শুরু হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী মহারাসলীলা

    0
    261

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৪নভেম্বর,শাব্বির এলাহীঃ“কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর (শিববাজার) জোড়ামন্ডপ প্রাঙ্গনে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরীরা ১৭৩ তম বার্ষিকী এবং আদমপুর ইউনিয়নের তেতইগাঁও সানাঠাকুর মন্ডপ প্রাঙ্গনে রাসোৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে মনিপুরী মৈ-তৈ সম্প্রদায়ের লোকজন ৩০ তম মহারাস উৎসব উদযাপন করবে। রাস উৎসব উপলক্ষে তিনটি স্থানেই বসবে বিরাট মেলা।

    মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের সভাপতি এ্যাড. চাঁদ মুরারী সিংহ স্বপন ও সাধারণ সম্পাদক নৃপেন্দ্র কুমার সিংহ জানান, কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর জোড়া মন্ডপ প্রাঙ্গনে মণিপুরী মহারাসলীলা সেবা সংঘের উদ্যোগে গৌড়িয় বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী (বিষ্ণুপ্রিয়া) মণিপুরী সম্প্রদায়ের ১৭৩ তম শ্রী শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলানুসরন উৎসব উপলক্ষে কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে ২৫ নভেম্বর বুধবার সকাল ১১টা থেকে গোধূলীলগ্ন পর্যন্ত রাখাল নৃত্য (গোষ্ঠলীলা), সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত গুণীজন সংবর্ধনা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

    এদিকে মহারাস উদযাপন কমিটি ২০১৫ এর আহবায়ক বীরেন্দ্র সিংহ ও সদস্য সচিব রানাবাবু সিংহ জানান, আদমপুর তেতইগাঁও উন্মুক্ত মঞ্চে মীতৈ মণিপুরী সম্প্রদায়ের রাস উৎসবে কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বুধবার সকাল ১০ টায় রাখাল নৃত্য, সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় আলোচনা সভা, সন্ধ্যা ৭টায় মণিপুর ভারত ও বাংলাদেশের স্থানীয় শিল্পীবৃন্দ মণিপুরী গানের দল “মৈরিক” এর অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত ১১টায় নিপাপালা, রাত সাড়ে ১১টায় মহারাসলীলা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ আলহাজ্ব শাহাব উদ্দিন এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল মতিন, জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সফিকুল ইসলাম, আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ ভুঁইয়া।

    অপরদিকে কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর তেতইগাঁওস্থ শ্রীমধুমঙ্গল শর্ম্মার মন্ডপে মীতৈ মণিপুরীদের আয়োজনে এবার প্রথমবারের মত রাসোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। মহারাস উৎসব উদযাপন কমিটি ২০১৫ এর আহবায়ক চন্দ্রকীর্তি সিংহ ও সদস্য সচিব ব্রজগোপাল সিংহ জানান, তেতইগাঁও মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনের উন্মুক্ত মঞ্চে ২৫ নভেম্বর বুধবার সকাল ১১টায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রাখাল নৃত্য, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আলোচনা সভা, রাত ৭টায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, এছাড়া তেতইগাঁওস্থ শ্রীমধুমঙ্গল শর্ম্মার মন্ডপ প্রাঙ্গনে রাত ১০টায় নটকীর্ত্তন অধিবাস, রাত ১১টায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা।

    মণিপুরী সম্প্রদায়ের অপেক্ষাকৃত সংখ্যালঘু মীতৈ ও বিষ্ণুপিয়া মণিপুরীদের আয়োজনে কমলগঞ্জের আদমপুর ও মাধবপুরের রাসোৎসবের জন্যে তৈরী মন্ডপগুলো ঐ একটি রাত্রির জন্যে হয়ে উঠে হাজারো মানুষের মিলন কেন্দ্র। সাদা কাগজের নকশায় সজ্জিত মন্ডপগুলোতে দূর-দূরান্ত থেকে আগত শিশু নৃত্য শিল্পীদের সুনিপুণ অভিনয় যেন মন্ত্র মুগ্ধ করে রাখে দর্শনার্থীদের। রাসোৎসবের দিন যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই রাসোৎসবের আকর্ষণ বাড়ছে, সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উৎসবে দর্শনার্থীর সমাগম।

    তুমুল হৈচৈ, আনন্দ উৎসাহ ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মের অবতার পুরুষ শ্রী কৃষ্ণ ও তার সখি রাধার লীলাকে ঘিরে এই একটি দিন বছরের আর সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে কমলগঞ্জবাসীর জন জীবনে।

    ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ১৭৭৯ সালে মনিপুরের মহারাজা ভাগ্যচন্দ্রস্বপ্নদৃষ্ট হয়ে যে নৃত্যগীতের প্রর্বতন করেছিলেন তাহাই রাসোৎসব। ভাগ্যচন্দ্রের পরবর্তী রাজাগনের বেশরিভাগই ছিলেন নৃত্যগীতে পারদর্শী এবং তারা নিজেরাও রাসনৃত্যে অংশগ্রহন করতেন। এর ফলে মণিপুরী সম্প্রদায়ের মধ্যে এ কৃষ্টির ধারাবাহিকতায় কোন ছেদ পড়েনি। অতীতের সেই ধারাবাহিকতার সূত্র ধরেই কোন রুপ বিকৃতি ছাড়াই কমলগঞ্জে উদযাপিত হয়ে আসছে মনিপুরী সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী কৃষ্ণের মহা রাসলীলা।

    তুমুল হৈ-চৈ, আনন্দ-উৎসাহ, ঢাক, ঢোল, মৃদঙ্গ, করতাল এবং শঙ্খ ধ্বনির মধ্যদিয়ে রাধা-কৃষ্ণের লীলাকে ঘিরেই আজকের দিনটি বছরের অন্য সব দিন থেকে ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসবে কমলগঞ্জ উপজেলাবাসীর জীবনে।

    রাসলীলায় মনিপুরী নৃত্য শুধু কমলগঞ্জের নয়, গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের তথা সমগ্র বিশ্বের নৃত্য কলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছে। ১৯২৬ সালের সিলেটের মাছিমপুরে মনিপুরী মেয়েদের পরিবেষ্টিত রাস নৃত্য উপভোগ করে মুগ্ধ হয়েছিলেন বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পরে কবিগুরু কমলগঞ্জের নৃত্য শিক্ষক নীলেশ্বর মুখার্জীকে শান্তি নিকেতনে নিয়ে প্রবর্তন করেছিলেন মণিপুরী নৃত্য শিক্ষা। কমলগঞ্জে প্রায় এক মাস আগ থেকেই চলছে রাসোৎসবের প্রস্তুতি।