মৌলভীবাজারে শ্রমিকনেতা আবুল কালাম এর শোকসভা

    0
    236

    হোটেল শ্রমিক আন্দোলনে তাঁর নাম অবীস্মরণীয় হয়ে থাকবে

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১১এপ্রিলঃ   মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ২৩০৫-এর উপদেষ্ঠা, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্ট-১৯৩৩ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন রেজিঃ নং বি-২০৩৭ এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সম্পাদক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখার সহ-সভাপতি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ সিলেট জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজি বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রসৈনিক শ্রমিকনেতা আবুল কালাম আজাদ-এর অকাল মৃত্যুতে মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। ১০ এপ্রিল মৌলভীবাজার পৌর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত বিকাল থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামাল। প্রয়াত আবুল কালাম আজাদ-এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালনের মাধ্যমে শোকসভার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়। ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়ার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শোকসভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতা মোঃ আরিফুল ইসলাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, ধ্রবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাদেক মিয়া। শোকসভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখার যুগ্ম-সম্পাদক রমজান আলী পটু, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন কুলাউড়া উপজেলা কমিটির সভাপতি মোঃ আলাউদ্দিন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক মোঃ আশিক খান, জেলা কমিটির দপ্তর সম্পাদক মাসুক মিয়া, সদও উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ আব্দুস ছালাম, মৌলভীভাজার জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ ২৪৫৩এর সভাপতি মোঃ সোহেল আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক কিসমত মিয়া।
    শোকসভায় বক্তারা বলে গত ৩ মার্চ দূরারোগ্য ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট ওসমানী হাসপাতালে মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। স্বল্পমজুরি, অমানুষিক পরিশ্রম ও সুষম খাবারের ঘাটতির কারণে তিনি খাদ্যনালীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর সারাদেশের তাঁর সহযোদ্ধাদের সর্বাত্মক আন্তরিক প্রচেষ্ঠা সত্ত্বেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তাঁর এই অকাল মৃত্যুতে আমরা হারালাম আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা ও সংগঠন-সংগ্রাম পরিচালনায় আমাদের একজন দক্ষ নেতা, অভিবাবক ও পরামর্শ দাতাকে। তাঁর মৃত্যু বৃহত্তর সিলেটের হোটেল শ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে অপুরণীয় ক্ষতি করেছে। তারপরও তাঁর মৃত্যু শোকতে শক্তিতে পরিণত করে তাঁর অগণিত সহযোদ্ধারা হোটেল শ্রমিক তথা শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির সংগ্রামকে অগ্রসর করে চলেছেন। ১৯৬৮ সালে ২৫ জুন আবুল কালাম আজাদ সিলেট শহরতলী চামেলীবাগ এলাকার একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও অভাব অনটনের কারণে ৫ম শ্রেণীর বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি, পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তাকে হোটেল শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করতে হয়। হোটেল শ্রমিকদের সীমাহীন পরিশ্রম, চাকুরির অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা, স্বল্প মজুরি এবং শোষণ-নিপীড়ণ, ব ণা তাঁর মনে নানা প্রশ্ন ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। এ থেকেই তিনি বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সংস্পর্শে এসে ১৯৯৩ সালে সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তুলতে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং  মৃত্যুকালেও তিনি এই সংগঠনের সভাপতি ছিলেন। তিনি ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করলেও সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে নিজ চেষ্ঠায় সাংগঠনিক ও দাপ্তরিক লেখালেখির কাজ দক্ষতার সাথে করেছেন।  তাঁর কার্যক্রম শুধু সিলেট জেলায় মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, সারাদেশের বিশেষ করে সিলেট বিভাগে হোটেল শ্রমিকদের সংগঠন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে তিনি উল্লেখ্যযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও ভূমিকার মাধ্যমে ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিস্ট্রার্ড ইউনিয়ন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের প্রত্যেকটি সম্মেলনে, বড় কোন কর্মসূচিতে তাঁর উপস্থিতি ও সুপরামর্শ ছিল অনিবার্য। তিনি একজন সুবক্তা ছিলেন, তাঁর সহজ-সরল যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনা শুধু হোটেল শ্রমিক নয় সাধারণ মানুষকে আকর্ষণ করত। প্রয়াত আবুল কালাম আজাদ আমৃত্যু হোটেল শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এমনি কি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পরও যতদিন সচল ছিলেন ততদিন সংগঠনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন। মহান মে স্ববেতনে সর্বাত্মক ছুটি কার্যকর, হোটেল সেক্টরে সরকার কর্তৃক নি¤œতম মজুরি ঘোষণা, রমজান মাসে বিনা বেতনে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, ঈদ উৎসব বোনাস আদায়, বেআইনী ছাঁটাই বন্ধসহ তাঁর নেতৃত্বে সিলেট বিভাগে অসংখ্য আন্দোলন সংগ্রামে হোটেল শ্রমিকরা দাবি আদায় করতে সমর্থ হয়। এছাড়াও অনেক স্থানীয় ও জাতীয় আন্দোলন সংগ্রামে তিনি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে গেছেন। তাঁর অসমাপ্ত সংগ্রাম অগ্রসর করে নেওয়ার দায়িত্ব তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে আমাদের পালন করতে হবে। প্রেস সংবাদ