লাশ উদ্ধার ৩৯৫ হস্তান্তর ৩৪৮ জীবিত উদ্ধার ২৫১০ নিখোঁজ ৮৭০

    0
    419

    সাভার, ২৮ এপ্রিল : সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডিতে গত বুধবার থেকে আজ রবিবার পর্যন্ত ধংসস্তুপের নিচ থেকে মোট ৩৯৫টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে আজ রবিবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ৩৪৮টি মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বেশ কিছু মৃতদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ট হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। এছাড়া আজ রবিবার সকাল পর্যন্ত দুই হাজার ৫১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। পক্ষান্তরে এখন পর্যন্ত ৮৭০ জন নিখোঁজ রয়েছে। উদ্ধার কর্মীরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৪৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে । এছাড়াও আরও অনেকে এখনও ধংসস্তুপের নিচে আটকা পড়ে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

    লাশ উদ্ধার ৩৯৫ হস্তান্তর ৩৪৮ জীবিত উদ্ধার ২৫১০ নিখোঁজ ৮৭০
    লাশ উদ্ধার ৩৯৫ হস্তান্তর ৩৪৮ জীবিত উদ্ধার ২৫১০ নিখোঁজ ৮৭০

    উদ্ধারকর্মীরা জানান, এখনও বেশ কিছু মানুষ জীবিত আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাকিদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। ফায়ার ব্রিগেড ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক মো. জাহিদুল ইসলাম উদ্ধারকাজ তদারকের জন্য ধ্বংসস্তুপের পাশেই একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। সাভার অধরচন্দ্র বিদ্যালয় মাঠে স্বজনদের কাছে চলছে লাশ হস্তান্তর। বহু মানুষ বুধবার থেকে সেখানে ভিড় করে আছেন প্রিয়জনের লাশের অপেক্ষায়। স্কুল মাঠের এক কোণে আম গাছের নিচে ব্ল্যাকবোর্ডে তুলে ধরা হচ্ছে লাশের সংখ্যা।
    আজ রবিবারও অধরচন্দ্র বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, আপনজনের মরদেহ নিতে অপেক্ষায় আছেন উৎকণ্ঠিত স্বজনরা। পরিচয় শনাক্ত করার পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে। আর জীবিত উদ্ধারকৃতদের মধ্যে বেশিরভাগকে আহত অবস্থায় চিকিসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ রবিবার সকাল সাতটায় উদ্ধার অভিযানে দায়িত্বরত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সিদ্দিকুল আলম শিকদার সাভারে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, জীবিতদের উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন অবশিষ্ট থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চলবে। তিনি বলেন, আমরা এখন ২টি স্পটে জীবিত লোক আছে বলে প্রমাণ পেয়েছি। সে দুটিতে এখন উদ্ধার তৎপরতা চলছে। এ উদ্ধার তৎপরতা ৮টার দিকে শেষ হবে আশা করছি। এরপর দেখব আর জীবিত আছে কি-না। না থাকলে পরবর্তী সিদ্ধান্তে যাব। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তুপের মধ্যে আটকে পড়া শ্রমিকদের জীবিত উদ্ধারে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারী দল। ওপর থেকে খোঁড়া সুড়ঙ্গ পথগুলো দিয়ে ভেতরে ঢুকে চলে ব্যাপক তল্লাশি।উদ্ধার কর্মীরা জানান, রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপের ভেতরে এখনো শুধু লাশ আর লাশ। আটকা পড়ে আছেন অসংখ্য মানুষ। তাদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধীনে প্রকৌশল বিভাগ, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রস উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। সহযোগিতা করছে আনসার, র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনও।
    এদিকে সাভারে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপে এখনো যারা জীবিত আছেন তাদের উদ্ধারে এবার ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার শুরু করছেন উদ্ধারকর্মীরা। আজ রবিবার বেলা পৌনে ১১টায় ধসে পরা ভবনের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে ভোরেই রানা প্লাজার ধ্বংস্তূপের আশপাশ থেকে উদ্ধারকর্মী ছাড়া সবাইকে সরিয়ে দেয়া হয়। হাইড্রলিক ক্রেন ডোজার ও লোডারের মতো ভারী সরঞ্জাম নিয়ে আসা হয় ভবনের সামনের অংশে। ব্রিফিংয়ের আগে উদ্ধাকর্মীদেরও সরিয়ে নেয়া হয়। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, উদ্ধারকাজে অংশ নেয়া বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের বৈঠকে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। 
    গত বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামে বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে। আহতদের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ আশপাশের অন্য হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, সিএমএইচ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোহেল রানার মালিকানাধীন এই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও পোশাকের দোকান ছিল। ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে ওপর পর্যন্ত কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানা ছিল। এগুলো হলো-নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, নিউ ওয়েভ স্টাইল, নিউ  ওয়েভ অ্যাপারেলস, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ইথার টেক্সটাইল লিমিটেড। ছয়তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি নিয়ে নয় তলা ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
    এদিকে গতকাল শনিবার ভবন ধসে হতাহতের ঘটনায় করা দুই মামলায় দুই কারখানা মালিক এবং সাভার পৌরসভার দুই প্রকৌশলীকে গ্রেপ্তার করে তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তবে ভবন মালিক সোহেল রানাকে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।