লাউয়াছড়া,মাধবকুন্ড,হামহাম জলপ্রভাতসহ শ্রীমঙ্গল পর্যটন শূন্য

    0
    346

    এ ব্যবসায় কোটি টাকার ক্ষতি পোষাতে হলে আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে ?

    জহিরুল ইসলাম,নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ,শ্রীমঙ্গল,জুড়ি মাদবকুন্ডসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের ঢল নামলেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনায় পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে এবার ঈদে পর্যটক শূণ্য রয়েছে জেলার শতাধিক বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান গুলো ।

    ঈদ কিংবা যে কোন বড় ছুটিতে পর্যটক নগরী চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গলে পর্যটকদের উপচে পড়া ভীড় থাকতো। দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পর্যটকের পদচারনায় এখানকার চা বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে মুখরিত হয়ে উঠতো।

    ঈদের দিন ও পরের কয়েকদিন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে কয়েক হাজার পর্যটকের আগমনে ঐ অঞ্চলে লোকে লোকারণ্য থাকতো । কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এ বছর পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ  বন্ধ ঘোষণা করায় এবার ঈদুল ফিতরে ছুটির দিনেও পর্যটক শূণ্য রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ আশপাশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো।

    চায়ের দেশ সবুজের রাজ্য নামে পৃথিবী জুড়ে শ্রীমঙ্গলে সুবিশাল পরিচিত রয়েছে।ধর্মীয় উৎসব গুলোতে এ শহরে সারা বছর ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগুনা থাকে বেশি।আজ সোমবার (২৫ মে) বিকালে ঘুরে দেখা যায় করোনা ভাইরাসের কারনে এবার দেশ জুড়ে দর্শনীয় স্থান গুলো পর্যটক শূন্য।তবে শ্রীমঙ্গলে ফিনলে চা বাগানের রাস্তার পাশে অনেক কে ঘুরতে দেখা যায় এরা স্থানীয় কিছু মানুষ। কেউবা রাস্তার পাশে গাড়ি দাড় করিয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায়।

    এদিকে শ্রীমঙ্গলের সব হোটেল রিসোর্টই ঈদ উপলক্ষে ৮০ শতাংশের উপরেই পর্যটক থাকে।এ বছর করোনা পরিস্থিতির কারনে আমাদের সব হোটেল রিসোর্ট বন্ধ রয়েছে। পর্যটকরাও নেই।এই সময়ের রুম ভাড়া দিয়ে আমরা বাকি সময়টুকু পুশিয়ে নিতে পারি। কিন্তু করোনার কারনে হোটেল রিসোর্ট বন্ধ থাকায় আমাদের হোটেল রিসোর্ট মালিকরা অনেক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছি। সরকার যদি আমাদের জন্য প্রনোদনার ব্যবস্থা করে তাহলে আমাদের  ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

    ঈদের দিন লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, টিকেট কাউন্টারসহ প্রবেশ ফটকে তালা ঝুলছে। ভিতরে বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায় পর্যটক শূণ্য উদ্যান যেন হাহাকার করছে তবে বানর, লজ্জাবতী বানর, চশমাপরা বানর আপন মনে গাছে গাছে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। পুরো লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখরিত ছিল।

    বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের কারণে সরকারি নির্দেশনায় গত ২ মাস ধরে এ উদ্যানে পর্যটকদের প্রবেশাধীকার বন্ধ রয়েছে।

    নীলকন্ঠ চা কেবিনের পরিচালক রাজিব রামগৌড় বলেন, গত ২০ বছরে আমরা ঈদের দিন দোকান বন্ধ করতে হয় নি। এ বছর করোনার কারনে আমরা দোকান বন্ধ রেখেছি। ঈদের দিনে ও আমাদের চায়ের দোকানে বহিরাগত কোন পর্যটক নেই।

    সোমবার (ঈদের দিন) বেলা ২টায় মাধবপুর চা বাগান লেকে গিয়ে দেখা গেল সরকারি নির্দেশনা ও স্বাস্থ্য বিধি না মেনে নারী-পুরুষ ও শিশু সমন্বয়ে প্রচুর স্থানীয় পর্যটকরা প্রবেশ করছেন মাধবপুর চা বাগান লেকে। আবার লেকের ভিতরে দল বেধে ঘুরে বেড়িয়ে আবার ফিরে যাচ্ছেন। মাধবপুর লেকে প্রবেশের প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে চা কারখানার সামনের গেইটে পর্যটকদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও মোটরযান আটকিয়ে দিলেও পর্যটকরা পায়ে হেটে লেকে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
    শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল ছালেহ বলেন. আমরা দর্শনীয় স্থান গুলোতে নজর দারি রাখছি।যাতে কেহ ঘোরতে না পারে সে জন্য আমরা শহরে বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেছি।যানবাহন আটকিয়ে চেকিং করছি। সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে আমরা মাঠে কাজ করছি। এছাড়াও যারা অপ্রয়োজনে শহরে বাইক ও প্রাইভেটকার নিয়ে বের হচ্ছে আমরা তাদের গাড়ি আটক করছি।আমরা আগামিকাল থেকে শহরের আশেপাশের চা বাগান গুলোতে পুলিশি টহল জোড়দার করবো।

    শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার কারনে পর্যটক নগরীর সকল দর্শনীয় স্থান, হোটেল রিসোর্ট সব কিছু বন্ধ রয়েছে। আমরা সব দর্শনীয় স্থানের কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি যেন পর্যটক কিংবা স্থানীয়রা ভীড় করতে না পারে। করোনা পরিস্থিতিতে সবাই বাড়িতে ঈদের আনন্দ পরিবারের সাথে কাটানোর অনুরোধ জানান তিনি।এ সময়ে পর্যটন কেন্দ্রে প্রবেশ কোনভাবেই মানা যাবে না।আর দলবেধে এভাবে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে ঘুরে বেড়ানোর কোন সুযোগ দেওয়া যাবে না।