লন্ডন প্রবাসীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ

    0
    230

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫জুন:সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায় স্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে সারা রাত ধরে পিটিয়েছেন লন্ডন প্রবাসী এক স্বামী এমন অভিযোগ করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার ওই নারী বর্তমানে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সূত্র জানা যায়, ঘটনাটি ঘটেছে বিশ্বনাথ উপজেলার পৌদনাপুর গ্রামে। জানা গেছে, কয়েক মাস আগে বিশ্বনাথ উপজেলার পৌদনাপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের লন্ডন প্রবাসী ছেলে আনোয়ার আলী সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার আকিলপুর গ্রামের মাহমুদ আলীর মেয়ে ফারজানা বেগমকে (১৯) বিয়ে করেন। বিয়ের ১১ দিন পর আনোয়ার আলী লন্ডন চলে যান। গত এপ্রিল মাসে তিনি ফের দেশে আসেন। দেশে এসেই তিনি ফারজানার উপর নির্যাতন শুরু করেন। প্রায় দিনই তিনি স্ত্রীকে কোন না কোনভাবে নির্যাতন করতেন।

    গত সোমবার দিবাগত রাত ১১টার পর আনোয়ার আলী হঠাৎ করে স্ত্রী ফারজানাকে একটি চেয়ারের সাথে হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পরে তাকে নিয়ে যান ঘরের বাথরুমে। সেখানে নিয়েতার গায়ের গেঞ্জি দিয়ে ফারজানার চোখও বেঁধে ফেলেন। শুরু করেন মারধর।

    এরপর ফারজানার মাথায় পানি ঢালতে থাকেন। এসময় ফারজানা বাঁচার জন্য আকুতি করতে থাকেন। ভোরে ফারজানার হাত ও চোখের বাঁধন খুলে দিলেও পায়ের বাঁধন খুলে দেননি তিনি।

    মঙ্গলবার পুরো দিনই ওইভাবে পা বেঁধে রাখা হয় ফারজানার। একপর্যায়ে বিকেল ৫টায় আনোয়ার ফারজানার বাবা মাহমুদ আলীকে ফোন দিয়ে ফারজানা বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেন এবংফারাজানাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। পরে ফারজানার পিতা মাহমুদ আলী, চাচা ঠাকুর মিয়া ও ৭নং  মোগলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ২নং স্থানীয় ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিনকে নিয়ে আনোয়ারের বাড়ি যান। সেখানে যাওয়ার পর ফারজানাকে তাদের হাতে তুলে দেন আনোয়ার।

    এসময় ফারজানা নির্যাতনের বিবরণ দেন তার স্বজনদের কাছে। ফারজানার শারীরিক অবস্থার খারপ হওয়ায় তাকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে হাসপাতালের ২য় তলায় ১৭ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। বুধবার দুপুরে নির্যাতনের স্বীকার ফারজানা বিভিন্ন সাংবাদিকসহ গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের কাছে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন।

    তিনি জানান, এবার লন্ডন থেকে আসার পর আনোয়ার তার সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করেন এবং বিভিন্ন অভিযোগ তুলেন। কিন্তু তা অস্বীকার করলে তাকে মারধর করেন। আনোয়ার ঢাকায় নিয়ে তাকে খুন করারও হুমকি দিয়েছেন বলে জানান ফারজানা।

    ফারজানা জানান, নির্যাতনের এক পর্যায়ে একটি তিন পৃষ্ঠার একটি স্ট্যা¤প এনে সেটার মধ্যে স্বাক্ষর নেন আনোয়ার এবং বলেন, শবে বরাতের মাস ও মায়ের কারণে তোকে হত্যা করিনি। না হয় আজ হত্যা করতাম।

    ফারজানা আরো জানান, আনোয়ার একাধিক বিয়ে করেছেন। এক স্ত্রী লন্ডনে রয়েছে। সেই স্ত্রীর একটি সন্তানও আছে। কিন্তু বিয়ে হওয়ার আগে তাকে ও তার পরিবারকে তা জানানো হয়নি। বিয়ের পর তারা তা জানতে পেরেছেন বলে জানান ফারজানা।

    এ ব্যাপারে ফারজানার স্বামী আনোয়ারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ফারজানাকে আনতে যাওয়া জালালাবাদ থানার ৭নং মোগলগাও ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ্ওয়ার্ড সদস্য নিজাম উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিয়ের পর থেকেই ফারজানাকে তার স্বামী নির্যাতন করে আসছে।

    গত সোমবার নির্যাতন করার পর গতকাল মঙ্গলবার আমরা তাকে নিয়ে আসি এবং পরে তাকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

    তিনি আরো জানান, ফারজানাকে আনার সময় অলংকারী ইউনিয়ন পরিষদের একজন ইউ/পিসদস্যসহ কয়েকজন গণ্যমান্য মুরব্বিও উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

    এদিকে লামাকাজীর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন (মানবাধিকার কমিশন) এর পক্ষ পক্ষ থেকে তীব্রনিন্দা জানান। নেতৃবৃন্দ পাশাপাশি প্রশাসনকে আহবান করেছেন,এই মর্মান্তিক ঘটনাটি  স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে যেন খুব গুরুত্ব সহকারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।