॥ সৈয়দ শবাব আহমদ শাহ আলম, যুক্তরাজ্য থেকে ॥
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে এই ২৬শে মার্চে সাজ্জাত ও তুহিন নামে দুই অদম্য তরুণ “WALK FOR JUSTICE” নামে একটি ক্যাম্পেইন করে। তারা প্রায় তিনশ মাইলে পায়ে হেঁটে LONDON এ পৌঁছান । লন্ডনে বসবাসরত বাঙালিরা সেটি জানতে পেরে তাদের স্বাগত ও সংহতী জানানোর জন্য লন্ডনের বাইরের থেকেও লন্ডনে ছুটে যায়। সেখানেই ছুটে যাওয়া একজন মাসুম রেজার মতে, “ওয়াকিং ফর জাস্টিস : সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তিনশো মাইল ওদের এই পদযাত্রা আমাদেরকে ফরেস্ট গাম্পের এক উপকুল থেকে আরেক উপকুলে তিন বছরের হেঁটে চলার দৃশ্যগুলো স্মরণ করিয়ে দিতে পারে।কিন্তু সেতো চলচ্চিত্র মাত্র আর আমি যাদের কথা বলছি তারা কাল্পনিক কোন চরিত্র নয় তারা রক্ত মাংশের মানুষ। সাজ্জাদ এবং তুহিন। সাজ্জাদ বিলাতের ওল্ডহ্যাম শহরের একজন সাংস্কৃতিক কর্মী আর তুহিন একজন অভিনেতা ও নাট্যনির্মাতা। হুমায়ুন আহমেদের হিমু চরিত্রে অভিনয় করে তুহিন সবার পরিচিত। ওরা দুজন ওল্ডহ্যামের শহীদ মিনার থেকে যাত্রা শুরু করেছে ছয়দিনে তিনশো মাইল পাড়ি দিয়ে লন্ডনের রিজেন্টস পার্কে পৌছাবে বলে। এখানে উল্লেখ প্রয়োজন যে ওল্ডহ্যামের এই শহীদ মিনারই বাংলাদেশের বাইরে গড়ে ওঠা বাহান্নের প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ।ওরা হাঁটছে একটা নির্দিষ্ট দাবি নিয়ে।ওদের দাবি যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। ওরা শাহবাগের সহযোগী। ওদের পায়ে পায়ে শাহবাগের গণজাগরণ হেঁটে চলেছে বিলেতের পথে।বিশ মার্চের প্রত্যুষে শুরু হয়েছে ওদের এই পদযাত্রা শেষ হবে ছাব্বিশে মার্চ ।লন্ডনে পৌঁছার পর ওরা ‘১০ ডাউনিং স্ট্রিটে’ পিটিশন দেবে ব্রিটেনের প্রধান মন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনের হাতে। পিটিশনে লেখা থাকবে সেইসব যুদ্ধাপরাধীদের বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠানোর অনুরোধ যারা বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়িত। পথে পথে ওরা লিফলেট ছড়িয়ে সবাইকে জানাচ্ছে ওদের দাবি। উৎসুক বিলেতিরা ওদের কাছ থেকে জেনে নিচ্ছে ওদের এই ‘ওয়াকিং ফর জাস্টিস’ এর উদ্দেশ্য। ওরা যখন ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে বলছে যে এই পদযাত্রা ’৭১ এ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিলো, যারা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দোসর হয়ে গণহত্যা চালিয়েছিলো, লুন্ঠন, ধর্ষণ আর অগ্নিসংযোগের মতন মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছিলো তাদের শাস্তির দাবিতে। বিনম্র শ্রদ্ধায় বিলেতি পথচারীরা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে কেউ বলছে ‘গুড লাক বয়েজ’ কেউ বলছে ‘উই টু ওয়ান্ট জাস্টিস’ অথবা ‘উই টু স্ট্যান্ড উইথ ইউ’। এই দীর্ঘ পদযাত্রায় সাজ্জাদ আর তুহিন এর সাথে সংহতি জানাবে বার্মিংহাম ও লুটনের গণজাগরণ মঞ্চ। তারপর তারা এসে মিশবে লন্ডনের রিজেন্সিপার্কের জনারণ্যে। অক্সফোর্ড এর বাঙ্গালিদের পক্ষ থেকে সংহতি জানিয়ে আমি ওদের ফোন করেছিলাম। বললাম তোমাদের অনেক কষ্ট হবে ? তুহিন বললো; একাত্তুরে মুক্তিযোদ্ধারা, আমাদের ভাই ভগ্নি পিতা মাতারা যে ত্যাগ আর কষ্ট স্বীকার করেছিলো তার কাছে এই তিনশো মাইলের পথ পরিক্রমার কষ্ট ও ক্লান্তি কিছুই না। আর সাজ্জাদ বললো; আমরা যুদ্ধপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে হাঁটছি, পুরোটাই আমাদের নিজস্ব ব্যাবস্থাপনায়। আমরা কারো কাছ থেকে কোন স্পন্সর নেইনি। তবে একটা দাবি আমাদের আছে সবার কাছে, আমাদের প্রতি একমাইল হাঁটার বিনিময়ে কমপক্ষে দশজন বাঙ্গালির উপস্থিতি চাই রিজেন্টস পার্কে ২৬ মার্চ দুপুর ১২টায়। আমরা নিশ্চয় দলে দলে সেদিন লন্ডনের রিজেন্টস পার্কে সমবেত হবো তোমাদের স্বাগত জানাতে। তোমরা যে এই প্রজন্মের অদম্য দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা।”