শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ গোলাম আযমের দেহরক্ষী ছিল

    0
    349

     আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৫মার্চঃ জামায়াত নেতা গোলাম আযমের দেহরক্ষী ছিল পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ। একসময় সে দেহরক্ষীর কাজ ছেড়ে দিয়ে সেভেন স্টার গ্রুপে যোগ দিয়ে হত্যা, নির্যাতন ও চাঁদাবাজিতে নেমে পড়ে। ২০০১ সালে সরকার তাকেসহ ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণার পর মোল্লা মাসুদ ভারতে পালিয়ে যায়। এর পর থেকে সে সেখানেই অবস্থান করছে। গোয়েন্দা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

    একটি ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তার মা-বাবার দেওয়া নাম ছিল মাসুদ। মাদ্রাসায় পড়াশোনার কারণে সন্ত্রাসী গ্রুপে যোগ দেওয়ার পর তার নামের আগে ‘মোল্লা’ শব্দটি বসিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তখন থেকেই মাসুদ ‘মোল্লা মাসুদ’ হয়ে ওঠে।

    একপর্যায়ে সে শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের শিষ্য বনে যায়। এভাবে কিছুদিনেই সে হয়ে ওঠে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ১৯৯৭ সালের দিকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, তানভিরুল ইসলাম জয়, টোকাই সাগর, টিক্কা, সেলিম, চঞ্চল ও মোল্লা মাসুদ মিলে গড়ে তোলে সেভেন স্টার গ্রুপ। ওই গ্রুপে কাজ করার কারণে মোল্লা মাসুদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সখ্য গড়ে ওঠে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের। সেই সখ্য আজও রয়েছে বলে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান।

    ‘ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্য সুব্রত বাইন বড় অপারেশনে নিজেই যেত। চঞ্চল, মোল্লা মাসুদ ও টিক্কা সামনে থেকে কাজ করলেও কমিশনের সিংহভাগ যেত সুব্রতর কাছে। সফল অভিযানের ক্রেডিট পেত সুব্রত। অন্যদিকে টিক্কার সঙ্গে জয় আলাদাভাবে অপারেশনে যেত। এসব কারণে ২০০০ সালের দিকে এসে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

    ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সুব্রত বাইন একটি রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ হয়ে যাওয়ায় অন্তর্দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করলে সেভেন স্টার গ্রুপ ভেঙে যায়। ওই সময় সন্ত্রাসী আগা শামীমের নেতৃত্বে তৈরি হয় ফাইভ স্টার গ্রুপ। তারা ঢাকা সিটি করপোরেশনের সব ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করত।

    প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যখন গোলাম আযমের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আন্দোলন চরম পর্যায়ে ছিল তখন মোল্লা মাসুদ লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। এর কিছুদিন পর তাকে গোলাম আযমের বডিগার্ড হিসেবে দেখা যায়। কিছুদিন পর আবার লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায় সে। তখন সে টপ টেরর হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

    গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ৯০ দশকে মোল্লা মাসুদ একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করার পর মগবাজারের সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হয়। ওই সময় সে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে জড়ায়। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জিএস পদে নির্বাচনও করে। ওই সময় থেকেই গোলাম আযমের সঙ্গে তার ছিল গভীর সখ্য। সেই সুসম্পর্ক থেকেই গোলাম আযমের বডিগার্ড হয়েছিল সে। মোল্লা মাসুদের ঘনিষ্ঠ সুব্রত বাইন বরিশাল থেকে ঢাকায় আসে।

    সে তার মা-বাবার সঙ্গে মগবাজার এলাকায় বসবাস করত। মা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষিকা। মগবাজারের বিশাল সেন্টারের একটি দোকান নিয়ে অন্তর্কোন্দলের কারণে মুরাদ নামের একজনকে হত্যা করে সুব্রত। এটিই ছিল তার প্রথম খুন। সে শেষ খুন করে সন্ত্রাসী মুরগি মিলনকে।

    সুব্রত বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে প্রথমে ছিল পশ্চিমবঙ্গের তেগেরা এলাকায়। এরপর চলে যায় দমদম, পরে ঠাকুরপুকুর হয়ে কলকাতায়। সে প্রায়ই ঢাকায় আসে। সুব্রত দুই বিয়ে করে। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। ছেলেটি বাকপ্রতিবন্ধী। বর্তমানে দেশের বাইরে সুব্রত ছেলেটিকে নিয়ে বসবাস করছে। বড় মেয়ে মগবাজার এলাকায় সুব্রতর মায়ের সঙ্গে বসবাস করে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।

    প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আওয়ামী লীগ আমলে কারাগারে থাকার সময় একজন আফ্রিকান মুসলিমের সঙ্গে পরিচয় হয় সুব্রতর। তার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে সুব্রত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ফতেহ আলী নাম ধারণ করে। এরপর থেকে সে নামাজ ধরে এবং প্রতি শুক্রবার রোজা রাখে। সব সময় তার হাতে তসবিহ দেখা যায়। এখন সুব্রতর বয়স চলি্লশের বেশি। সে কখনো এক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকে না।

    কলকাতায় তার কমপক্ষে ৮-১০টি থাকার জায়গা আছে। সে এক রাত ক্লিনিকে থাকলে পরের রাতে থাকে রেল স্টেশনে। সে নিয়মিত ঢাকায় তার বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। বাহিনীর সদস্যরা প্রতি মাসে ৫০-৬০ লাখ টাকা পাঠায় তার কাছে। এই টাকা লেনদেন করে সিনিয়র ফটো সাংবাদিক নামধারী একজন প্রতিষ্ঠিত হুন্ডি ব্যবসায়ী। ঢাকায় তার শতাধিক কর্মী রয়েছে। ঢাকায় সুব্রতর বেতনভুক্ত সন্ত্রাসী রয়েছে যাদের বেতন ১০ থেকে ৩০ হাজার

    টাকা পর্যন্ত। কলকাতার স্মাগলার ও হুন্ডি ডিলারদের কারো ঢাকায় বল প্রয়োগের প্রয়োজন হলে তারা সুব্রতর সাহায্য নেয়। সুব্রত ফোন করে সহকর্মীদের করণীয় জানিয়ে দেয়। লোকজন টাকা উদ্ধার করে পাঠিয়ে দেওয়ার পর মোটা অঙ্কের কমিশন পায় সে। একই পন্থায় ঢাকার বিজনেসম্যানদের বকেয়া উদ্ধার করে দেয় সে। সুব্রত ৫০ বিঘা জমি কিনেছে ভারতের নদিয়ায়। সেই জমিতে পুকুর কেটে মাছ চাষও করা হচ্ছে। যেগুলো তত্ত্বাবধান করছিলেন মোল্লা মাসুদ। সংবাদটি ২৩ জুলাই ২০১০ এ প্রকাশিত খবর যা ওয়েবসাইট থেকে নেয়া।