শুক্রবারে ১৭লাশ উদ্ধার সহ লাশের সংখ্যা দাঁড়ালো-৩০ এ

    0
    227

    আমারসিলেট24ডটকম,১৭মেঃ মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে বৃহস্পতিবার ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে যাওয়া এমভি মিরাজ-৪ দীর্ঘ ৩০ ঘণ্টা পরও উদ্ধার হয়নি। গতকাল (শুক্রবার) লঞ্চ থেকেআরো ১৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে সর্বমোট উদ্ধারকৃত লাশের সংখ্যাদাঁড়ালো ৩০। এদের মধ্যে ২৮ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন- মো: জলিলশিকদার (৫০), সেতারা বেগম (৫৫), টুম্পা (২৬), মাহিম (৪), আরিফ (১২), সুমনা(৮), জলিল মালেক (৫৬), মানিক (১৪), রেদোয়ান (৩), রাশিদা বেগম (৬০), খোরশেদআলী (৭৫), ওসমান গনি ( ৪০), ইসমাইল ফকির (৬৫), কৃষ্ণ কমল দাস (৫০), আ: জলিল(৫৫), তাসলিমা (২৫), রহিমা বেগম (৫৬), লাইজু (৫৫), ঋতু (৮), আ: মান্নানদেওয়ান (৬৫), পূর্ণলক্ষ্মী দাস (৭৮), রোমান (৩২), আ: জলিল (৭০), মিন্টুমিয়া (৪০), মাসুম (৪০), রিমা (৩২), আ: কাদের (৬৫), রাহিমা (৩২)।ভবেরচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও ১ জন মারা যান।
    উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার এমভি মিরাজ-৪ লঞ্চটি ৩ শতাধিক যাত্রী নিয়ে বেলা ১টায়সদরঘাট থেকে সুরেশ্বরের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। পথি মধ্যে ঝড়ের কবলে পড়ে  মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার দৌলতপুরে মেঘনা নদীতে ডুবে যায়। দুর্ঘটনারপরপর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় উদ্ধার কাজ শুরু করে। দীর্ঘ ২৫ ঘন্টা পরবেলা ৫টায় ডুবন্ত লঞ্চটিকে তীরে টেনে আনে। এ সময় উদ্ধারকৃত লাশের অধিকাংশলাশ ভেসে উঠে। ডুবন্ত লঞ্চ থেকে লাশ উদ্ধারে ডুবুরিদের তৎপরতা ভালো ছিল না।এদিকে বিগত ২ দিন যাবৎ স্বজনদের লাশের জন্য অপেক্ষায় থাকা শত শত নানা বয়সীমানুষের আহাজারীতে বাতাস ভারী হয়ে উঠে। উদ্ধার কর্মকানডে গতিশীলতা না থাকায়এক পর্যায়ে স্বজনহারা মানুষগুলো কয়েক দফা লাশের দাবীতে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
    যে তালিকা পাওয়া গেছে তারা হলেন- ১. আঃ কাদির(৫৫), ২. লিপি আক্তার (১৭), সুরেশ্বর ৩. আহসান কবিরাজ (৫৫), দুলাল ৪.আনোয়ার ঢালী (৪৫), ৫. শিরিণ শিলা (২৫), মতলব৬. আলআমিন (৮), সফিপুর৭.মোঃ রতন (২৮), চর ভাঙ্গা শরিয়তপুর৮. মো: মুন্না (৩০), ৯. মিনহাজল (৩৫), চরভাগা১০. কাঞ্চন হাওলাদার (৩৫), নন্দনপাড়১১. কল্পনা আক্তার (১৩), চাকদহ, নড়িয়া১২. নাঈম (১০),  সুরেশ্বর।
    উদ্ধার কার্যক্রম
    জানা যায় উদ্ধারকার্যক্রম ছিল খুবই ধীরগতির। দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টায়ও উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়লঞ্চটি উদ্ধার করতে পারেনি। উদ্ধার কাজ চলার সময় পর পর ২ বার লঞ্চে বাঁধাশিকল ছিড়ে যায়। এ সময় হতভাগ্য স্বজনহারা মানুষেরা স্লোগান দেয় টাকা চাই নালাশ চাই। স্বজনদের অভিযোগ, গতকাল নৌপরিবহনমন্ত্রী ঘটনাস্থলে আসার পর থেকেউদ্ধার কাজ বিলম্ব ঘটে। উদ্ধারকৃত লাশ নিয়ে তাদের বাড়ী যেতে ভোগান্তি হবেবলে তারা জানায়। সংশ্লিষ্টরা জানায়, ডুবে যাওয়া লঞ্চটি ১৫০ টন ওজন অপর দিকেবিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ২৫০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন। অভিজ্ঞউদ্ধারকারীদের মতে, বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী অপর জাহাজ নির্ভীক একই সঙ্গেউদ্ধার কাজে সম্পৃক্ত হলে লঞ্চ উদ্ধার সহজ হতো।
    লাশ সংরক্ষণ ব্যবস্থা
    ভেসেউঠা এবং লঞ্চের খোল থেকে উদ্ধারকরা লাশ  রাখার কোন সুব্যবস্থা না থাকায়স্বজনরা হোগলার চাঁটি চাপা দিয়ে লাশ রৌদ্র থেকে রক্ষার চেষ্টা করে।

    একই পরিবারের ৪ জন নিহত
    নিজ বাড়িতে বেড়াতে যেতেপারলো না নড়িয়া উপজেলার মাসুম ছৈয়াল। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে জীবিত নয় লাশহয়ে বাড়ি ফিরলো মাসুম। নিহত মাসুমের স্ত্রী  রহিমা বেগম (২৫) ও তার প্রিয় ২সন্তান রুমান (৫) ও রেদোয়ান (২) সাথে নিয়ে গ্রামের বাড়ীতে যাবার জন্যসদরঘাট থেকে এমভি মিরাজ-৪ লঞ্চে উঠে। এতেই তাদের জীবন প্রদীপ নিভে যায়।লাশের সন্ধানে আসা মাসুমের ভাই খোকন ছৈয়াল সারাদিন অপেক্ষার পর ভাই-ভাতিজারলাশ পায়। এখনো নিখোঁজ রয়েছে মাসুমের সহযাত্রী খালাতো বোন কল্পনা (১৩)।
    শ্বশুর বাড়ীতে যাওয়া হলো না শিরিন শিলার
    শরিয়তপুরজেলার মতলব গ্রামের মোঃ আলী বিদেশ থাকেন দীর্ঘ ৫ বছর পর প্রবাস জীবন শেষেদেশে ছুটি কাটাতে এসেছেন। ১ মাসের ছুটি শেষে আবার ফিরে যেতে হবে কর্মস্থলে।যাবার আগে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শ্বশুর বাড়ীতে যাবার পরিকল্পনা করে এমভিমিরাজ-৪ লঞ্চে উঠেন। আকাশ পরিষ্কার কোন ভয় নেই। এ আশ্বাসে স্ত্রী শিরিনশিলা (২৫) একমাত্র সন্তান আল আমিন (৮) সান্ত¦না দেন লঞ্চে চড়ে বসেন।পথিমধ্যে ধমকা ঝড়ো হাওয়ায় সাজানো সুখের সংসার তছনছ হয়ে যায়। প্রিয়তমা, স্ত্রী শিরিন শিলার লাশ পেলেও আদরের ধন আল-আমিনের খোঁজ করছেন হতভাগ্যবাবা। শোকের মাতমে বুক ভাসাচ্ছেন প্রবাসী জীবনযাপনকারী মোঃ আলী।
    উদ্ধার কার্যক্রমে তদারকিতে যারা
    নৌপরিবহনমন্ত্রীএম শাহজাহান খান, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট মৃণাল কান্তিদাস, মুন্সীগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক মোঃ মহিউদ্দিন, বিআইডব্লিইটিএরচেয়ারম্যান ড. শামসুজ্জোহা খন্দকার। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুলহাসান বাদল, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন।