শিলং তীরের ব্যবসায় বিশেষ মহল হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা!

    0
    392

    “ভারতীয় শিলং তীর খেলার জন্ম ভুমি (জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট) নিরাপদ আস্তানা,দোকান খুলেই চলছে শিলং তীরের ব্যবসা”

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৪সেপ্টেম্বর,রেজওয়ান করিম সাব্বিরঃ জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলা ভারতীয় শিলং তীরের জন্মস্থান হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। আর সেই জন্ম স্থানে দোকান ঘর ভাড়া নিয়েই চলছে ভারতীয় তীর খেলা। জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় মরন নেশার খেলা ‘‘এই শিলং তীর খেলা’’। চিহ্নিত মহল হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। শিলং তীর খেলাকে নিয়ে ধবংশের পথে পা বাড়ীয়েছে রিস্কা, পাথর, বালু, ড্রাইভার, শ্রমিক ও প্রশাসনের কিছু সংখ্যাক কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল, কলেজের শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা সহ বেকার যুবকরা। স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নির্ভিকার।

    অনুসন্ধানে জানাযায় ২৫ থেকে ৩০বছর পূর্বে ভারতীয় ধনকুবেরা(মড়য়ারীরা) এ রকম মরন খেলা আবিস্কার করে তাহারা এর নাম রাখে ভারতীয় আ লিক ভাষায় তীর খেলা (শিলং তীর নামে বাংলাদেশ পরিচিত)। স্থানীয় ভাবে খেলাটি কে বলা হয় “টুকা খেলা, নাম্বার খেলা, বোটকা খেলা, ভাগ্য পরীক্ষা খেলা, বর্তমান ডিজিটাল নাম্বর খেলা হিসাবে পরিচিত। খেলার নিয়ম হল ০-হতে ৯৯ পর্যন্ত ১শত টি নাম্বারের মধ্যে ১টি নাম্বার জনতার, বাকী ৯৯টি নম্বার আয়োজক বা মাড়য়ারীর। বিগত ১বৎসর হতে ভারতীয় মাড়োয়ারীরা খেলাটি আরও ব্যাপক ভাবে বিস্তার করতে এবং খেলায় অংশ গ্রহনকারীদের জন্য দ্বিতীয় পুরস্কার হিসাবে সেকেন্ড নামে আরকটি নাম্বার বিজয়ী হিসাবে ঘোষনা করে।

    খেলার নিয়ম হল ১শতটি নম্বার থেকে ১টি নাম্বার লঠারীর মাধ্যমে নির্ধারিত হবে এছাড়া সেকেন্ড নামে আরও ১টি নাম্বার নির্ধারীত করা হবে। যে নাম্বারটির বিপরীতে টাকা বাজী ধরেছেন তিনি প্রতি ১টাকায় বিপরীতে ৭৫টাকা এবং এন্ডিং নাম্বরারের ক্ষেত্রে ১টাকায় বিপরিতে ৮৫টাকা জিতবেন। সম্প্রতি সেকেন্ড নাম্বারের ১টাকার বিপরিতে ৩৫টাকা জিতবেন। তীর খেলার শেষ সময় প্রতিদিন বিকাল ৪টায়, সপ্তাহে ৬দিন খেলাটি পরিচালিত হয়। ফলাফল ঘোষনা করা হয় প্রতিদিন বিকাল ৫টায়। খেলাটি ভারত সরকারের রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন সহ সপ্তাহে প্রতি রবিবার ছাড়া বাকী সকল দিবসে খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

    জৈন্তা-গোয়াইনঘাটে যে ভাবে খেলাটি প্রবেশ করে। প্রথমত তামাবিল স্থল বন্দর থাকায় এ অ লের বিভিন্ন পর্যায়ের লোক জন ভারতে যাতায়াত করত। তমাবিল এলাকাটি শিলং এর পার্শ্ববতী হওয়ার সুবাধে গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের কিছু লোক প্রথম দিকে ভারতের লোকেদের নিকট টাকা দিয়ে নাম্বার কিনে এবং বিজয়ী হতে শুরু করে। একে একে বেশ কিছু সংখ্যাক লোক খেলাটির প্রতি ঝুকে পড়ে। একপর্যায় ২০০০ সনের দিকে স্থানীয় বিশ্বস্তদের মধ্যে ভারতীয়রা গোপনে কাউন্টার খুলে দেয়। এভাবেই তামাবিল স্থল বন্দর দিয়ে তীর খেলাটি পরিচিতি লাভ করে। একপর্যায় খেলাটি তামাবিল স্থল বন্দরের গন্ডি পেরিয়ে জাফলং বল্লাঘাট, মামার দোকান, নলজুরী, আদর্শগ্রাম, মোকামপুঞ্জি, আলূ বাগান, ৪নং বাংলা বাজার, জৈন্তাপুর, প্রবেশ করে।

    এক পর্যায়ে ২উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় এজন্টের মাধ্যমে সর্বত্র খেলাটি ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন সময় উপজেলাবাসী প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করে খেলাটি বন্দের জন্য। পুলিশ প্রশাসনের অপেন হাউজ সহ উপজেলা প্রশাসনের আইন শৃঙ্খলা বৈঠকে খেলাটি বন্দের জন্য জোরালো ভাবে তুলে ধরা হয়। পরবর্তিতে প্রশাসন কিছুটা ভূমিকা নিলেও খেলাটি কোন প্রকার জোয়ার অন্তভূক্ত না থাকায় তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে না পারায় অনেকটা দূর্বল হয়ে পড়ে এই সুযোগে তারা মাথা উচুঁ করে দাঁড়ায়। এভাবে ২টি উপজেলা গন্ডি পেরিয়ে খেলাটি সিলেট শহরে পৌছায় এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আর খেলার জন্য বাংলাদেশের শিলং তীরের জন্মভুমি হিসাবে জৈন্তা-গোয়াইনঘাট পরিচিতি লাভ করে।

    জৈন্তা-গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা যায়- প্রতিদিন রিস্কা, পাথর, বালু, ড্রাইভার শ্রমিক ও প্রশাসনের কিছু সংখ্যাক কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল, কলেজের শিক্ষক, এমন কি ব্যাংক কর্মকর্তা, যুবক, বৃদ্ধা ও মহিলাসহ হাজার হাজার লোক খেলায় অংশ গ্রহন করে।

    প্রতিদিন গড়ে জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় প্রায় ৫কোটি টাকার উর্দ্বে তীর খেলা হয়ে থাকে। বিপরীতে পেমেন্ট দেওয়া হয় প্রায় ২০০-৩০০টাকার যাহার পেমেন্ট মূল্য দাঁড়ায় (১৫,০০০-২২,৫০০) টাকা। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জৈন্তাপুর উপজেলার প্রশাসনের সম্মুখ সহ, উপজেলার রেষ্টেুরেন্ট, চা-দোকান, মা-মার্কেট, জৈন্তাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, জাফলংগামী যাত্রীছাউনী, উপজেলার বিদ্যুৎ অফিস (যেখানে তীর খেলার ২টি দোকান গড়ে উঠেছে), যশপুর, কমলাবাড়ী, মাহুতহাটি ১টি বাড়ীতে, উত্তর মাহুতহাটি পয়েন্টে, ৪নং বাংলাবাজার, শ্রীপুর, চাঙ্গীল, আসামপাড়া, গুচ্চগ্রাম, সারীঘাট, দরবস্তের কতুব আলী মার্কেট, দরবস্তের জুলফিকর আলী লেফ মার্কেট, দরবস্তের পূবালী ব্যাংক নিচতলা, দরবস্তের ত্রিমুখী পয়েন্ট, পূর্ব বাজার, চতুল বাজার অপরদিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা নলজুরী, তামাবিল, মামার দোকান, বল্লাঘাট, জাফলং বাজার, রাধানগর, সংগ্রাম পুঞ্জিসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাসমান অবস্থায় এই খেলার নম্বার টোকেন বিক্রয় হয়।

    জৈন্তাপুর উপজেলা উল্লেখযোগ্য স্থান হচ্ছে- মা-মার্কেট, জৈন্তাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, জাফলংগামী যাত্রীছাউনী, মাস্তিংহাটি, মাহুতহাটি, জৈন্তাপুর থানার সম্মুখ, দরবস্তের কতুব আলী মার্কেট, দরবস্তের জুলফিকর আলী লেফ মার্কেট। গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল, মামার দোকান, জাফলং বাজার ও বল্লাঘাট এলাকা। জৈন্তাপুর এলাকায় খেলাটি পরিচালনা করছেন মাস্তিংহাটি গ্রামের রাসেল, হাশিম, জামাল, সোহেল, বিলাল, জুয়েল, মাহুতহাটি গ্রামের কয়েছ, রুমিন, মনির, আব্দুল মালিক, রেনু মিয়া, লায়েছ, রিপন, ফুলবাড়ী গ্রামের হানিফ, হোসেন, শাহ আলম। এদের সকলের মধ্যে গ্যাং লিডার হিসাবে তীর খেলাটি পরিচালনা করছেন দরবস্ত এলাকার জুলফিকর আলী উরফে লেফ মিয়া প্রমুখ। তিনি লেফ তোষক ব্যবসার আড়ালে অত্র উপজেলায় এই খেলাটি পরিচালনা করে আসছেন। অত্র উপজেলা তার মালিকানাধীন ৫০টি নাম্বার বই বিক্রয় হয়ে আসছে।

    জৈন্তা-গোয়াইনঘাট এলাকাবাসীর দাবী ভারতীয় “তীর খেলা” লঠারির বিক্রেতাদের নিকট থেকে আইন প্রয়োগকারী দলের সদস্য, স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের উৎকোচের বিনিময়ে এলাকার প্রকাশ্যে তীর খেলার দোকান স্থাপন ও টোকেন বিক্রয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন। অপরদিকে মরন খেলার হাত থেকে যুব সমাজকে বাঁচাতে জৈন্তাপুর উপজেলা সদরের বেশ কয়েকটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন, কিছু সংখ্যক সরকার ও বিরুদী দলীয় নেতাকর্মীরা খেলাটি বন্দ করার জন্য প্রতিহত করার ঘোষনা দেয়, পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাহায্য কামনা করে।