্ব মামলার জটিলতায় রেল বিভাগ সেসব প্লটের দখল বুঝিয়ে দিতে পারেনি। অভিযোগ রয়েছে, দখলদাররা রেলের আইন ও সংশ্লিষ্ট শাখার এক শ্রেনীর অসৎ কর্মকর্তাদের যোগ সাজসে ভূঁয়া ও জাল দলিল সৃষ্টি করে ভূমি দখলে নিতে একের পর এক স্বত্ব মামলা করে। এরই মধ্যে এসব মামলা উচ্চ আদালত কর্তৃক খারিজ হয়। ফলে উচ্চ আদালতের রেলের পক্ষে রায় থাকা সত্বেও দখল ধরে রাখতে সামর্থ হয়েছিল প্রভাবশালীরা।

    জানা গেছে, গত ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা কৃষি নার্সারী প্রকল্পসহ অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রেল বিভাগ এক অভিযান চালায়। এসময় দখলদাররা মুক্তিযোদ্ধা ব্যানার ও বঙ্গবন্ধুর ছবি সামনে নিয়ে সেই অভিযানে বাঁধা দেয়। বাঁধার মূখে পড়ে রেল বিভাগ অভিযান স্থগিত করে চলে যায়।
    উচ্ছেদ অভিযানের ব্যাপারে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, ‘শ্রীমঙ্গলে রেলের এই ভূমি উদ্ধার করে রাস্তা প্রসস্থ করা ও বাকি ভূমি  লিজের আওতায় আনা হবে। ২০১৬ সালের ব্যর্থ উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে অতিতের অনেক ঘটনা আছে, আজকের এই উচ্ছেদের মাধ্যমে আমরা কলঙ্কমুক্ত হতে পারবো। আর শ্রীমঙ্গল বৃট্টিশ আমল থেকেই ঐতিহ্যবাহী একটি শহর, এই উন্নয়ন রেলের জায়গাকেই ঘিরে। বৃট্টিশ আমল থেকে রেল লাইন থেকে ৫’শ ফুট পর্যন্ত জমি অধিগ্রহন করা আছে। গত পঞ্চাশ বছর ধরে প্রভাবশালীরা রেলের অনেক ভূমি দখলে নিয়ে রাখে।
    এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো জানান, “তারা বিভিন্ন ভাবে আমাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমি কখনও ম্যানেজ হইনি। এটা আমার ধর্মে নেই।”
    অপর একটি সুত্রে জানা “একই ধরনের অভিযান আগামী কালও চলবে।”