শ্রীমঙ্গলে ই-কমার্স ব্যবসায় এগিয়ে নারী উদ্যোক্তারা

    0
    417

    সাদিক আহমেদ,নিজস্ব প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অনলাইন ব্যবসায় পুরুষের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন নারী উদ্যোক্তারা। বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে পুরো পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়।

    ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়ায় বদলে গেছে ব্যবসার ধরন। কমে গেছে পরিশ্রম বেঁচেছে সময়।সাধারণ ব্যবসা-বাণিজ্যের চেয়ে বর্তমানে অনলাইন ব্যবসায় ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা এবং নতুন উদ্যোক্তারা। সেই ধারায় পিছিয়ে নেই চায়ের রাজধানীখ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলাও। অনলাইন ব্যবসা বেশ এগিয়ে রয়েছে এই পর্যটন নগরী।

    তবে পুরুষদের চেয়ে অনলাইন ব্যবসায় এগিয়ে রয়েছে উপজেলার নারী উদ্যোক্তারা। মূলত অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে কম পুজি লাগে সেই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের বেকারত্ব দূর করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে শ্রীমঙ্গলের নারী উদ্যোক্তারা। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ফেসবুক পেজ, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ কে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অনলাইন ব্যবসা শুরু করছেন অনেক নারী উদ্যোক্তারা। অনলাইনে বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইন ফ্যাশন হাউজ, জুয়েলারি, স্মার্ট শপ, চা পাতা ব্যবসার সহ বিভিন্ন ব্যবসা করছেন তারা। বর্তমান ডিজিটালাইজেশনের যুগে এখন ঘরে বসেই মানুষ সকল প্রকার কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যে কারণে শপিংমলে না গিয়ে ঘরে বসেই মানুষ অনলাইন থেকে নিজের পছন্দমত সামগ্রী কেনাকাটা করছে মুহূর্তেই।

    তাছাড়া স্বল্প সময়ে সকল প্রকার সামগ্রী ডেলিভারি এবং নিজেদের সময় বেঁচে যাওয়ায় প্রত্যেকের প্রথম পছন্দ এখন অনলাইন শপিং।

    অনলাইন যুগের এসব সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে শ্রীমঙ্গলে নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে রয়েছেন অনলাইনে সব ব্যবসা-বাণিজ্যে।

    খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলায় ইথান কালেকশন, সোহার্দ্য,শিশির বিন্দু, মৃণালিনী,বকুল ফুল, বৃত্তটি ও শাড়ি ঘর, সপ্তমা, চা-কন্যা শাড়ি ঘরসহ বিভিন্ন নামে ফেসবুকে পেজ খুলে অনলাইন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন এসব নারী উদ্যোক্তারা।

    ইথান কালেকশন ফেসবুক পেজের পরিচালক নিশাত আঞ্জুম চৌধুরী বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী কমপ্লিট করার পর থেকে আমি টিউশনির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম।

    করোনা ভাইরাস এর সংক্রমণের কারণে যখন স্কুল-কলেজ সবকিছু বন্ধ হয়ে যায় তখন এই সময়টাকে কাজে লাগাতে আমি এই ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসার চিন্তা ভাবনা করি। প্রথম প্রথম কিছুটা বেগ পেতে হলেও বর্তমানে আমার এই প্রতিষ্ঠান মোটামুটি ভালই এগিয়ে।আমি মনে করি অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে যেকোন কেউ তার সময়কে কাজে লাগিয়ে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। বিশ্বস্ততার সাথে আমার এই প্রতিষ্ঠান দেশের প্রত্যেকটি জেলা-উপজেলায় পণ্য পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর।

    সোহার্দ্য নামক ফেসবুক পেজের উদ্যোক্তা পলি দত্ত পুরকায়স্থ বলেন,অামি পেশায় একজন শিক্ষনবীশ আইনজীবী।

    দেশীয় পন্য নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে আসলে অনেকদিনের কিন্তু কিভাবে শুরু করা যায় তার সঠিক পথটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।এই করোনাকালীন সময় যখন দেখলাম লোকজন ই-কমার্সের প্রতি বেশি ঝুঁকছে তখন নিজের স্বপ্ন পূরণে ইচ্ছা আরো বেড়ে গেলো। তিনি আরও বলেন,আমি শুরু করেছিলাম শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী শিল্প মনিপুরী বিভিন্ন রকম শাড়ি থ্রি পিছ নিয়ে। বর্তমানে সাথে যোগ করলাম নকশিকাঁথা। নতুন নতুন আরো পণ্য কালেকশন করার চেষ্টা করছি।এই কয়েকদিনে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। ভালো খারাপ দুটিই।তারপরও সৌহার্দ্যকে নিয়ে অামি এগিয়ে যেতে চাই।দেশের বিদেশে মনিপুরী শিল্প কে পরিচিত করাই সৌহার্দ্য এর লক্ষ্য।

    শিশির বিন্দু ফেসবুক পেজের উদ্যোক্তা লাকু সিনহা বলেন,আমি শ্রীমঙ্গলে মেয়ে।শিশির বিন্দু ফেসবুক পেজের মাধ্যমে প্রথমে আমি শ্রীমঙ্গল থেকে কাপড় নিয়ে সিলেটে কাপড় বিক্রি করতাম,পড়াশুনার পাশাপাশি হাত খরচের জন্য।যখন করোনা পরিস্থিতিতে শ্রীমঙ্গল ফিরে আসি তখন মাথায় আসে ব্যবসার পরিধিটা একটু বড়ো করি।পরিবারের অনুপ্রেরণা ও বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতায় অনলাইন ব্যবসা শুরু করি। করোনা পরিস্থিতি জন্য কিছু সমস্যার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ফলাফল আশানুরূপ।বর্তমানে সবাই যদি দেশী পণ্য ব্যবহার করতে উৎসাহিত হয় তাহলে আমাদের দেশি পণ্যের ই-কমার্স ব্যবসাটি অতি শীগ্রই ভালো একটি অবস্থানে পৌঁছাবে।

    মৃণালিনী ফেসবুক পেজের উদ্যোক্তা এনি কুন্ডু ঝুমন বলেন,আমি প্রথমে চা পাতা নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম শ্রীমঙ্গলে।এখন আমি নিজে ডিজাইনে বুটিক স্টাইলে এপ্লিকের কাজ করতেছি জামায়,বেড শিটে।অনলাইনে ইচ্ছে জাগে ফ্রেন্ডদের দেখে।আর আমার কাছে অনলাইন বিজনেসটা সহজই মনে হয়েছে।আমি নিজ উদ্যেগে কাজ করতেছি। তিনি আরো বলেন,প্রথমে সেল ছিল না।এখন মুটামুটি ভালো।পরিশ্রম করতে থাকলে আরো ভালো হবে আশা করছি।ভবিষ্যতেও আমি আমার অনলাইন বিজনেস চালিয়ে যাবো।

    এ ব্যাপারে  আরেক অনলাইন ব্যবসায়ী শিউলী আক্তার বলেন, তিনি পৌরসভা ডিজিটাল সেন্টারের একজন উদ্যোক্তা। ডিজিটাল সেন্টার আইসিটি ডিভিশনের এটু আইয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং এটু আই থেকে ই-কমার্স বিষয়ক অনেক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। সেখান থেকে তিনি অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন, এটু আই কর্তৃক ই-কমার্স প্লাটফর্মে আছে একশপ, প্রথমে তিনি একশপ থেকে কেনা বেচা করেন পরবর্তীতে নিজে ফেইসবুক পেইজ খুলে ব্যবসা অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন।
    সে জানায় শ্রীমঙ্গল এর চা, মনিপুরী শাড়ি, থ্রী পিচ, বেড সীট এগুলো নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

    নারী উদ্দোক্তাদের ই-কমার্স ব্যবসায় সম্ভাবনার বিষয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শাহেদা আক্তারের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি মৌখিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ই-মেইলের মাধ্যমে বক্তব্য দিবেন বলে জানালেও শেষ পর্যন্ত বক্তব্য দেন নি। পরে আরো কয়েকবার ফোন দিয়ে চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

    এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম আমার সিলেট টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,বর্তমান সময়ে অনলাইন প্লাটফরম ব্যবহার করে পণ্য কেনা-বেচা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এটা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ব্যাপার যে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা কার্যক্রমে নারীরা এগিয়ে আসছে। এর ফলে আমাদের অনেক নারী উদ্যোক্তা তৈরি হবে এবং শিক্ষিত নারীদের একটা বড় অংশের কর্মসংস্থান হবে। অনলাইন ভিত্তিক এই আধুনিক ব্যবসা অনেকটাই নারী বান্ধব। এজন্য নারীদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আমাদের ক্ষুদ্র/ কুটির শিল্পের বাজার ও বিস্তৃত হচ্ছে। আর এটা প্রকৃত ডিজিটাল বাংলাদেশের বড় একটা ইতিবাচক অগ্রগতি বলে আমি মনে করি।