শ্রীমঙ্গলে কালীঘাট ইউপি জনমিলন কেন্দ্র ব্যবহারে টাকা দাবি

    0
    313

    সাদিক আহমদ ও ছাইফুর রহমান চৌধুরীঃ   মৌলভীবাজার জেলার অন্যতম উপজেলা শ্রীমঙ্গল। পর্যটন এলাকা হিসেবে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে  সারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থী ও ভ্রমণপিপাসুদের এক বিরাট অংশ এই এলাকায় যাতায়াত করে থাকে।মাঝে মাঝে বিভিন্ন এলাকার পর্যটন প্রিয় লোকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ পাওয়া যায়।কেহ সাহস করে অভিযোগ করে এবং কেহ বা কিভাবে কোথায় অভিযোগ করবে সে সুযোগ পায়না সময়ের অভাবে।

    গতকাল ১১ ফেব্রুয়ারী সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে এমনই একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।

    ঘটনার বিবরণে জানা যায়,ওইদিন সোমবার সকাল আটটার দিকে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা থেকে একটি গাড়ী শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষাসফরে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় আসে।

    “সান ফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন” নামক একটি স্কুলের ছাত্রছাত্রীকে   নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষকদেরসহ শ্রীমঙ্গল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখেন। এক পর্যায়ে দুপুরের খাবারের সময় হলে বাচ্চারা খাবারের জন্য তাড়া দেয়। স্থানিয়দের পরামর্শে তখন খুব কাছে থাকা ৮ নং কালীঘাট ইউপি অফিসের জনমিলন কেন্দ্রে অথবা চত্বরে বসে শিশু বাচ্চাদের নিয়ে খাবারের অনুমতি চাইলে কর্তৃপক্ষ প্রথমে তাদেরকে বাধা দেয়।তারপর ভিতরে যেতে দেয় এবং ইউনিয়নের সচিব মিল্লাত আলী দুই হাজার টাকা দাবি করে কথাবার্তার একপর্যায়ে ২ হাজার টাকা থেকে পর্যায় ক্রমে বারোশত থেকে পাঁচশত টাকা দাবি করে এবং সচিব ভ্রমণকারীদের জানান,”আমাদের এখানে খেতে হলে ২/৩ হাজার টাকা রাখি আপনাদের তো কমই বলা হয়েছে”।

    পরে তাদের সাথে থাকা এক অভিবাবক সাংবাদিকের কানে কথা গুলো গেলে তিনি সচিব থেকে চেয়ারম্যানের নাম্বার নিয়ে চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালাকে সাংবাদিক পরিচয়ে ফোন দিয়ে তার সচিব কর্তৃক ২০০০ টাকা দাবির বিষয়ে অভিযোগ করলে তিনি(প্রানেশ গোয়ালা)প্রশ্ন করেন,আপনাদেরকে আমার অফিসের ভিতরে ঢোকার অনুমতি কে দিয়েছে? সাংবাদিক জানান আপনার অফিসের লোকজনদেরকে বলেই আমরা ভিতরে ঢুকেছি। তখন উনি(চেয়ারম্যান) বলেন “টাকা তো চাওয়ার কথা না তারপরও আমি দেখি বলে উনি নাম্বারটি রেখে দেন এবং সচিবকে ফোন দিলে তিনি তার কাছে ৫০০ টাকা চেয়েছে বলে স্বীকার করেন।সর্বশেষ উনি(চেয়ারম্যন) আর আমাদেরকে কল দেননি।শেষে ৫০০ টাকা না দিতে পেরে আমরা বাইরে চলে যাই এবং খোলা আকাশের নিচে বাচ্চাদেরকে নিয়ে রাস্তার পাশে বসে খাবারের কাজ শেষ করি এমন ভাবেই অভিযোগ করেন ভ্রমণকারীরা।  

    এ ব্যাপারে আমার সিলেটের পক্ষ থেকে ৮ নং কালীঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালার সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার মোবাইল নম্বারটি সুইচ-অফ পাওয়া যায়।

    উপরোক্ত বিষয়ে অভিযোগ প্রাপ্তির ভিত্তিতে ৮ নং কালিঘাট ইউনিয়নের সচিব মিল্লাত আলীর সাথে কথা বললে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন-“ঐ দিন শ্রীমঙ্গল শিক্ষক সমিতির প্রোগ্রাম থাকায় ইউপি জনমিলন কেন্দ্র খালি ছিলো না।তারা তা ব্যবহার করতে চাইলে আমাদের অফিসের গ্রাম পুলিশ রাখাল ও ঝাড়ুদার মহিলা তাদের কাছে ৫০০ টাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য দাবী করে,যেহেতু তারা আমাদের টয়লেট ব্যবহার করবে সেজন্য।পরে অবশ্য আপনাদের যা ইচ্ছে তা দিয়েন বলার পরেও উনারা চলে যান এবং আমাদেরকে চার্জ করেন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলেন “আপনাদের কি সরকার বেতন দেন না ? এই সময় আরো বিভিন্ন ধরণের কথা বলে তারা সেখান থেকে চলে যান।

    অপরদিকে এ ব্যাপারে “সান ফ্লাওয়ার স্কুলের” প্রধান শিক্ষক জসিম মারুফ বলেন বাচ্চাদের নিয়ে খাবার খেতে একটি জায়গা খুজছিলাম,তখন স্থানীয়দের পরামর্শে আমরা ৮নং কালীঘাট ইউনিয়ন পরিষদে যাই এবং ইউনিয়নের জনমিলন কেন্দ্রে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য অনুমতি চাই। কিন্তু দুঃখের বিষয় এ সময় স্থানটি খালি থাকার পরেও স্থানীয় কর্মিরা জনমিলন কেন্দ্রে বসে খাওয়ার জন্য আমাদের কাছে ২০০০ টাকা দাবি করে। পরে আমরা ইউনিয়নের মাঠে বসে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। মাঠে বসে খাওয়ার জন্যও তারা আমাদের কাছে ৫০০ টাকা দাবি করে। পরে ছাত্রদের নিয়ে আমরা রাস্তার পাশে বসে দুপুরের খাবার শেষ করি। একটা উন্নয়নমূলক দেশে এমন একটা ন্যাক্কার জনক ঘটনার জন্য আমি অত্যন্ত ব্যথিত এবং ক্ষুদ্ধ। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে আমি এর বিচার দাবি করছি।

    ছাত্রদের অভিবাবক ফয়েজ উদ্দিন, শামছুল ইসলাম রুবেল, আছমা বেগম, সারজুল ইসলাম বলেন,”আমরা শিক্ষা সফরে এসে খাবার খাওয়ার জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ চেয়েছি, কিন্তু কালীঘাট ইউনিয়নের সচিবের আচরণে আমরা অবাক হলাম।একটি পর্যটন এলাকায় যদি এ ধরণের অবস্থা হয়  তাহলে সেই দেশে উন্নয়ন কিভাবে হবে ? শেষ পর্যায়ে আমরা  আমাদের বাচ্ছাদের কে নিয়ে রাস্তার পাশে বসে খাবার খেতে হয়। এরকম অসাধু ঘোষখোর লোকদের জন্য পর্যটন এলাকার বদনাম হচ্ছে তাই আমরা প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”

    এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন”যেহেতু স্কুল শিক্ষার্থীরা ছিলো সেহেতু তাদেরকে ইউপি জনমিলন কেন্দ্র ব্যবহার করতে দেয়া উচিৎ ছিলো।বিষয়টি যেহেতু আমি শুনেছি অবশ্যই খতিয়ে দেখবো এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবো”।