রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই অস্ত্রধারী নেতা গ্রেপ্তার

    0
    196

    আমারসিলেট24ডটকম,০১এপ্রিলঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নামে দুই নেতাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রক্টর দপ্তরে ভাঙচুর চালায় তারা।

    গ্রেপ্তারকৃত দুই নেতা হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সুদীপ্ত সালাম ওরফে আব্দুস সালাম ও বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আখতারুল ইসলাম আসিফ। তাঁদের মধ্যে সালামকে গত ২ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত ফি ও সান্ধ্য কোর্সবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর এবং ২০১২ সালের ২ অক্টোবর শিবিরের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে। তিনি ক্যাম্পাসে অস্ত্রবাজ, চাঁদাবাজ বলেও পরিচিতি। গত বছরের ২১ এপ্রিল সালামকে অস্ত্র ও যৌনকর্মীসহ নগরের বোয়ালিয়া থানা পুলিশ আটক করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কারাগারে পাঠায়। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন।

    রাজশাহী নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার ওসি সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে আটকের সময় তাঁদের কাছে থাকা একটি ৭.৬৫ মডেলের পিস্তল, তিনটি গুলি ও একটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে।’ তিনি জানান, আটক ছাত্রলীগ নেতাদের নগরীর মতিহার থানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংগঠনের দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের পরপরই দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাশেদুল ইসলাম রঞ্জু, তন্মায়ানন্দ অভি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম হিমু ও  সম্পাদক গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে ১৫-২০ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বর থেকে মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন ভবনে যায়। এ সময় ভবনের মূল ফটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান কথা বলতে এলে তাঁর সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে তারা প্রক্টর অফিসে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের কাছে নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানায় এবং ক্যাম্পাসে পুলিশের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

    একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের গালাগাল করে এবং চেয়ার ও জানালার কাচ ভাঙচুর করে। পরে তারা প্রশাসন ভবনের নিচতলায় গিয়ে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসকের কক্ষসহ আরো কয়েকটি কক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বাস ভাঙচুর করে।

    প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানায়, ছাত্রলীগের ওই দলটি দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে করে সড়কের উভয় পাশে প্রায় দুই কিলোমিটারজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এরপর দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে তারা।

    বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, সাংগঠনিক কাজে ক্যাম্পাসের বাইরে আছি। তবে তারা যদি অস্ত্রসহ ধরা পড়ে থাকে তাহলে খোঁজখবর নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    প্রক্টর তারিকুল হাসান বলেন, ক্যাম্পাসে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

    উল্লেখ্য, গত রবিবার সন্ধ্যায় চাঁদা না দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আব্দুল মুহিত ও ইমরান নামের দুই শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ছাত্রলীগ নামের নেতা সালাম ও আসিফ। আগের দিন শনিবার শাহ্ মখদুম হলে ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া। তার আগে গত শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলে আরবি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে মেরে তাঁর পা ভেঙে দেয় ছাত্রলীগকর্মী আব্দুল্লাহ আল বাকি।কালেরকণ্ঠ