শ্রীমঙ্গলে টাকা না দিলে কোন ভাতার কার্ড হাতে আসে না

    0
    285

    “আবার ভাতা পেলেও দিতে হয় কমিশন, মহিলা মেম্বারের উপর দুনীর্তি আর অনিয়মের যত অভিযোগ” 

    কার্ড করতে নাকি অনেক টাকা লাগে। উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে নাকি ঘুষ দিতে হয়। উপজেলার কর্মকর্তাদের টাকা না দিলে কার্ড করা যায় না এসব কথা বলে মেম্বারনি আমার কাছ থেকে কার্ড করার আগে ৫ হাজার টাকা নেন। আমি ঋণ করে তাকে টাকা দেই। পরে আমাকে অনেক দিন ঘুরিয়ে কার্ড করে দেন।

    জহিরুল ইসলাম,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ  মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অগণিত অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে কিছু দুর্নীতিবাজ জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে।যাদের বিরুদ্ধে তাদের সিন্ডিকেটের হুমকির মুখে প্রকাশ্যে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেনা ভুক্তভোগিরা।

    এ দিকে ভূনবীর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যা মিনারা বেগম৷ তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের কমতি নেই।তাদের অভিযোগ বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভবতী ভাতা এমন কোনো ভাতা নেই যেখান থেকে এই ইউপি সদস্য কমিশন নেন না এমন কি দশ টাকা কেজি চাল থেকে ভাগ নেন তিনি।

    এসব করে তিনি গত ৪ বছরে বণে গেছেন কয়েক লাখ টাকার মালিক।শূণ্য থেকে এখন হয়েছেন লাখ টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স;র মালিক।কিনেছে জায়গা জমিন।থাকতেন মাটির ঘরে এখন থাকেন টাইলসের মেঝে ঘরে বসবাস।এলাকাবাসী বলছেন এইসব করেছেন সরকারী বিভিন্ন ভাতার টাকার কমিশন মেরে ও অন্যন্যা অনিয়ম করে।

    উপকারভোগীরা কার্ড করার জন্য কখনো ভাতার পুরো টাকা, কখনো অগ্রিম টাকা, কখনো বা ভাতারা টাকার একটি অংশ দিতে বাধ্য হন ওই ইউপি সদস্যকে৷

    ইউনিয়নের বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা৷ টাকা না দিলে কার্ড করে দেন না বলেও অভিযোগ করেছেন তার এলাকার ভোটাররা।

    বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য কার্ড পাওয়ার আগে ও পরে পাঁচ হাজার টাকা না দিলে এই নারী ইউপি সদস্য কার্ড বাতিল করার হুমকিও দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কার্ডের করিয়ে দেওয়ার টাকা বিষয়টি কাউকে জানালে তাকে হেনস্তা বা হুমকি দিয়ে দেন তিন উপকারভোগীদের।

    ভুনবীর ইউনিয়নের বাসিন্দা ছমেদ মিয়া বলেন,আমি বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু, ভাতা পাই না। মেম্বারনির কাছে গেলে তিনি বলেন, ভাতা করে দেব, কিন্তু ভাতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে।আমি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। তারপরে তার কাছে অনেক ধন্না দিয়েও কার্ড পাইনি

    পরে ভাবলাম আমি গরিব মানুষ। কিছু টাকা দিয়েও যদি কার্ড পাই, অসুবিধা কী।পরে মেম্বারনিকে বলেছি, ভাতার টাকা পেলেই পাঁচ হাজার টাকা দেব। পরে তিনি আমায় কার্ড করে দেন।

    তিনি আরও বলেন,যেদিন ব্যাংক থেকে আমি বয়স্ক ভাতার টাকা উঠাই, সেদিন তিনি ব্যাংকের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলেন।ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পরই তিনি পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে নেন।

    শুধু আমার কাছ থেকেই নয়, আরও কয়েকজনের কাছ থেকেও নেন, যোগ করেন ছমেদ মিয়া।

    জ্যোৎস্না বেগম নামে একজন বলেন, আমি গর্ভবতী অবস্থায় মিনারা বেগমের কাছে গিয়েছিলাম গর্ভ-ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, টাকা ছাড়া এসব কার্ড করা যায় না। আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। তিনি বলেন, যতবার টাকা পাবে ততবার অর্ধেক টাকা দিতে হবে।
    আমি গরিব মানুষ। টাকার দরকার ছিল তাই আমি রাজি হই। আমি চার বার তিন হাজার টাকা করে পাই। এর মধ্যে তিন বার তিনি টাকা উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে অর্ধেক (১,৫০০ টাকা) করে নিয়েছেন। শেষবার আমি তাকে টাকা দেইনি।

    জ্যোৎস্না বেগম নামের এক নারী বলেন, আমি গর্ভবতী অবস্থায় মিনারা বেগমের কাছে গিয়েছিলাম গর্ভভাতার একটা কার্ড করে দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, টাকা ছাড়া এসব কার্ড করা যায় না। আমার কাছে কোন টাকা ছিল না। তিনি বলেন, যতবার টাকা পাবে ততবার অর্ধেক উনাকে দিতে হবে। আমি গরীব মানুষ, টাকার দরকার ছিল। তাই আমি রাজি হই। আমি চারবার তিন হাজার টাকা করে পাই। এর মধ্যে তিনবার তিনি টাকা উঠানোর সাথে সাথে অর্ধেক (১৫০০ টাকা) নিয়েছেন। শেষবার আমি তাকে টাকা দেইনি। তিনি এই টাকা নেওয়ার জন্য আমার সাথে অনেক খারাপ আচরণ করেন। বলেন আর জীবনেও আমার ও আমার পরিবারের কাউকে কার্ড করে দিবেন না। তিনি মোট ৪ হাজার পাঁচশ টাকা আমার কাছ থেকে নিয়েছেন।

    চেরাগ আলী নামে ১জন অভিযোগ করে বলেন, কার্ড করতে নাকি অনেক টাকা লাগে। উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে নাকি ঘুষ দিতে হয়। উপজেলার কর্মকর্তাদের টাকা না দিলে কার্ড করা যায় না এসব কথা বলে মেম্বারনি আমার কাছ থেকে কার্ড করার আগে ৫ হাজার টাকা নেন। আমি ঋণ করে তাকে টাকা দেই। পরে আমাকে অনেক দিন ঘুরিয়ে কার্ড করে দেন।

    গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, তারা কার্ড করার আগেই ইউপি সদস্য মিনারা বেগমকে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। যারাই টাকা দিয়েছেন তাদেরই কার্ড হয়েছে। কেউ আগে টাকা না দিলেও পরে ব্যাংক থেকে ভাতা পাওয়ার সময় টাকা তুলে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

    ৫ হাজার টাকা নেওয়ার পরও তিনি আরও টাকা দাবি করেন উল্লেখ করে গ্রামবাসীরা জানান, যদি কেউ মুখ খোলে তাহলে মিনারা বেগম তাদের কার্ড বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দেন। তার লোকজন মারধরের হুমকি দেয়। তাই কেউ এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না।

    এদিকে, উপকারভোগীরা যে ব্যাংক থেকে টাকা তুলেন সেই ব্যাংকের নিচে এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মিনারা বেগম প্রায়ই লোকজন নিয়ে এখানে আসেন এবং ব্যাংকের নিচে দাঁড়িয়ে থাকেন।

    ভুনবীর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) মো. নিয়াজ ইকবাল মাসুদ বলেন,আমাদের কাছেও অনেকে ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় সাধারণ জনগণ ভয়ে উনার নামে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন না। তবে আমাদেরকে এলাকার লোকজন প্রায়ই অভিযোগ করছেন। আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি।

    এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মিনারা বেগম সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কোনো ভাতার কার্ড করার জন্য কারো কাছে টাকা-পয়সা চাইনি।

    এব্যাপরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আমি অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। সত্যতা পাওয়া গেলে ওই ইউপি সদস্যার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।