রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছে মাত্র ২১জন!

    1
    568

    আমারসিলেট24ডটকম,০১মার্চঃ পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মূলধন নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সোনালী, রূপালী, অগ্রণী ও জনতা। কিন্তু গত বছর শেষে এ চার ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক দাঁড়িয়েছে মাত্র ২১ জনে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে ঘরে বসেই অথবা ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় নিজেই ব্যাংকিং সুবিধা গ্রহণ করাকে বলা হয় ইন্টারনেট ব্যাংকিং। নিজস্ব পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেবাটি পাওয়া যায়।

    কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সাল শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ২ লাখ ৬ হাজার ৪৮৭ জন। এর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা নিচ্ছেন মাত্র ২১ জন। এছাড়া মোবাইল ও এসএমএস ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করেন ৩ হাজার ২৭০ জন। যদিও চার ব্যাংকের ৩ হাজার ৫২৭টি শাখার মধ্যে ৮৩৯টিতে অনলাইন সুবিধা চালু আছে।
    এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ কুমার দত্ত বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা এখনো পুরোপুরি চালু করতে পারিনি আমরা। এজন্য প্রস্তুতিও চলছে। এটি সম্পন্ন হলে আমাদের গ্রাহকরাও ঘরে বসেই ব্যাংকিং সুবিধা পাবেন।’

    এদিকে বছর শেষে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর শাখা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে অনলাইনে যুক্ত ৩ হাজার ৪৬৯টি শাখা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৬ জন। এর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবার আওতায় আছে প্রায় ৩ শতাংশ বা ৯ লাখ ৩২ হাজার ৭৬৩ গ্রাহক। মোবাইল ও এসএমএস ব্যাংকিং সেবা নিয়ে থাকেন ৪৪ লাখ ৪১ হাজার ২৭০ গ্রাহক, মোট গ্রাহকের যা প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ।

    রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ১ হাজার ৪৯৮ শাখার মধ্যে ১১৫টিতে অনলাইন সুবিধা থাকলেও এর কোনো গ্রাহকই ইন্টারনেট, মোবাইল ও এসএমএস সেবা নিচ্ছেন না। যদিও বছর শেষে এসব ব্যাংকের গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৭৪ হাজার ৭০৫ জন।

    বিদেশী ব্যাংকগুলোর ৭৩টি শাখার সবই অনলাইনের আওতায়। ব্যাংকগুলোর ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭০৭ গ্রাহকের মধ্যে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৯৭৪ জন ইন্টারনেট ব্যাংকিং এবং ১ লাখ ৫৬ হাজার ১০১ জন মোবাইল ও এসএমএস ব্যাংকিং সেবার আওতায় রয়েছে।

    নতুন ব্যাংকগুলোর ৬৩ শাখার সবই অনলাইনে যুক্ত রয়েছে। ২৩ হাজার ৫৭১ গ্রাহকের কেউই অনলাইন ব্যাংকিং সেবা না নিলেও ৪ হাজার ৩৪৮ জন এসএমএস ও মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় এসেছেন।

    জনতা ব্যাংকের পরিচালক ড. আরএম দেবনাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয় ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক না বাড়ার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সেবামূলক কাজ (যেমন ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলা, সামাজিক নিরাপত্তার অর্থ সুবিধাভোগীদের হিসাবে স্থানান্তর ইত্যাদি) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে করতে হয়। এছাড়া হাজারের ওপর শাখা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনা বেশ কঠিন কাজ। ফলে প্রাথমিক অবস্থায় কিছুটা পিছিয়ে আছে ব্যাংকগুলো। আশা করা যায়, ছয় মাসের মধ্যে এ সেবার গ্রাহক দ্রুত বাড়বে।

    ২০১৩ সালের মার্চে ব্যাংক খাতের ৮ হাজার ৪২১ শাখার মধ্যে অনলাইন সুবিধা ছিল ৪৪ দশমিক ১০ শতাংশে। জুনে ৮ হাজার ৪৮০ শাখার মধ্যে এ সুবিধা ছিল ৪৭ শতাংশে। আর সেপ্টেম্বরে ৮ হাজার ৫২৪ শাখার মধ্যে অনলাইনের আওতায় আসে ৪৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ডিসেম্বরে  ৮ হাজার ৬৭৮ শাখার মধ্যে প্রায় ৫২ শতাংশ অর্থাৎ ৪ হাজার ৪৯৬ শাখা অনলাইনের আওতায় এসেছে।

    রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদ উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালু করেছে অনেক দেরিতে। শাখা অনেক বেশি হওয়ায় সেবাটি চালু ও নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। এছাড়া ইন্টারনেট ব্যাংকিং চালুর আগে সরকার ও পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হয়েছে। এ কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো পিছিয়ে আছে। তবে এক বছরের মধ্যে এ সেবা দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।

    ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের ৭ কোটি ৫৭ লাখ ১৩ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবায় ও ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ গ্রাহক মোবাইল ও এসএমএস সেবায় আওতায় এসেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮৪২ গ্রাহকের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। একই সময়ে মোবাইল ও এসএমএস ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ গ্রাহক।

    ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ইন্টারনেট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য নিজস্ব ইন্টারনেট সংযোগযুক্ত কম্পিউটার অথবা স্মার্ট ফোনের প্রয়োজন পড়ে। এর ব্যবহারটাও জানতে হয়। দেশের গ্রাহকদের মধ্যে এ বিষয়ে জানার ঘাটতি রয়েছে। তারা অনেকেই এখনো ইন্টারনেট ব্যাংকিংকে আস্থায় নিতে পারেননি। এ কারণে ধীরে এগোচ্ছে এ সেবা। তবে এসএমসএ ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহক বাড়ছে অনেক বেশি। -বি.বার্তা