শ্বশুরের দাবী ৬কোটি টাকার বিনিময়ে নজরুলকে হত্যা!

    0
    200

    আমারসিলেট24ডটকম,০৬মেঃ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামকে হত্যায় র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে চুক্তিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন চাঁদপুরের একজন প্রভাবশালী সংসদ সদস্যের ছেলে। এই দাবি করেছেন নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম।

    সম্প্রতি সংঘটিত আলোচিত অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মূল অভিযুক্ত নারায়ণগঞ্জের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনের পক্ষে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যের ছেলে এই চুক্তি করেন।

    শহীদুল জানান, ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে নজরুলকে হত্যা করার এই পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানতে পেরেছেন এমন একজনের কাছ থেকে যিনি উভয় দিকে এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। ২৭ এপ্রিল নজরুল এবং তার চার অনুসারীকে অপহরণ ও হত্যার প্রায় এক সপ্তাহ আগে হত্যাকারীদের কাছে টাকা পৌঁছে দেয়া হয়।

    তিনি আরো জানান, অপহরণের ঘটনার পরে এই লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করেন নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।

    সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকেও নারায়ণগঞ্জ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

    অবশ্য শহীদুলের এই দাবি কতটা সত্য তা যাচাই করা যায়নি বলে ওই সংসদ সদস্য ও তার ছেলের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।

    শহীদুলকে নূর হোসেনের সহযোগী ওই ‘এজেন্ট’ জানিয়েছিলেন যে, অপহরণের এক সপ্তাহ আগেই এক গোপন বৈঠকে ওই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।

    শহীদুলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ওই ‘ডাবল এজেন্ট’ দাবি করেন, গোপন ওই বৈঠকটিতে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। অপহরণের ঘটনার চারদিন আগে তিনি হত্যাকাণ্ডের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে শহীদুলকে জানান এবং নজরুলকে কোনো গোপন আস্তানায় পাঠিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন।

    শহীদুল বলেন, “এমনিতেই নজরুল প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছিলেন। তাই প্রায় দুই মাস আগে থেকেই নজরুল নিজের এলাকার বাইরে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। তাই আমাকে সতর্ক করে দেয়ার পরেও বিষয়টিকে আমি খুব একটা আমলে নিইনি।”

    তিনি জানান, র‌্যাবের সঙ্গে হত্যা সংক্রান্ত এই চুক্তি যিনি করেছিলেন তিনি ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্য তো বটেই, এমনকি সরকারের মন্ত্রিসভাতেও তিনি আছেন।

    ওই এজেন্টের দেয়া তথ্য অনুযায়ী- নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই হত্যা মামলার প্রধান তিন আসামি নূর হোসেন, হাজী ইয়াসিন এবং হাসমত আলীই ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত করেছিলেন।

    হাসমত হলেন শহীদুলেরই ছোট ভাই যিনি পারিবারিক বিরোধের জের ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে নূর হোসেনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন।

    নূর হোসেন ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র‌্যাব সদস্যরা নজরুলকে হত্যা করেছেন বলে এই চমকপ্রদ তথ্য প্রথমবারের মতো গত রোববার সামনে আনেন শহীদুল।

    র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক হাবিবুর রহমান এই প্রসঙ্গে জানান, কোনো অসুস্থ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই অপরাধীদের সঙ্গে র‌্যাবের নাম জড়ানো হচ্ছে।

    রোববার রাতে তিনি বলেন, “তদন্ত চলছে। তদন্তের পরেই প্রমাণ হয়ে যাবে যেকোনো ঘটনার জন্য দায়ী কারা।”

    শহীদুল জানান, নারায়ণগঞ্জের রিং রোডে অবস্থিত শিবু মার্কেটের কাছে এই অপহরণের ঘটনা ঘটতে দেখেছেন অনেকেই।

    সেদিন নজরুল এবং তার চার সহযোগী তাজুল, লিটন, স্বপন ও জাহাঙ্গীর এবং এছাড়াও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইবরাহীমকে পৃথকভাবে কিন্তু প্রায় একই সময়ে অপহরণ করা হয়। আদালত চত্বর থেকে দুটি গাড়িতে করে তারা বেরিয়ে আসার পরপরই অপহৃত হন।

    অপহরণের তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে ছয়টি এবং পরের দিন আরো একটি মৃতদেহ ভেসে ওঠে। পুলিশের সন্দেহ, এই হত্যার ঘটনার পেছনে একই দলের হাত রয়েছে। আর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করে বলেন, এই অপহরণ ও হত্যার ঘটনার জন্য নূর হোসেনই দায়ী।

    শহীদুল জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে অপহরণের ঘটনা জানার প্রায় পরপরই আদমজীতে অবস্থিত র‌্যাব- ১১’র হেডকোয়ার্টারে তিনি গেলেও সেখানকার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডিং অফিসার তাকে সেখানে প্রায় ছয় ঘণ্টা বসিয়ে রেখে বিষয়টি নিয়ে ক্রমাগত ঠাট্টা-তামাশা করছিলেন।

    এরপর ওই কমান্ডিং অফিসারসহ  র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার জন্য শহীদুল ও তার মেয়ে সেলিনা ফতুল্লা থানায় গেলে পুলিশও মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

    পরের দিন নূর হোসেন, হাজী ইয়াসিন মিয়া, হাসমত আলী, আমিনুল ইসলাম, আনোয়ার ও ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন সেলিনা। মামলার অভিযোগে সেলিনা জানান, প্রায় দুই মাস আগে মিজমিজি এলাকায় একটি সড়ক নির্মাণের কাজ নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার স্বামী নজরুলকে অপহরণ করেছেন নূর হোসেন।

    স্থানীয়রা জানান, নজরুল ও নূর হোসেনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীপূর্ণ এই সম্পর্কের সূত্রপাত হয় ২০০০ সালে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের জন্য উপজেলা নির্বাচনেও লড়াই করেছিলেন এই দুই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে বেশ কয়েকবার তাদের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সূত্রঃ নতুন বার্তা,ডেইলি স্টার।