যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তা আজও অর্জিত হয়নি -রাশেদ খান মেনন

    0
    469
    যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তা আজও অর্জিত হয়নি
    -রাশেদ খান মেনন

    যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তা আজও অর্জিত হয়নি। নিজ দেশে পরাধীনতার যে কত কষ্ট, তা বলে শেষ করা যায় না। সেই পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেতে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলাম। আজ সান্ত্বনা যে আমরা স্বাধীন জাতি, স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাদের বড় অর্জন একটি পতাকা, স্বাধীন ভূখন্ড ও জাতীয় পরিচয়।
    ১৯৭০ সালে রাজধানীর পল্টন ময়দানে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সোচ্চার কণ্ঠে আওয়াজ তোলায় ইয়াহিয়ার সামরিক আদালতে আমার সাত বছর কারাদন্ড হয়। তখন আমি আত্দগোপনে চলে যাই। আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গ্রামের কৃষক-যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ‘৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করতে থাকে। ১ মার্চ জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ওদের চালাকি বুঝতে পেরে সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তখন আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, অধিকার আদায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। তখন আমি গ্রাম থেকে ফিরে আসি। ছাত্র-যুবকসহ সবস্তরের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করি। অস্ত্র, গোলাবারুদ সংগ্রহ করি। প্রয়াত সাংবাদিক ফয়েজ ভাই একটি পত্রিকায় ককটেল তৈরির নমুনা ছবিসহ প্রকাশ করে আমাদের ককটেল তৈরিতে সহায়তা করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় মূলত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর। রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘোষণার পরে গোটা জাতির কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে যায় স্বাধীনতা সংগ্রামের বিকল্প নেই। লড়াই তখন সাত দফা থেকে এক দফায় রূপান্তরিত হয়। ২৫ মার্চ আমরা ঢাকায় পল্টন ময়দানে শেষ জনসভা করি। এ সভায় আমি প্রকাশ্যে বক্তৃতা করি। সভা শেষ করে মধুর ক্যান্টিনে চলে যাই। মধুদার সঙ্গে কথা বলে আমার মেয়েকে দেখতে শ্বশুরবাড়ি যাই। কিন্তু ওই রাতেই পাকিস্তানিরা ঢাকায় গণহত্যা শুরু করে।
    ২৭ মার্চ আমরা যুদ্ধে নেমে পড়ি। বুঝতে পারিনি ককটেল, বোমা, রাইফেল ও বাঁশের লাঠি কাজে লাগবে। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করি। নরসিংদীর শিবপুরে ক্যাম্প তৈরি করি। সেখানে কৃষক সমিতির সদস্যদের নিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি বাড়িয়ে দিই। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর দেশ স্বাধীন হয়। বাবা-মার সামনে সন্তানদের হত্যা, ভাইয়ের সামনে বোনকে হত্যা, ধর্ষণের মতো সেদিনের নিষ্ঠুর চিত্র চোখে না দেখলে আজকের প্রজš§ বুঝতে পারবে না। তারা বুঝবে না স্বাধীনতা অর্জনে কী জুলুম-নির্যাতন, অত্যাচার-নিপীড়ন আমাদের সইতে হয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলে আঘাত করা হয়। সামরিক শাসন কায়েম করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের উল্টো দিকে যাত্রা শুরু হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায়। নিষ্ঠুর শাসনে দেশ পরিচালনা করা হয়। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরে আজ বলতে হয়, জাতির প্রত্যাশা পূরণ না হলেও পরাধীনতার কষ্ট আমরা মোচন করতে পেরেছি, এটিই বড় কথা। এখন বড় আশার কথা, নতুন প্রজম্ম দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজকে পরিপূরণ করার জন্য।

    লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। 

    যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তা আজও অর্জিত হয়নি -রাশেদ খান মেনন
    যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তা আজও অর্জিত হয়নি -রাশেদ খান মেনন