রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত নেয়ার দায়িত্ব মিয়ানমারের

    0
    240

    পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত নেয়ার দায়িত্ব মিয়ানমারের। এ ক্ষেত্রে কীভাবে তারা নিজেদের নাগরিকদের আস্থা অর্জন করবে সেটি তাদের বিষয়, বাংলাদেশের নয়। কিন্তু উল্টো তারা বাংলাদেশকেই দোষারোপ করছে। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দেশটির ওপর আরও চাপ বাড়াতে হবে।পার্সটুডে

    বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং মিশন প্রধানদের রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রিফ শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

    বিদেশি রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও মিশন প্রধানসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনকে আরও বলিষ্ঠ ভূমিকা নেয়ার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যা যা করার করে যাব, করছি। কিন্তু আপনারা যারা গ্লোবাল লিডার আছেন, আপনাদেরও দায়-দায়িত্ব আছে। আমরা অ্যাপিল করেছি, আপনারা (আন্তর্জাতিক বিশ্ব) এই সমস্যা সমাধানে আরও অ্যাগ্রেসিভ, আরও বেশি করে উদ্যোগ নেবেন। কেননা, এটা শুধু আমাদের সমস্যা না, এটা সবার সমস্যা। আপনারা আরও সক্রিয় উদ্যোগ নেবেন, যেন মিয়ানমারকে তাদের স্বজাতিকে নিজেদের দেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়।’

    পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখনো প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু লোকগুলোকে সেখানে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে হবে মিয়ানমারকে। এছাড়া সেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও চলাফেরার স্বাধীনতা বিষয়েও মিয়ানমারকে নিশ্চয়তা দিতে হবে।’

    কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের সাম্প্রতিক সমাবেশ

    কূটনীতিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘ঢাকায় যত কূটনীতিক আছেন এবং জাতিসংঘের এজেন্সিতে যারা কাজ করেন তাদেরকে আজ জানিয়েছি, মিয়ানমার গত ২২ আগস্ট একটি প্রেসরিলিজ দিয়ে আমাদের ওপর ব্লেইম করেছে। বলেছে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে ফেইল করেছে। সে প্রেক্ষিতে আজকে আমরা আন্তর্জাতিক বিশ্বকে বললাম, আমাদের (বাংলাদেশের) যা যা করার আমরা সব করেছি। দুই দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তি মতে, মিয়ানমারের দায়িত্ব ছিল রোহিঙ্গাদের মাঝে আস্থা বা বিশ্বাসের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা, যাতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় ফিরে যায়। কিন্তু মিয়ানমার সেই আস্থার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখানে আমাদের দায়িত্ব ছিল লজিস্টিক সাপোর্ট জোগাড় করা, যা আমরা শতভাগ করেছি।’

    তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের জন্য ৩ হাজার ৪৫০ জনের তালিকা আমাদের দিয়েছিল আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেই তালিকা জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাকে দিয়ে দিয়েছি, যাতে রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যাবে কি না সেটা তারা জানতে পারে এবং সেখানে মিয়ানমারের প্রতিনিধি ও চীনের প্রতিনিধি পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিল।’

    পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার বলছে যে তারা রাখাইনে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যদি করে থাকে, তাদের লোক তাদেরকে বিশ্বাস করে না, এই যে ট্রাস্ট ডেফিসিয়েট, এখানে কাজ করতে হবে। সেজন্য মিয়ানমারকে আমরা আবার বলেছি যে আস্থা বা মিয়ানমারের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য দুনিয়ার যত মিডিয়া আছে বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিংবা জাতিসংঘের লোকজন কিংবা অন্য দেশ-বিদেশের লোককে রাখাইনে নিয়ে তোমরা (মিয়ানমার) দেখাও যে কী করেছ। আরও বলেছি, রোহিঙ্গা শিবিরের যে সব নেতারা (মাঝি) আছে তাদের নিয়ে রাখাইন ঘুরিয়ে দেখানো হোক যে সেখানে মিয়ানমার কী করেছে।’

    ‘মিয়ানমার রাখাইনে কী করেছে তা অন্যদের নিয়ে দেখায় না কেন?’— এমন প্রশ্ন রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের যথেষ্ট চিন্তা আছে। কেন না এক সময় তারা নিপীড়িত হয়েছিল, তারা নিহত হয়েছিল। এ জন্য রোহিঙ্গারা নিরাপত্তা এবং চলাচলের স্বাধীনতা চায়। মিয়ানমার আমাদেরকে একাধিকবার বলেছে যে, রাখাইনে রোহিঙ্গারা নিরাপদে এবং স্বাধীনভাবে চলতে পারবে। যদি তাই হয় তবে মিয়ানমার অন্যদের নিয়ে দেখায় না কেন? একটি দলকে নিয়ে দেখায় না কেন? আমরা এগুলোই আজকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জানিয়েছি।’

    এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী চীনে গিয়েছিলেন। সে সময়ে ওই দেশটির রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। এ ছাড়া দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তারা সবাই আমাদের সঙ্গে একমত যে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনই সমস্যার একমাত্র সমাধান। মিয়ানমার এই সমস্যা তৈরি করেছে, তাদের সমাধান করতে হবে। চীন বলেছে, তারা আমাদের সঙ্গে আছে। দুই দেশই তাদের বন্ধুরাষ্ট্র। ফলে সমস্যার সমাধানে তৃতীয়পক্ষ হিসেবে তারা কাজ করতে চেয়েছে। বুধবারও চীনের রাষ্ট্রদূত এসে সে কথাই বলে গেছেন। এরপর চীনের রাষ্ট্রদূত মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ করে সময়সূচি জানাবেন। পরবর্তীতে তিন দেশের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

    উল্লেখ্য, মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চুক্তি রয়েছে। এ নিয়ে কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষ ২২ আগস্ট কিছু লোক নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় রোহিঙ্গারা সেখানে যেতে রাজি হয়নি।