শ্রীমঙ্গলে ফুটন্ত পানিতে ঝলসানো মামলার আসামি-৫ঃ আটক-২

0
474
শ্রীমঙ্গলে ফুটন্ত পানিতে ঝলসানো মামলার আসামি-৫ঃ আটক-২
ফুটন্ত পানিতে ঝলসে যাওয়া নারী নিবা কর (৩০) হাসপাতালে চিকিতসাধিন,পাশে তার বোন।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ  শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৩ নং সদর ইউনিয়নের নোওয়াগাও গ্রামে নারীর শরীরে গরম পানি ঢেলে ঝলসে দেওয়ার অভিযোগে থানায় অভিযোগ আসার সাথে সাথে মামলা করে পুলিশ কর্মকর্তাদের দ্রুত পদক্ষেপে ২ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে গতকাল আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

জানা যায়,১৪ মার্চ ২০২২ ইং তারিখ সকাল ৭ টার দিকে টিউবয়েলে সাবান পানি রাখা নিয়ে দুই পরিবারের ঝগড়ার সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে প্রতিবেশী এক নারীর শরীরে গরম পানি ঢেলে গলা থেকে বুকের স্পর্শকাতর স্থান ঝলসে দিয়ে গুরুতর আহত করেছে অপর প্রতিবেশী নারী ও তার স্বামী গং। মারাক্তক আহত নারী বর্তমানে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে।মারাক্তক ভাবে ঝলসে যাওয়া আহত নারীর নাম নিবা কর (৩০) স্বামী দীপন কর,তিনি ৩ সন্তানের জননী।

অপরদিকে হামলাকারী অভিযুক্তরা হচ্ছেন, সমর কর (৫৮), পিতা মন্দন কর ও রিনা কর (৪৮) স্বামী সমর কর গং ও তাদের সন্তানেরা।      

মামলার সুত্র  ও আহত নিবা কর এর বক্তব্য থেকে জানা যায় নোয়াগাও গ্রামের মেম্বার শাজাহান মিয়ার জায়গায় বসবাসকারী দুটি পরিবারের মধ্যে গত ইউপি নির্বাচন থেকে কোন না কোন সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই আছে।গত কিছুদিন আগে আহত নারী বিনা কর এর একটি ছাগল মেরে ফেলার অভিযোগ নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহজাহান বিচারের আশ্বাস দিয়ে ও বিচার না করার অভিযোগ তোলেন তিনি।

আহত নিবা কর বলেন, প্রতিবেশী নারী রিনা কর ও তার স্বামী সমর কর ও তার সন্তানেরা এক প্রভাবশালীর উস্কানিতে বারবার আমাদেরকে নির্যাতন করে আসছে। এ ব্যাপারে বিচারের প্রার্থনা করলে ও বিচার পাওয়া যায়নি। ঘটনার দিন টিউবয়েলের সামনে সাবান পানি ফেলে পরিষ্কার না করে রেখে চলে আসায়,পিচ্ছিল দেখে একা একা বলছিল যে,বাড়ীতে  ছোট ছোট বাচ্চা আছে এটা জেনেও সাবান পানি রেখে যাওয়াটা কোন আক্কেলের? যে কোন সময়ে বাচ্চাদের পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কথা শেষ না হতেই তার কথায় জবাব দিয়ে তাকে মারতে আসে প্রতিবেশী সমর কর,ছেলে ও তার স্ত্রী গং।

এসময় মারদরের এক পর্যায়ে রিনা কর তার নিজের ঘরের চুলা থেকে লবণ চা রান্নার ফুটন্ত গরম পানি এনে তার গায়ে ঢেলে দেন। ফুটন্ত পানি ঢেলে দেওয়ার পরেও তাকে আবারও মারধোর করে বলে তিনি অভিযোগ করেন। ওই সময়ে ওই নারীর শরীরে পানি ঢালার সুযোগ ও দেওয়া হয়নি বলে তিনি জানান। এতে শরীর ঝলসে গিয়ে চামরা উঠা এবং যন্ত্রণা বৃদ্ধি পেতে থাকলে আহত নারীর ভাই ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় প্রথমে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেলে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে তার অবস্থা আরো খারাপ হলে দ্রুত শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট ঢাকাতে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তিনি শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিট ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা অপরিবর্তিত।

এদিকে আহত নারীর ভাই বিতেশ কর বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

চিকিৎসা শুরুর পূর্বে,পাশে বড় বোন।

মামলা নাম্বার ২৬, তারিখ-১৪-০৩-২০২২, ধারা- নারী শিশু নির্যাতন ২০০০ এর ২০০৩ এর ৪(২)(ক)/৪(২)(খ)/৩০ তৎসহ ১৪৩/৩৪১/৩২৩/৩০৭/৫০৬,পেনাল কোড।

মামলা রেকর্ডের সাথে সাথে শ্রীমঙ্গল সার্কেলে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে,শ্রীমঙ্গল থানার ওসি শামীম অর রশিদ তালুকদার এর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে এবং তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ূন কবিরের সহযোগিতায় পুলিশের একটি টিম পলাতক আসামীদের দুইজনকে কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকা থেকে আটক করেন।আটককৃতরা হলো-রিনা কর (৪৮) স্বামি সমর কর ও সমর কর (৫৮) পিতা মন্দন কর।  

এ ব্যাপারে মামলার আইও আনোয়ার হোসেন পাঠান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা রেকর্ড এর পরপর সার্কেল স্যার,ওসি স্যার ও তদন্ত স্যারের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে আসামী ২ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং বাকি আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে,আহত নারী নিবা কর বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।