শ্রীমঙ্গলের ঝিনুক দেবঃপ্রতিবন্ধিত্ব যার প্রতিবন্ধক হতে পারেনি!

    0
    213

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৬ফেব্রুয়ারী,সাদিক আহমেদ ইমনঃ ঝিনুক দেব নামটি সাধারণ  নয় এটি একটি প্রেরণার নাম। প্রতিবন্ধীতা যার প্রতিবন্ধক হতে পারেনি।প্রতিবন্ধিত্বের সাথে লড়াই করে জীবন সংগ্রামে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া এক সাহসী বীর  ঝিনুক দেব। জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিবন্ধীত্বকে জীবনের সঙ্গী করে বড় হতে হচ্ছে তাকে। বাবা যতীন্দ্র দেব এবং মা অলি রাণী দেবীর দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান ঝিনুক।

    "চেয়ার টেবিল ছাড়া এভাবেই লেখা পড়া করে যাচ্ছে ঝিনুক"
    “চেয়ার টেবিল ছাড়া এভাবেই লেখা পড়া করে যাচ্ছে ঝিনুক”

    শ্রীমঙল দক্ষিণ রূপসপুর এলাকার বাসিন্দা সে। শারীরিক ভাবে সে প্রতিবন্ধী।তার দুই হাত এবং দুই পায়ের সবগুলো আঙুল একসাথে জোড় লাগানো। ফলে আঙুল দিয়ে লেখালেখি ও অন্য কোন কাজ করতে পারেনা সে। তাতেই কি থেমে গেছে ঝিনুক? না। দুই হাত দিয়ে কলম ধরে লেখালেখি করে যাচ্ছে সে। অংশ নিয়েছে এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায়। ঝিনুক শ্রীমঙল ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্র।
    সরেজমিনে তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে গেলে  তার পরিবারের সুত্রে জানা যায়,ঝিনুক জন্মের পর থেকেই প্রতিবন্ধী।  আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে ঝিনুকের বাবা তাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যায়। ঝিনুকের আরেক ভাই ঝুমুর দেব একই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।ঝিনুকের মায়ের সাক্ষাতে জানা যায়-জন্মের পর ঝিনুকের মধ্যে যখন প্রতিবন্ধীত্বের ছাপ ফুটে উঠে তখন তারা চিকিৎসার প্রস্তুতি নেন।  কিন্তু অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় ঝিনুকের চিকিৎসা। বর্তমানে ঝিনুকের এক চাচার সামান্য সহযোগিতা ও মা অলি রাণী দেবীর অদম্য চেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে ঝিনুক। তাছাড়া ঝিনুক প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা স্বরূপ ১৫০০ টাকা ভাতা পায়। তারপরও হিমসিম খাচ্ছে ঝিনুকের মা ও তার পরিবার।

    ঝিনুকের ব্যাপারে তার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্যার অয়ন চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি আমাদের জানান,ঝিনুক খুবই মেধাবী ছাত্র। এবার সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এমনকি ২০১৩ সালে জুনিয়র স্কুল চার্টিফিকেট পরীক্ষায় সে অংশগ্রহন করে জিপিএ ৩.৭৫ অর্জন করে বিদ্যালয়ের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে।
    আমরা শিক্ষক অয়ন চৌধুরীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম,স্কুল কতৃপক্ষের কাছ থেকে সে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছে কি না ?
    উত্তরে তিনি আমাদের জানান”ঝিনুককে সবরকম ভাবে সাহায্য করছে স্কুল কতৃপক্ষ।তার কাছ থেকে কোন রকম মাসিক বেতন ও পরীক্ষার ফি নেয়া হয়না। বিনা বেতনে পড়ছে ঝিনুক। তাছাড়া প্রতি মাসে তাকে খাতা-কলম দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছে স্কুল কতৃপক্ষ। শিক্ষকরা ও ব্যাক্তিগতভাবে সাহায্য করে যাচ্ছেন তাকে”।
    আমরা শিক্ষক অয়ন চৌধুরীর কাছে প্রশ্ন করেছিলাম,লেখাপড়া ছাড়া বিদ্যালয়ের অন্য কোন সেক্টরে ঝিনুক অংশ নিচ্ছে কিনা ?
    উত্তরে তিনি বলেন-“বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলায় সে অংশ নিতে চাইলেও বাস্তবতার কারণে আমরা তাকে বারণ করি।কারণ শারীরিক ভাবে সে একটু দুর্বল। তবে তার অধম্য ইচ্ছে বিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্রদের অনুপ্রাণিত করছে।”
    আমরা শিক্ষক অয়ন চৌধুরীর কাছে শেষ প্রশ্ন করেছিলাম,ঝিনুককে দিয়ে আপনি এবং আপনার বিদ্যালয় কেমন সম্ভাবনা দেখছেন ?
    তিনি উত্তরে আমাদের বলেন,”ঝিনুক সফলতার সাথে আগামীর পথে এগিয়ে যাচ্ছে।এটা আমাদের গর্ব। ঝিনুক অবশ্যই মাধ্যমিক স্কুল চার্টিফিকেট পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করবে এবং আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য সুনাম বয়ে আনবে এবং জীবন সংগ্রামে সফলতার সাথে জয়ী হবে সে”।
    এভাবে স্কুল কতৃপক্ষ ও সকলের অসামান্য সহযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে ঝিনুক। ঝিনুককে দেখে নিশ্চই আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি প্রতিবন্ধীরা আমাদের বোঝা নয়,তারা আমাদের গর্ব। তারাও পারে সব করতে। এমনকি তারাও আগামীদিনের বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে পারে। তবে এর জন্য বাংলাদেশ সরকার ও আমাদের সকলকে গভীর দৃষ্টি রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে,অর্থের অভাবে যেন একটি প্রতিবন্ধী শিশুও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। একটি প্রতিবন্ধী শিশুও যেন সমাজে অবহেলিত না হয় সেদিকে আমাদের সকলের দৃষ্টি রাখতে হবে।

    মনে রাখতে হবে এমন হাজারো মেধাবী  ঝিনুক রয়েছে আমাদের দেশে। আমরা যদি তাদের পাশে এগিয়ে আসি,তাহলেই কেবল একুশ শতকের দারিদ্রমুক্ত,নিরক্ষর মুক্ত, সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।