শ্রমিকদের নামে মামলাঃকমলগঞ্জ চা-বাগানে ৭ ঘন্টা কর্মবিরতি

    0
    308

    উপ-মহাব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপক অবরুদ্ধ,সাংবাদিক লাঞ্ছিত

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২২জুলাই,শাব্বির এলাহীঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার এনটিসির পাত্রখোলা চা বাগান  পঞ্চায়েত  সভাপতি সহ চা শ্রমিকদের উপর আদালতে হয়রানীমূলক মামলা করা নিয়ে  চা বাগানে ১৮৬০ জন শ্রমিক বুধবার সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৭ ঘন্টা কর্মবিরতি পালন করছে।  পঞ্চায়েত সভাপতির নেতৃত্বে বিক্ষোব্দ চা শ্রমিকরা চা বাগান কারখানা ও অফিসের প্রধান ফটক (গেইটে) তালাবদ্ধ করলে উপ-মহাব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপক সহ চা বাগানের অফিস কর্মচারীরা সকাল ৬ টা থেকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। ঘটনার খবর সংগ্রহে গিয়ে বিক্ষোদ্ধ শ্রমিকদের ছবি তুলতে গিয়ে উপ-মহাব্যবস্থাপকের হাতে একজন সাংবাদিক লাি ত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

    জানা যায়, প্রায় তিন মাস আগে পাত্রখোলা চা বাগানের দুই দল শ্রমিকের মাঝে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বিরোধ বাঁধে। এ সময় হামলায় একজন চা শ্রমিক গুরুতর আহত হয়। বাগান কর্তৃপক্ষ গুরুতর আহত চা শ্রমিক প্রতাপ গড়ের চিকিৎসা করালেও তার মাথায় কিছুটা বড় ধরনের অস্ত্রপচার করতে হয়েছে। এ হামলার কোন সুষ্ঠু বিচার না হওয়ায় প্রতাপ গড় সম্প্রতি এনটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক ও পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপকের ঈন্ধনে মৌলভীবাজার আদালতে গিয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায়  পঞ্চায়েত সভাপতি দেবাশীষ চক্রবর্তী শিপন সহ চা বাগান  পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দকে আসামী করা হয়। মঙ্গলবার বিকালে কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক জাহিদুল হক সরেজমিন তদন্ত করেন।

    আদালতে মামলা করার দায়ে পাত্রখোলা চা বাগান  পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ সহ চা শ্রমিকরা বিক্ষোদ্ধ হয়ে বুধবার সকাল থেকে চা বাগানের ১৮৬০ চা শ্রমিক কাজে যোগ না দিয়ে কারখানা ও অফিসের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে সেখানেই অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি পালন করে। ঘটনার খবর পেয়ে বুধবার সকাল সাড়ে ৭ টায় সংবাদ সংগ্রহ করতে পাত্রখোলা চা বাগানে আন্দোলনরত বিক্ষোদ্ধ চা শ্রমিকদের ছবি তুলতে গেলে এনটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক এফ এম শাহাজানের হাতে স্থানীয় সাংবাদিক মো. আসহাবুর ইসলাম শাওন লাি ত হন। এ সময় উপ-মহাব্যবস্থাপক সাংবাদিকদের নিয়ে নানা কটুক্তি করেন। তার এহেন আচরণে সাংবাদিক আসহাবুর ইসলাম শাওনসহ চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ তীব্র প্রতিবাদ জানান।

    মামলার বাদী হামলায় আহত প্রতাপ গড় এ প্রতিনিধিকে বলেন, চা বাগান  পঞ্চায়েত সভাপতি দেবাশীষ চক্রবর্তী শিপনের হুকুমেই কিছু চা শ্রমিক অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর ভাবে আহত করেছিল। সময়মত চা বাগান ব্যবস্থাপক চিকিৎসার উদ্যোগ না নিলে সে মারা যেত। তার মাথায় অস্ত্রপচার করা হয়েছিল। কথা ছিল চিকিৎসা শেষে চা বাগানে ফিরলে সামাজিক বিচারে এ হামলার বিচার হবে। কিন্তু চা বাগান  পঞ্চায়েত সহ হামলাকারীরা কেউ এ ঘটনার বিচার করেনি। ফলে তিনি বাধ্য হয়ে আদালতে মামলা করেছেন।

    পাত্রখোলা চা বাগান  পঞ্চায়েত সভাপতি দেবাশীষ চক্রবর্তী শিপন বলেন, আসলে প্রতাপ গড় মদ্যপ অবস্থায় একটি কালভার্ট সেতুর উপর পড়ে সে আহত হয়েছিল। এখানে কেউ তাকে মেরে আহত করেনি। প্রতাপ গড় কেন আদালতে তাকে ( পঞ্চায়েত সভাপতিকে) আসামী করে মামলা করেছে, সেই অভিযোগে সাধারন চা  শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে গেইটে তালা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করছে।

    পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক শামছুল ইসলাম চা শ্রমিকদের কর্মবিরতির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এমনকি পাত্রখোলা চা বাগানের কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এদিকে দুপুর দেড়টায় চা বাগান ফ্যাক্টরীতে শ্রীমঙ্গলস্থ চা শ্রমিক শ্রম অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক (শ্রমিক) গিয়াস উদ্দিন আহমদ এর উপস্থিতিতে এনটিসির উপ-মহাব্যবস্থাপক এফ এম শাহাজান, পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক শামছুল ইসলাম, কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক জাহিদুল হক, মাধবপুর চা-বাগানের ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ  কমুার রায়, মদন মোহন চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন, মাধবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি আশিদ আলী, ধলাই ভ্যালী সভাপতি গোপাল নুনিয়া, পাত্রখোলা চা বাগান  পঞ্চায়েত নেতৃবৃন্দ এক সমঝোতা বৈঠকে বসেন। এ সময় পাত্রখোলা চা বাগান ব্যবস্থাপক মোঃ সামছুল ইসলাম সেলিম লিখিতভাবে মামলা প্রত্যাহার করার আশ্বাস দিলে পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে এবং দুপুর ২টায় চা-শ্রমিকরা অবোরোধ প্রত্যাহার করে নেয়।