যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত-শিবিরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পর ঘরে ফেরার ঘোষণা

    0
    512

    সব হুমকি ও ভীতি উপেক্ষা করে ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের আজ শুক্রবারের সমাবেশে মানুষের ঢল নামে। সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত-শিবিরমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পর ঘরে ফেরার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। 

    আজ বেলা তিনটার পর আশুলিয়ায় জামগড়া এলাকায় ফ্যান্টাসি কিংডম পার্কের সামনে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
    জুমার নামাজের পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও বয়সের হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। শুরুতেই পবিত্র কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়। এরপর জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। স্লোগানে স্লোগানে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিসহ অন্যান্য দাবির কথা জানিয়ে দেন প্রতিবাদী জনতা।
    মুক্তিযুদ্ধকালে আশুলিয়া এলাকার শহীদ এবং তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
    সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ইমরান এইচ সরকার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, জাবির উপাচার্য আনোয়ার হোসেন, সাভারের সাংসদ তৌহিদ জং মুরাদ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বদিউজ্জামানসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা।
    আশুলিয়ার সমাবেশকে সফল করার জন্য ওই এলাকার সর্বস্তরের মানুষকে অভিনন্দন জানান ইমরান এইচ সরকার। তিনি বলেন, মানুষের অংশগ্রহণে সমাবেশ পরিণত হয়েছে মহাসমাবেশে। আজকের কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত হয়ে প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত-শিবিরের স্থান নেই।
    একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকার কথা স্মরণ করে ইমরান বলেন, আজও শ্রমজীবী মানুষ দিন-রাত শ্রম দিয়ে আমাদের দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখছে। গার্মেন্টস কারখানাসহ সব শ্রমজীবীর নিরাপত্তার দাবি জানান ইমরান।
    গার্মেন্টস কারখানার নারী শ্রমিকদের ভূমিকারও প্রশংসা করেন ইমরান। তিনি বলেন, এই শিল্পের শ্রমিকদের ৯০ ভাগই নারী। একাত্তরে আমাদের মা-বোনেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছেন। আজও একটি স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে ত্যাগ স্বীকার করছেন নারীরা।
    ইমরান বলেন, ‘এ দেশের নারীরা যখনই রাজপথে নামতে শুরু করেছেন। তখনই জামায়াত-শিবির প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছে, যাতে নারীরা কাজ করে দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে না পারেন। বাংলাদেশকে সমানের দিকে এগিয়ে নিতে হলে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ ভুলে সব পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারি। তাই যুদ্ধাপরাধী ও একাত্তরের নারী ধর্ষণকারীদের বিচার আজ সবার কণ্ঠে একটি সম্মিলিত দাবি।’
    ইমরান বলেন, ‘সারা দেশের মানুষের আজ একটা শপথ, সব শ্রেণী-পেশার মানুষের রক্তে কেনা বাংলাদেশের একটাই শপথ—যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে আমরা ঘরে ফিরব।’ 
    আজ বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে দুই যুবক মোটরসাইকেলে করে এসে আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় নারী ও শিশুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালের সামনে আবদুুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়কের ওপর দুটি ককটেল ফাটিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
    দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আশুলিয়ার ইউনিক এলাকায় চলন্ত বাস থেকে দুটি ককটেল ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। এতে মোজাহার (৩০) ও রজব (২৫) নামের দুই পথচারী আহত হন।
    এ ঘটনার পর মিরপুর ধউর থেকে বাইপাইল সড়ক পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

    একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন বিকেলে কাদের মোল্লাসহ একাত্তরের মানবতাবিরোধী সব অপরাধীর ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নেন সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। সেই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। আর বাংলাদেশের কণ্ঠস্বরে পরিণত হয় শাহবাগ। আজ সেই আন্দোলনের ৩৯তম দিন।