লিবিয়ায় অপহৃত ২বাংলাদেশি উদ্ধারঃপ্রবাসীরা সাবধান

    0
    242

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,মার্চঃ লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির উপশহর মিশকাতা থেকে অপহৃত দুই বাংলাদেশি শ্রমিককে উদ্ধার করেছে স্থানীয় পুলিশ।

    গত ২৫ মার্চ শুক্রবার গভীর রাতে মিশরাতা উপশহরের একটি বাজারের পাশ থেকে বাংলাদেশি শ্রমিক আসাদুজ্জামান রাসেল ও রিপনকে ধরে নিয়ে যায় স্থানীয় সন্ত্রাসীরা। আসাদের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার পড়গাঁও গ্রামে। রিপনের বাড়ি মুন্সীগঞ্জে।

    উদ্ধার হওয়ার পর সোমবার রাতে আসাদ টেলিফোনে তার বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন। আসাদ তার বাবা আব্বাস আলীকে জানান, গৃহযুদ্ধের অস্থিতিশীলতায় স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী বহিরাগত শ্রমিকদের প্রায়শই অপহরণ করে এবং কিছু অর্থকড়ি আদায় করে ছেড়ে দেয়। কিছুদিন আগে আরও ৩ বাংলাদেশি, ২ ভারতীয় এবং ৫ শ্রীলঙ্কান শ্রমিককে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে। পরে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে স্থানীয় দুই হাজার মুদ্রা করে নিয়ে ছেড়ে দেয়। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করলে মারধর ও নির্যাতন করা হয়।

    রিপন টেলিফোন আলাপে জানান, তাদের দু’জন ছাড়াও ভারত ও শ্রীলঙ্কার আরও ক’জন মিলিয়ে মোট সাত জনকে অপহরণ করে মিশরাতা উপশহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে একটি ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয়। অপহরণ হওয়ার পর বিষয়টি তাদের রুমমেট শাহীন, তবারুলসহ কর্মপ্রতিষ্ঠান আল-মদিনা লিমিটেড স্থানীয় পুলিশকে জানায়।

    রিপন আরও জানান, অপহরণের পর তাদের কাছ থেকে সন্ত্রাসীরা ১০ হাজার লিবীয় মুদ্রা মুক্তিপণ দাবি করে। পরের দিন পুলিশের তৎপরতার কারণে কারও সঙ্গে তাদের ফোনে যোগাযোগ করতে দেয়া হয়নি। সোমবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টার দিকে পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের দু’জনসহ সাত জনকে উদ্ধার করে মিশরাতার ক্যারাং থানায় নিয়ে যায়। তবে, অভিযান টের পেয়ে অপহৃতদের ঘরে বন্দি রেখেই তালা মেরে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে খবর পেয়ে ক্যারায় থানায় গিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসে আল-মদিনা কর্তৃপক্ষ।

    এদিকে, লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের রাস্তাঘাটে চলাচল সীমিত করা এবং রাতে বাইরে বের না হওয়াসহ সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছে ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে লিবিয়ার বেনগাজিতে তিনজন বাংলাদেশী নিহত হওয়ার পর এ সতর্কতা জারি করা হয়। প্রথমে যদিও বাংলাদেশিরা লিবিয়ায় দু’পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে নিহত হয়েছেন বলা হলেও জারি করা সতর্কবার্তায় বোঝা যাচ্ছে অসাবধানতা তাদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

    লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের ফেসবুক পেইজে দেয়া এই সতর্কবার্তায় বেনগাজিতে নিহত বাংলাদেশীদের পরিচয়ও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২৫ মার্চ বেনগাজি শহরের গোয়ারশা এলাকায় চারজন বিদেশি নাগরিক গুলিতে নিহত হন। তাদের মধ্য থেকে তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়া বাংলাদেশিরা হলেন- ১. আবদুর রহিম, বাবা মোসলেম বেপারি মনি, জেলা রাজবাড়ী, ২. হুমায়ুন কবির, বাবা মো. সামছুল হক, জেলা পঞ্চগড়, ৩. মোহাম্মদ হাসান, জেলা যশোর।

    বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, তারা রাত্রিকালে গোয়ারশা এলাকা থেকে অন্যত্র নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সময় একটি মিলিটারি ক্যাম্প অতিক্রমকালে মিলিটারির সদস্যরা তাদের সন্দেহ করে থামতে বলেন। ওই সময় তারা নির্দেশ অমান্য করে পরিচয় প্রদর্শনের পরিবর্তে ভয় পেয়ে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে মিলিটারির সদস্যরা তাদের প্রতিপক্ষের সহযোগী মনে করে গুলি চালায় এবং বর্ণিত চারজন কর্মী ঘটনাস্থলে নিহত হন।

    বাংলাদেশ দূতাবাসের সতর্কবার্তায় বলা হয়, এ প্রেক্ষাপটে রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় কোনো চেকপয়েন্ট বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কোথাও থামতে বললে নিজের পরিচয়, পাসপোর্ট, মেডিকেল ফিটনেস কার্ড ও নিয়োগ কর্তার দেয়া পরিচয়পত্র (বিতাকা) প্রদর্শন করা এবং কোনো অবস্থাতেই ভয় পেয়ে পালানোর চেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হল। নিজ নিজ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের স্বার্থে এবং যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে লিবিয়ায় অবস্থিত সব প্রবাসী বাংলাদেশিকে রাস্তাঘাটে চলাফেরা সীমিত করে এবং রাতে বাইরে বের না হয়ে যথাসম্ভব সাবধানতা অবলম্বন ও সতর্কভাবে চলাফেরার জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়ূত্সুরত্রঃআইআরআইবি