শোকও গৌরবের চেতনায় ফ্রান্স প্রবাসীদের একুশ উদযাপন

    0
    227

    আমারসিলেট24ডটকম,২৫ফেব্রুয়ারী,আবুতাহেরঃমা” ওরা বলে তোমাকে নাকি মা বলে ডাকতে দিবেনা| মা ওরা কি জানে না আমরা যখন জাগ্রত হই তখন হায়েনার চেয়েও হিংস্র হই| নিজের মায়ের ভাষাকে আত্মহতি দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরাধীন হয়ে বেচে থাকার জন্য ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যতঃ পূর্ব পাকিস্তান অংশের বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক  এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সম-মর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দ্রুত দানা বেধে ওঠে।

    আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে সমাবেশ-মিছিল ইত্যাদি বে-আইনী ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি (৮ ফাল্গুন ১৩৫৮) এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে শাহাদাত বরণ করে রফিক সালাম,বরকত,জব্বারসহ বাংলা মায়ের অকুতোভয় সন্তানেরা যাদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হলো দেশের মাটি। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষাবধি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং ১৯৫৬ সালে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করে।

    ২০০০ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন, মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে যা বৈশ্বিক পর্যায়ে গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপন করা হয়| প্রতিবছরের ন্যায় এবারও একুশে উদযাপন পরিষদ ফ্রান্সের উদ্যোগে ফ্রান্সে বসবাসরত সকল রাজনৈতিক,অরাজনৈতিক ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠন গুলো জেগে উঠেছিল একুশের চেতনায় । এতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও জাতীয়তাবাদী দল বি,এন,পি একই সাথে উপস্থিত হয়  আইফেল টাওয়ার সংলগ্ন অস্হায়ী শহীদ মিনারে। হাজারও কর্ম ব্যস্ততার মাঝেও শত শত বাংলাদেশী এসেছিল শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর জন্য |

    প্রথমে শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন ফ্রান্সে নি্যুক্ত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদুত শহীদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুতাবাস,একুশে উদযাপন পরিষদ ফ্রান্স,র আহবায়ক টি এম রেজার নেতৃত্বে একুশে উদযাপন পরিষদ।তাঁরা কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি সম্মান জানান। এ সময় বেজে ওঠে অমর একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’। এরপর ফ্রান্স আওয়ামীলীগ,ফ্রান্স বি,এন,পি,বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফ্রান্স,প্যারিসের সাংবাদিকবৃন্দ,বঙ্গবন্ধু পরিষদ,বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন,আয়েবা,পুজা উদযাপন পরিষদ,সিলেট বিভাগ সমাজ কল্যান সমিতি,গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল,সুন্দরবন পরিষদ,চট্টগ্রাম পরিষদ,চাদপুর জেলা সমাজ কল্যান সমিতি,ফেনী জেলা সমিতি,বিয়ানীবাজার উপজেলা  সমাজ কল্যান সমিতি,বিয়ানীবাজার জনকল্যান ট্রাস্ট,ফেন্চুগন্জ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন,জকিগন্জ ঐক্য পরিষদ,বিকশিত নারী সংঘ,ছাতক দোয়ারা উন্নয়ন পরিষদ,আনন্দ,স্বরলিপি,উদীচী,গনজাগরন মঞ্চ,মাটির সুর,পাক্ষিক প্যারিস থেকে,প্রবাসে বাংলা,প্যারিস বাঙ্গালী,বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ , আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান, বাংলার আলো,বাউল টিভি,বনানী গ্রুপ,পুষ্পস্তবক অর্পণ করে।
    বাংলাদেশ রাষ্ট্রদুত শহীদুল ইসলাম উপস্হিত সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের ও একুশে উদযাপন পরিষদকে  ধন্যবাদ জানান।একুশে উদযাপন পরিষদের আহবায়ক টি এম রেজা সাবেক আহবায়ক মরহুম শহীদুল আলম মানিকের স্মৃতীচারন করেন।