একুশে গ্রন্থমেলা জনসমুদ্রে পরিণতঃবিক্রির রেকর্ড সর্বোচ্চ

    0
    220

    আমারসিলেট24ডটকম,২১ফেব্রুয়ারীঃ ভাষার জন্য যেমন রক্ত দিতে হয়েছে, তেমনি স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্যও রক্ত দিতে হয়েছে এ দেশের বাঙালীকে। অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বাঙালীর এই বোধটা বেশ টনটনে। আর এই বোধের প্রকাশটিই দেখা গেল আজ একুশের গ্রন্থমেলায়।
    অমর একুশে ফেব্রুয়ারির এদিনটি বাঙালীর যেমন বেদনার, তেমনি অহংকার, গৌরব ও অর্জনের। তাই শহীদ মিনার থেকে গ্রন্থমেলাসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভোর থেকেই মানুষের ঢল। একে ঢল বা জনজোয়ার বললেও কম বলা হবে, জনসমুদ্র বলে বিশেষায়িত করাই আক্ষরিক অর্থে ঠিক।সকাল আটটায় গ্রন্থমেলার দ্বার খোলার পর থেকে সমুদ্রের জোয়ারের মত জনজোয়ার আছড়ে পড়তে থাকে মেলায়।দুপুরের পরও অনেককে মেলা প্রাঙ্গণে ঢুকতে গিয়ে দীর্ঘ সময় কসরত করতে হয়েছে। মেলার মূল অংশ এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হওয়ায় মাঠের চারদিক দিয়ে পিপড়ার মত মানুষ মেলায় প্রবেশ করেছে।
    এদিন মেলায় ঢুকতে অন্তত ৪০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা করে সময় ব্যয় করতে হয়েছে আগতদের। যারা সঙ্গে শিশুদের এনেছিলেন, তারা সন্তানকে কোলে বা কাঁধে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
    আজ মেলায় আসা শিশু, বুড়ো, তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ প্রায় সকলের পরনেই ছিল সাদা-কালো রঙের পোশাক। পোশাকই আজ বলে দিচ্ছিল শোকের মাঝেও ভাষাকে নিজের করতে আর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উদগ্রীব তারা। কারও মধ্যেই দেখা যায়নি ক্লান্তির ছাপ।
    শহীদ মিনার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনাসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রচুর লোক সমাগম থাকায় অনেকে ভিড় এড়াতে আর মেলায় ঠুকতে সাহস করেননি। সন্ধ্যায় মেলায় ঢুকেছেন যত লোক, ভিড় দেখে ঢুকতে না পেরে ফিরে গেছেন তার চেয়েও অনেক বেশি।যারা মেলায় প্রবেশ করেন নি, তারা দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বিশাল এলাকাসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা অর্ণিবানে আড্ডা দিয়ে ঘোরাঘুরি করে কিংবা রাস্তায় জমে ওঠা নানা সামগ্রীর ক্ষণস্থায়ী মেলায় কেনাকাটা করে সময় পার করেছেন।
    মেলার এ আবহে অনেকেই ফুটপাতে জমিয়ে তুলেছেন গানের আসর। শহীদ দিবসে মানুষের ঢল দেখে অভিভূত হয়েছেন মেলায় আগত বিদেশীরা। বাঙালির ভাষাপ্রেম দেখে তারাও উদ্দীপিত হয়েছেন নিজ নিজ ভাষার প্রতি ভালোবাসায়।এদিন মেলায় গুণীজনদের আগমনও ছিল উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়। প্রকাশকদের মুখে দেখা গেছে তৃপ্তির হাসি। তারা বলেছেন, বিক্রি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ।
    অমর একুশে গ্রন্থমেলার আজ ২১তম দিনে ২৫৩টি নতুন বই এসেছে এবং নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে প্রায় আড়াই ডজন বইয়ের। গত বছর এদিন বই এসেছিল ২৫৫টি।২১ দিনে প্রায় ২১শ’ নতুন বইএবারের মেলার প্রথম তিন সপ্তাহের হিসাবে মোট নতুন বই এসেছে ২১৯১টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৭৯২টি। এর আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ২২৭৩টি। গতবারের তুলনায় এবার কম এসেছে ৬০১টি বই।
    প্রথম তিন সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি এসেছে কবিতার বই ৫০৩টি, উপন্যাস ৩৮৭টি, গল্প ২৭৯টি, প্রবন্ধ ১৪৩টি, শিশুসাহিত্য ৭১টি, ছড়া ৬০টি, রম্য/ ধাঁধা ৫৩টি, জীবনী/ স্মৃতিচারণ ৬২টি, গবেষণা ৩৬টি, ভাষা আন্দোলন/ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ৪৩টি, গণিত/ বিজ্ঞান ৩২টি, অনুবাদ ১৬টি, ভ্রমণ ৪৮টি, ইতিহাস ২৯টি, সায়েন্স ফিকশন/ গোয়েন্দা ২৯টি, স্বাস্থ্য ১৫টি, নাটক ২৩টি, রাজনীতি ১৪টি, ধর্মীয় ৩১টি, রচনাবলী ৭টি, কম্পিউটার ৯টি, অভিধান ৩টি এবং বাকি ১৯৮টি অন্যান্য বই।
    বাংলা একাডেমীর বই বিক্রি
    প্রতিবছর অমর একুশের বইমেলায় বাংলা একাডেমীর স্টলে বই বিক্রির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। এবারের মেলার প্রথম তিন সপ্তাহে বাংলা একাডেমীর স্টলে বিক্রি হয়েছে ৭০ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৮টাকা। গত বছর একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৫৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৮ টাকা। এর আগের বছর বিক্রি হয়েছে ৫০ লাখ ৫৫ হাজার ২৪৭ টাকার বই। ২০১০ সালের বইমেলায় এ সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৬৯ টাকা। আর ২০০৯ সালের বিত্রির পরিমাণ ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ২৩৯ টাকা। প্রতি বছরই ধারাবাহিকভাবে বাংলা একাডেমির বিক্রি বেড়ে চলেছে। গত বছর থেকে এবার বিক্রি বেশি হয়েছে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ২৪০ টাকা।
    প্রকাশকদের কথা
    প্রকাশকরা বলেছেন, এবারের মত একুশের দিনে এত মানুষ বিগত ৫/৭ বছরে দেখা যায়নি। যেমন ভিড় হয়েছে, তেমনি বিক্রিও হয়েছে বেশি। বই নিয়ে মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা গেছে এবারের মেলাতে।
    এ প্রসঙ্গে ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী আরিফুর রহমান নাইম বলেন, মাতৃভাষাকে ভালবেসে আজ মেলায় প্রচুর মানুষ এসেছে। এমন ভিড় সত্যিই নজীরবিহীন। বই বিক্রিও বেশ হয়েছে। তবে এদিনটি শুধু বই বিক্রির জন্যই নয়। এই যে এতো মানুষ মেলায় আসছে, অনেকে আবার শিশুদের সাথে নিয়ে আসছেন-এগুলোতে বইয়ের প্রতি এবং ভাষা আন্দোলনের প্রতি আবেগেই বহিঃপ্রকাশ।বাসস,