শেখ হাসিনা আবারও তার অপরাজেয় সাহসের পরিচয় দিলেন

    0
    217

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৭নভেম্বরঃ “জামায়াতে ইসলামীর জেনারেল সেক্রেটারি আলি আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও তার অপরাজেয় সাহসের পরিচয় দিলেন।”

    আজ ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা তাদের সম্পাদকীয়তে এই মন্তব্য করেছে।

    আনন্দবাজার পত্রিকা এখনো তাদের সম্পাদকীয় সাধু ভাষায় লিখে থাকে। নতুন বার্তার পাঠকদের জন্য সম্পাদকীয়টি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো। বানানানীতি আনন্দবাজার পত্রিকার।নতুনবার্তা

    “গ ত সপ্তাহ বাংলাদেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়া পার হইল। সন্ত্রাসের কাছে হার মানিব না বলা যত সহজ, দেশের মাটিতে বারংবার সন্ত্রাসের আঘাত সহ্য করিয়াও বিতর্কিত কর্মযজ্ঞ চালাইয়া সন্ত্রাস-সমর্থক বিপক্ষের উষ্মার লক্ষ্য হইতে স্বীকার করা ততখানি সহজ নহে। আওয়ামি লিগ সরকার ক্রমাগত প্রমাণ করিয়া আসিতেছে যে তাহারা কিছুতেই প্রতিশ্রুত কাজ হইতে সরিবে না, যে প্রত্যাঘাতই নামিয়া আসুক না কেন।

    গত সপ্তাহে জামাত-ই-ইসলামির জেনারেল সেক্রেটারি আলি আহসান মহম্মদ মুজাহিদ এবং বিরোধী দল বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরির ফাঁসি কার্যকর করিয়া প্রধামনমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও তাঁহার অপরাজেয় সাহসের পরিচয় দিলেন। পাশাপাশি, সাবধানতার ক্ষেত্রেও এক পা বাড়াইয়া খেলিলেন। সমস্ত রকম সোশ্যাল মিডিয়া সাময়িক ভাবে বন্ধ করিয়া আপৎকালীন সামাজিক নিয়ন্ত্রণ রাখিবার চেষ্টা হইল।

    প্রসঙ্গত, সেই নিয়ন্ত্রণ এখন আবার শিথিল হইয়াছে, বাংলাদেশ দ্রুত নিয়মিত প্রাত্যহিক ছন্দে ফিরিবার চেষ্টা করিতেছে। যে সন্ত্রাসের মূল কথা সমাজকে ভয় দেখাইয়া নিজের পথে চলিতে বাধ্য করা, তাহার সামনে মাথা না নোয়াইবার, ভয় না পাইবার মূলমন্ত্রের কোনও বিকল্প নাই।

    কেবল সরকারি পক্ষ নহে, বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষও এই সহজ কথাটি বুঝিলে মঙ্গল: বিস্ফোরণে, নিধনে, হুমকিতে যাহারা স্বাভাবিক নাগরিক জীবনে ব্যাঘাত ঘটাইতে চাহে, ভয় না পাইয়া স্বাভাবিক জীবন চালু রাখাই তাহাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করিবার একমাত্র উপায়।

    আওয়ামি লিগ সরকার আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা-চালিত সরকার: ইহাও স্পষ্টত অতি-সরলীকরণ। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে গৃহশত্রুরা নির্বিচার নাগরিক-নিধনের রূপকার ছিল, তাহাদের বিচারের অঙ্গনে আনিবার প্রতিশ্রুতি এই রাজনৈতিক দলের গোড়াকার অ্যাজেন্ডার মধ্যেই পড়ে।

    প্রশ্নটি পাল্টাইয়া এই ভাবেও করা যায় যে, এত পুরাতন অপরাধের বিচার এত দিন আটকাইয়াই বা ছিল কেন? কোনও পূর্বতন সামরিক সরকার কিংবা গণতান্ত্রিক সরকার এ বিষয়ে অগ্রসর হইতে রাজি হয় নাই কেন? এই যুক্তিও ধোপে খাটে না যে বর্তমান সরকারের এত বিতর্কিত কাজ করিবার বৈধতা নাই, কেননা  পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনের মধ্য দিয়া তাহা গঠিত হয় নাই। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সে বার নির্বাচনে যোগদান করিতে অস্বীকার করে, সচেতন ভাবে।

    এক বার ওয়াক-ওভার দিয়া তাহার পর ‘সরকারের বৈধতা নাই’ বলিয়া রব তোলা অত্যন্ত নিকৃষ্ট রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেল। অবারিত নির্বাচনের মধ্যে যে সরকার গঠিত হইয়াছে, নিজ অ্যাজেন্ডা অনুযায়ী কাজ করিবার তাহার পূর্ণ অধিকার থাকিবার কথা।

    প্রশ্ন বরং অন্যত্র। একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে আসিয়া, বিশ্বময় যেখানে প্রাণদণ্ডের বিরুদ্ধে এমন প্রবল জনমত সুসংগঠিত, সেখানে যে কোনও গণতান্ত্রিক দেশে কি মৃত্যুদণ্ড বিষয়ে আর একটু সংযমী হওয়া উচিত নয়? ভারতের ক্ষেত্রেও কথাটি প্রযোজ্য।

    অপরাধ যত গুরুতরই হউক, বিচারের অর্থ এই নহে যে, অপরাধীকে প্রাণদণ্ডই দিতে হইবে। বাস্তবিক, অবৈধ সন্ত্রাসপন্থী রাজনীতি যে অনাচার ঘটাইতে পারে, শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার সেই একই অনাচারে বিশ্বাস রাখিতে পারে না।

    এই কারণেই রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চ হইতে বাংলাদেশের এই সাম্প্রতিক যুগল ফাঁসির প্রেক্ষিতে সতর্কবাণী ধ্বনিত হইয়াছে। বিচারের বৈধতা রক্ষার জন্যই শাস্তির বৈধতা বিশেষ ভাবে কাম্য। অধৈর্য, ক্রোধ কিংবা অতিবিক্ষোভ সে ক্ষেত্রে কেবল অবাঞ্ছিত নয়, বিপজ্জনক হইয়া উঠিতে পারে। প্রতিপক্ষের হাতেই যুক্তির অস্ত্র তুলিয়া দিতে পারে। সুতরাং এই প্রশ্নটি সামগ্রিক ভাবেই গুরুত্ব-সহকারে বিবেচ্য। ”সুত্র-আনন্দবাজার