যেভাবে করোনাভাইরাসকে হার মানালেন মার্কিন তরুণী

    0
    210

    আমার সিলেট ডেস্কঃ করোনাভাইরাসকে বিশ্বব্যাপী মহামারীর ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ভয়ে যখন কাঁপন ধরেছে সারা বিশ্বে, তখন আতঙ্কের মাঝে এক টুকরো আশার আলো দেখা গেছে। করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করে সুস্থ হয়ে ওঠা এক মার্কিন তরুণী সহজ অথচ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বার্তা দিলেন। তিনি বলেন, ভয় পাবেন না। তবে অসুস্থ বোধ করলে ঘরেই থাকুন।

    এলিজাবেথ স্নেইডার নামে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের এ বাসিন্দা বলেন, উপসর্গ দেখা দিলেই বাড়িতে থাকুন। ঝুঁকি এড়িয়ে চলুন। তাহলেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা সম্ভব। তা না হলে ভয় বা আতঙ্কের কাছে জীবন পরাস্ত হওয়ার সুযোগ থাকে।

    বৃহস্পতিবার এএফপিতে তার এই অভিজ্ঞতার বর্ণনা প্রকাশিত হয়েছে।

    বায়োইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পিএইচডি করছেন সিয়াটেলের বাসিন্দা ৩৭ বছরের এলিজাবেথ স্নেইডার। সেইসঙ্গে একটি বায়োটেকনোলজি সংস্থার মার্কেটিং ম্যানেজার পদে কর্মরত। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অফিসে সামান্য অসুস্থ বোধ করেছিলেন। এর তিন দিন আগে তিনি একটি পার্টিতে গিয়েছিলেন। অসুস্থ বোধ করার পর তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। বিশ্রাম নেন। ভেবেছিলেন গত সপ্তাহে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে এমনটা হয়েছে। খানিকক্ষণ ঘুমানোর পর তিনি তার দেহে তীব্র জ্বরের উপস্থিতি টের পান। ওই রাতেই তার দেহের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটে উঠে যায়। তিনি বলেন, ‘ওই সময় আমার অনিয়ন্ত্রিত কাঁপুনি শুরু হয়; ঠাণ্ডা লাগায় এবং ঝিমঝিম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার পর আমি খানিকটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি।’ তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ঠাণ্ডার ওষুধ খেয়ে নেন এবং জরুরিভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে পারবে এমন এক বন্ধুকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন। সৌভাগ্যক্রমে পরের কয়েকদিনেই তার জ্বর কমে যায়।

    এলিজাবেথের কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ ছিল না। তাই তিনি সাধারণ ফ্লুর ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দেন। করোনাভাইরাস নিয়ে সংবাদপত্রের প্রতিবেদনগুলো পড়তে শুরু করেন। জানুয়ারির শেষের দিকে ওয়াশিংটনেই প্রথম ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য জানতে পারেন তিনি। তারপর আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে চিকিৎসকের কাছে যান। প্রাথমিকভাবে ফ্লু-এর ওষুধপত্র খেয়ে নিজেকে ঘরবন্দি করেন।

    স্নেইডার জানান, জ্বর আর মাথাব্যথা হলেও কাশি কিংবা শ্বাসজনিত সমস্যার মতো সাধারণ উপসর্গ না থাকায় নিজেকে কভিড-১৯ এ আক্রান্ত বলে মনে করেননি তিনি। তিনি বলেন, আমি ভেবেছি, যেহেতু কাশি বা নিঃশ্বাসে কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না, সুতরাং আমারটা করোনাভাইরাস নয়। ঠাণ্ডা লাগলেও তিনি ব্যাপারটাকে সাধারণ হাঁচি-কাশি বলেই মনে করেছিলেন। ভেবেছিলেন, চিকিৎসকের কাছে গেলেওতো তাকে বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নিতে এবং বেশি করে তরল খাবার খেতেই বলা হবে। ততক্ষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস। আরও অনেকের তারই মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানতে পারেন এলিজাবেথ। যুক্তরাষ্ট্রের এই রাজ্যটিতেই ভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এখন পর্যন্ত শুধু এ রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬০ জন এবং মারা গেছেন অন্তত ২৪ জন।

    এরপর সতর্ক হয়ে ওঠেন তিনি। হঠাৎ এলিজাবেথ জানতে পারেন, তিনি যে পার্টিতে গিয়েছিলেন সেই পার্টিতে যাওয়া কয়েকজন ব্যক্তি ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। তবে কয়েকজনের পরীক্ষার পর ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেটে ডায়গোনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার বাড়িতে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেন ওই সেন্টারের কর্মীরা। কিছুদিন পর পরীক্ষার রিপোর্টে দেখা যায়, তিনি কোভিট-১৯ পজিটিভ। ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এলিজাবেথ জানতে পারলেন ৭ মার্চ। এরপর এলিজাবেথ যা করলেন তা শিক্ষণীয়। কোনো রকম আতঙ্ক নয়, মন ও মস্তিষ্ক স্থির করে সোজা নিজের বাড়িতে একটি ‘ইমারজেন্সি’ ঘরে চলে যান। সেখানেই কোয়ারেন্টাইনে নিজেকে বন্দি করে ফেলেন। কোনো রকম জমায়েত নয়, বাইরে কোথাও বেরুনো নয়, ঘর থেকেই কাজ করতে থাকেন। চিকিৎসকদের পরামর্শমতো প্রচুর পানীয় খান, শরীর যাতে এতটুকুও শুকিয়ে না যায়। এভাবেই চলে অন্তত ১০ দিন। সুফলও পেয়েছেন এলিজাবেথ। তবে তিনি খুব বেশি অসুস্থ বোধ করছিলেন না। গত সপ্তাহ থেকে তার শরীর সুস্থ হয়ে উঠতে থাকে। বর্তমানে তিনি পুরোপুরি সংক্রমণ মুক্ত। এরপর তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের সেরে ওঠার কাহিনি শেয়ার করেন। তিনি লেখেন, ‘আমার এই গল্প শুনে মনে হয় মানুষ একটু ভরসা পাবেন। যেভাবে করোনা নিয়ে চারপাশে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তার প্রেক্ষিতে বারবারই বলতে চাই যে, ভয় পাবেন না, আতঙ্কিত হবেন না। কিন্তু সাবধানে থাকুন। শরীর খারাপ লাগলে, বাড়িতেই থাকুন। যদি আপনার সন্দেহ হয়, তাহলে অবশ্যই পরীক্ষা করান। যদি উপসর্গগুলো জীবন সংহারি না হয়, তাহলে ঘরেই থাকুন। ওষুধ খান, প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন, বিশ্রাম নিন। মনে রাখবেন, ভিড় জায়গায় যাওয়া মানেই আপনার থেকে অন্যদের শরীরে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হওয়া।’

    যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চীনের আক্রান্তের ৮০ শতাংশের বেশি সংক্রমণ গুরুতর ছিল না। বাকিদের সংক্রমণ ছিল বেশি এবং তাদের সবার বয়স ছিল ৬০ বছরের ওপর।