লাউড়েরগড় সীমান্তে শাহ আরোফিন এর ওরস মোবারক শেষ

    0
    236

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৮মার্চ,জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া,তাহিরপুরে মেলা থেকে ফিরে: সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তের লাউড়েরগড় ও রাজারগাঁও গ্রামে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যাদুকাটা নদীর ২৩কিলোমিটার এলাকার দুই তীরে দু ধর্মের তিন দিন ব্যাপী ২৫মার্চ থেকে ২৬ ও ২৭মাচর্ (১১,১২,১৩চৈত্র)পর্যন্ত চলে শেষ হয়েছে দুইধর্মের-এই দুইধর্মীয় উৎসব। একটি হল-হিন্দু ধর্মালম্বীদের পনাতীর্থ বা গঙ্গাস্নান আর অন্যটি হল মুসলমানদের হযরত শাহ আরোফিন (রঃ) এর ওরস মোবারক।

    এই দুই উৎসবের মধ্য দিয়ে ঘটে সিলেট বিভাগের ৪টি জেলা সহ দেশ-বিদেশের দুই ধর্মের দেশ,বিদেশের প্রায় ৮লক্ষাধিক মানুষের মিলন মেলায় যাদুকাটা নদী কানায় কানায় পরিপূর্ন হয়ে উঠেছিল। দুইধর্মের পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে স্থানীয় ভক্তদের মাধ্যমে সেচ্চা শ্রমের ভিত্তিত্বে  প্রতিটি পয়েন্টে কাজ করে দু-ধর্মের স্থানীয় যুবক বক্তগন। ৭৫০বছর ধরে চলে আসা হিন্দুধর্মালম্বীরা যাদুকাটা নদীতে গাঙ্গা স্নানের মাধ্যমে তাদের সারা বছরের পাপ মোচনসহ পুণ্য লাভের জন্য এখানে আসেন মা,বাবা,স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আসেন। আর মুসলমান ধর্মালম্বীরা তাদের মনোবাসনা পূরণ ও সিদ্ধি লাভের আশায় শাহ আরোফিন (রঃ) এর ওরসে যান। তথ্য নিয়ে জানাযায়,প্রতি বছরের ন্যায় ৩দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় দুইধর্মের দুই উৎসব।

    ওরস ও মেলায় অংশ গ্রহন কারীদের চিত্র।

    মুসলমানদের ৩৬০আওলিয়ার অন্যতম ছিলেন হযরত শাহ আরেফিন (রঃ)। সবাই জানে শাহ আরোফিন (রঃ) একজন জিন্দা পীর। তিনি ভারতের মেঘালায় পাহাড়ের বড়বড় পাথরের গুহায় বসে আল্লাহ ইবাদত করতেন। ওইটাই ছিল তার একমাত্র আস্তানা,বাংলাদেশে কোন আস্তানা নেই। কিন্তু ভারতের সেই আস্তানায় ভক্তদের যেতে দেয় না ভারতীয় বিএসএফ। তাই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের লাউড়েরগড় এলাকায় জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন স্থানে শাহ আরোফিন (রঃ) এর আস্তানা তৈরি করে সেখানেই ওরস পালন করা হয়। সেখানে বক্তরা এই আওলিয়ার জীবন দর্শনের উপর আলোচনা,মিলাদ মাহফিল,খতমে কোরআন পড়ানো ও দেশবাসীর সুখ সমৃদ্ধী কামনা করে আখেরী মোনাজাতের মধ্যদিয়ে তিনদিন ব্যাপী বার্ষিক ওরস মোবারক শেষ হয়েছে।

    এছাড়াও আগত বক্তগন তিন দিন ব্যাপী বাউল,জারী,সারি,মারফতি,আদ্ধাতির্ক,বাউল শাহ আব্দুল করিম,হাসন রাজা,রাধারমন সহ বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া গান পরিবেশন করে গানে গানে মুখরীত করে তুলেছিল চারপাশ। অন্য দিকে ১৫১৬খিষ্টাব্দে পনাতীর্থের সূচনা করেন মহাপুরুষ শ্রীমান অদ্বৈত আর্চায প্রভু। তার জন্ম সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের নবগ্রামে। কিন্তু সেই গ্রাম যাদুকাটা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বহু বছর আগেই। এজন্য নদীর তীর সংলগ্ন রাজারগাঁও গ্রামে অদ্বৈত আর্চায মন্দির ও আখড়া তৈরি করা হয়েছে। প্রতি বছরের চৈত্র মাসে এই তৃথীতে  গঙ্গাস্নানের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে হিন্দু ধর্মাবলাম্বীরা যাদুকাটা নদীতে ছুটে আসেন।

    শাহ আরোফিন (রঃ) এর ওরস ও পনাতীর্থকে কেন্দ্র করে যাদুকাটা নদীর দুই তীর রাজারগাঁও ও লাউড়েরগড়ে বসে বিরাট বারুনী মেলা। মেলায় লক্ষলক্ষ দোকানপাট বসে। এ সময় পূণার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে প্রায় ২৩কিলোমিটার দৈর্ঘ্য যাদুকাটা নদীর চারপাশ লোকে লোকারন্যে পরিনত হয়। বাদাঘাট ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন ও উপজেলার সচেতন মহল সহ আগত দর্শনার্থীরা জানান-এবার দু-ধর্মের দুটি মেলায় সকল প্রকার অবৈধ কার্মকান্ড প্রতিরোধে প্রশাসন গুরুত্ব সহকারে কার্যকর প্রদক্ষেপ নেওয়ায় কোন অপ্রতিকর ঘটনা গঠেনি। তাহিরপুর থানার অফিসার্স ইনচার্য নন্দন কান্দি ধর জানান,মেলা ও পর্নতীর্থ এলাকায় ও আসা-যাওয়ার পথে সকল প্রকার অনিয়ম ও আইনশৃংখলা বজার রাখার সবোর্চ্চ চেষ্টা করেছি।

    অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল তাই শুষ্ট ও শুশৃংখল ভাবে দু-ধর্মের মিলন মেলা সম্পন্ন হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামন কামরুল জানান-এবার দু-ধর্মের দুটি মেলায় আসা লোকজনের নিারাপত্তার জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। যার জন্য এই মেলায় শান্তিপূর্ন ভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। সত্যিই এ মেলা যেন দু-ধর্মের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন,প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মেলা উন্মুক্তো রাখা হয়েছিল।

    এছাড়াও অন্যান্য বিষয়ের উপর কড়া নজরদারীর জন্য পুলিশ,র‌্যাব ও বিজিবি সহ আইন-শৃংখলাবাহিনীর সকল স্থরের বিশেষ নজরদারী করায় এবং সবার সহযোগীতায় মেলা শান্তির্পূন ভাবে সম্পন হয়েছে।