রেড চিটাগাং গরু পালনে ভাগ্যের পরিবর্তন হতে পারে

    0
    260

    আমারসিলেট 24ডটকম,০৯অক্টোবর : রেড চিটাগাং গরু পালনের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন ময়মনসিংহের শতাধিক পরিবার। রেড চিটাগাং গরুকে বাংলাদেশের নিজস্বজাত হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি আদায়ের প্রচেষ্টা এবং এই জাতের উন্নয়ন, সংকরায়নের উদ্দেশ্যে মাঠ পর্যায়ে ক্ষুদ্র কৃষক ও দরিদ্র পরিবারের আর্থিক উন্নতি সাধন ও তাদের জীবন মানের পরিবর্তনের জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক রেড চিটাগাং ক্যাটল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০০৯ সালে ময়মনসিংহের চর জেলখানার ৬৭ টি পরিবারের মাঝে রেড চিটাগাং জাতের গরু প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. এ.কে.এম ফজলুল হক ভূইয়ার প্রচেষ্টায় এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও এডিপিকে সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে এ প্রকল্পে ১১৫ টি পরিবার রেড চিটাগাং জাতের গাভী লালন-পালন করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি  হয়েছেন।

    প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. এ. কে. এম ফজলুল হক ভূইয়া জানান, প্রকল্পটির মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করার পূর্বে রেড চিটাগাং জাতের উন্নয়ন ও অধিকতর গবেষণার জন্য ২০০৪ সালে চট্রগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫৬ টি রেড চিটাগাং গরু বাকৃবিতে রেখে দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত গবেষণা করা হয়। এসময় বিভিন্ন কৌলিতাত্বিক বিষয়ের নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হয়। এরপর ২০০৯ সালে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়।তিনি জানান, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ও ইউএসবিএ এর অর্থায়নে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহায়তায় ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চর জেলখানা এলাকায় ৬৭ টি পরিবারের মাধ্যমে প্রথমে প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয়।

    রেড চিটাগাং জাতের দুগ্ধ উৎপাদনকারী গাভীর বিস্তারের পাশাপাশি গ্রামের দরিদ্র পরিবারের আর্থিক উন্নয়ন, প্রাণিজ প্রোটিনের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে কর্মঠ ও মেধাবী জাতি হিসেবে তৈরী করার জন্য প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে এ প্রকল্পটির অধীনে ১১৫ টি পরিবার রেড চিটাগাং জাতের গাভী লালন-পালন করে গত সাড়ে ৪ বছরে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা আয় করেছেন যা দরিদ্র পরিবার গুলোর জীবন মান উন্নয়নে সহায়তা করছে। পরিবারের যেকোন সদস্য শান্ত স্বভাবের এ সকল গাভী লালন পালন করতে পারেন এবং খুব কম খরচে বসতবাড়ির আশেপাশের চারণভূমিতে ঘাস, খড়কুটা খাইয়েই পালন করা যায়। এছাড়াও উপজেলা ও বাকৃবি থেকে চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। ফলে লালন পালনে অতিরিক্ত কোন অর্থ ব্যয় করতে হয় না। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বি  হওয়ার ফলে এসব পরিবারের শিশুরা এখন বিদ্যালয়ে যাচ্ছে।

    প্রত্যন্ত চর এলাকার দরিদ্র পরিবারের এসব শিশুরা পূর্বে দারিদ্রতার কারণে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। এছাড়াও গাভীর দুধ আহরণের মাধ্যমে প্রণিজ প্রোটিনের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। ফলে পুষ্টিতে সমৃদ্ধ মেধাবী ও স্বাস্থ্যবান আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠছে। রেড চিটাগাং জাতের এ সকল গাভী থেকে প্রায় ৮ লিটার পর্যন্ত দুধ আহরণ করেছেন গরু পালনকারী কৃষকরা।দুধ ও বাড়ন্ত রেড চিটাগাং গরু বিক্রি করে অনেক দুস্থ পরিবার তাদের ঘর বাড়ি মেরামত ও স্থাপন, চাষের জমিক্রয়, মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন অনেক পরিবার। তারা এখন আগের চেয়ে অনেকটা সুখী, আনন্দিত।