যশোরে জোড়া খুনের অভিযোগ পুলিশের দিকে

    0
    334

    “আইনি পদক্ষেপ নেবে পরিবার”

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৮মে,এম ওসমানঃ যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ইসমাইল শেখ ও তার বন্ধু আল-আমিনকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এ ঘটনার সঙ্গে কোতয়ালী থানার ওসিসহ কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা ও বরুণ কুমার তরফদার নামে এক ব্যক্তি জড়িত বলে দাবি করেছেন নিহত ইসমাইলের মামা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার রহমান দীপু।

    স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বুধবার দুপুরে তিনি এ দাবি করেন। তিনি ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, একই সঙ্গে পুলিশ ও বরুণের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

    লিখিত বক্তব্যে দেলোয়ার রহমান দীপু বলেন, ‘২৪ মে রাতে পুলিশ ইসমাইল শেখকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। সে সময় তার পরনে লুঙ্গি আর গায়ে গামছা ছিল। কিন্তু পরদিন দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে মোবাইল ফোনে পুলিশ জানায় হাসপাতালে লাশ আছে, শনাক্ত করে নিয়ে যান।’

    তিনি বলেন, ‘কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আককাছ আলী আমাকে জানান, ছিনতাই কালে গণপিটুনিতে আমার ভাগ্নেসহ দু’জন মারাত্মক আহত হন। পরে তাদের হাসপাতালে আনার পর মারা যায়। কিন্তু হাসপাতাল সূত্রে জানতে পারি, পুলিশ মৃত অবস্থায় তাদের গভীর রাতে হাসপাতালে আনে।’

    ছাত্রলীগ নেতা দীপু দাবি করেন, পুলিশের কথিত ডাকাতি বা ছিনতাইয়ের পর গণপিটুনির কোনো চিহ্ন লাশে ছিল না। বরং দু’টি দেহের গলার ওপরের অংশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো এবং ভারী কোনো অস্ত্র দিয়ে মেরে বা গুলি করে মাথার খুলি গুঁড়িয়ে দেওয়ার আলামত পাওয়া গেছে।

    তিনি বলেন, ‘মাস খানেক আগে মঞ্জুর রশিদ নামে আওয়ামী লীগের এক নেতা খুন হন। ওসির দাবি, এ হত্যা মামলার আসামি মাইমুন পুলিশকে ইসমাইলের বিরুদ্ধে ‘স্পর্শকাতর’ তথ্য দিয়েছে। তাই পুলিশ তাকে খুঁজছিল।’

    দেলোয়ার রহমান দীপু চ্যালেঞ্জ করে বলেন, ‘যেখানে কথিত ছিনতাই বা ডাকাতির কথা বলা হচ্ছে, সেখানকার কেউই সে দিন রাতে গণপিটুনি বা ছিনতাইয়ের কথা জানেন না। তা ছাড়া তার ভাগ্নে পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটার ব্যবসা করত। তাকে ধরতে চাইলে সেই দোকান বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বাড়ি থেকেই তাকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা যেত।’

    তিনি দাবি করেন, পুলিশ বরুণের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে এই জোড়া হত্যাকান্ড সম্পন্ন করে ছিনতাই বা ডাকাতির ‘নাটক’ করছে।

    কেন বরুণ পুলিশকে টাকা দেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি আমার ভাগ্নে বা আল-আমিন দু’জনের কারো এক জনের সঙ্গে বরুণ তরফদারের এক কলেজ পড়ুয়া আত্মীয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মুসলমান ছেলের সঙ্গে হিন্দু মেয়ের সম্পর্ক মানতে না পেরে এবং পথের কাঁটা সরাতে এ ধরনের পরিকল্পনা করা হয়ে থাকতে পারে বলে আমার ধারণা।’

    ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার রহমান দীপু ঘোষণা দেন, পুলিশ সুপার যদি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কোতয়ালী থানার ওসিসহ দায়ী পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে এই হত্যাকান্ডের অন্তরালের কাহিনীবের না করেন, তবে পুলিশ ও বরুণের বিরুদ্ধে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। সেই প্রক্রিয়া এ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শুরু হল।

    সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নিহত ইসমাইলের বাবা-মা, আল-আমিনের চাচা ও বড়ভাইসহ এলাকার কিছু লোক।

    সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কোতয়ালী থানার ওসি শিকদার আককাছ আলী বলেন, ‘পুলিশ স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায়। সেখান থেকে ওই দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।’

    প্রসঙ্গত, গত ২৪ মে গভীর রাতে যশোর উপজেলার তরফ নওয়াপাড়া গ্রামের সার্জেন্ট শেখ বিলাল উদ্দিনের ছেলে যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার বিভাগের প ম বর্ষের ছাত্র ইসমাইল শেখ (২১) ও আড়পাড়া ঘুরুলিয়া গ্রামের আবদুল আজিজের ছেলে ওয়েল্ডিং ব্যবসায়ী আল-আমিন (২৪) যশোর-ঢাকা মহাসড়কের হুদারাজাপুরে নৃশংসভাবে খুন হন।

    পুলিশ দাবি করে, মোটরসাইকেল ছিনতাই করার সময় ওই দুই যুবক গণপিটুনিতে মারাত্মক আহত হয় ও হাসপাতালে ভর্তির পর তারা মারা যায়। ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি ও দুটি চাকু উদ্ধার করা হয়।

    তবে হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক কাজল মল্লিক জানান, ঘটনার দিন রাতে মৃত অবস্থায় ওই দুই যুবককে হাসপাতালে আনা হয়।