মৌলভীবাজারে মেলার আড়ালে অশ্লীল নৃত্যের চিত্রঃএলাকাবাসীর স্মারকলিপি

    0
    229

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৪মে,আলী হোসেন রাজনঃ মৌলভীবাজারে বৈশাখী মেলা,বিজয় মেলা আর পাহাড়ী মেলার নামে চলছে জুয়া,লটারী,অশ্লীল নৃত্য,ভেরাইটিজ শো। জেলার পাঁচটি এলাকায় গত এক বছর ধরে চলছে এই সব অসামাজিক কার্যকলাপ।

    স্থানীয়দের বাঁধার মুখে ১০-১৫দিন বন্ধ থাকলেও স্থান এবং ব্যানার পরিবর্তন করে আবার শুরু হয় মেলার নামে অবৈধ কার্যকলাপ। এর ফলে ধংস হচেছ যুব সমাজ। ক্ষতিগ্রস্থ হচেছ নিম্ন আয়ের মানুষ। নষ্ঠ হচেছ এলাকার পরিবেশ। এই সব বন্ধে  জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী।

    তবে এ ব্যাপারে প্রশাসনের নিরবতায় উদ্বীগ্ন সচেতন মানুষ। জানা যায়,মৌলভীবাজার সাইফুর রহমান ষ্টেডিয়ামে মেলার নামে অসামাজিক কার্যকলাপ।

    গত পহেলা মে থেকে বৈশাখী মেলার নামে শুরু হয়েছে জুয়া,লটারী ও ভেরাইটিজ শো। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এই ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে গত মঙ্গলবার (১২-মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মৌলভীবাজার পৌর এলাকার ২৪৩জন নাগরিকের স্বাক্ষর দিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী।oslil nac sarpur 02 007

    এ সময় স্মারকলিপি গ্রহন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জহিরুল ইসলাম। স্মারকলিপিতে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান মিজান,পৌর ৩নং ওয়াড কাউন্সিলর মোঃ নাহিদ হোসেন, ১১নং মোস্তফাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ রুমেল আহমদসহ পৌর এলাকার রঘুনন্দনপুর, উত্তর জগন্নাথপুর, বনবিথি , উত্তর ও দক্ষিণ কলিমাবাদ, চুবড়া,সোনাপুর এলাকার বাসিন্দারা স্বাক্ষর করেছেন।

    এলাকাবাসীর পক্ষে স্মরকলিপি প্রদান করেন মাওলানা সাদিকুর রহমান,মো: লিয়াকত আলী,আব্দুর নুর,,হাজী তোয়াব উল্লা,সাজাদুর রহমান,সাইফুল ইসলাম জুনেদ,হুমাউয়ন কবির,সাহবুউদ্দিন আহমদ,মোঃ রাসেল আহমদ, নুরুল হুদা,শফি মাহমুদ,সুমন মিয়াসহ অনেকেই।

    এ সময় স্বারকলিপি দিতে আসা এলাকাবাসী জানান, ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম হযরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রঃ) স্মৃতি বিজরিত পূণ্যভূমি মৌলভীবাজার শহরের রঘুনন্দনপুর এলাকায় এম সাইফুর রহমান স্টেডিয়ামে বৈশাখী মেলার নামে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে।  এর প্রভাবে সামাজিক অবয় ঘটছে।oslil nac sarpur 02 005

    শহর ও শহতলীতে বাড়ছে চুরি ডাকাতি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড। বিপথগামী হ”েছ ভবিষ্যত প্রজন্ম। এক শ্রেনীর স্বার্থন্বেষী মানুষ সরকার দলের ছত্র ছায়ায় এই ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এর ফলে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমন আশংকাও করছেন সচেতন মানুষ।

    এ ব্যাপারে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান মিজানের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ হলে তিনি জানান, সংস্কৃতি  রার নামে অপসংস্কৃতির চর্চা হতে পারে না। আর যেভাবে বিভিন্ন স্থানে মেলার নামে অসামাজিক কার্যকলাপ হচেছ তা দেশ ও সমাজের স্বার্থে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। কোন সুস্থধারার মানুষ এ সব অপকর্ম সমর্থন করে না। মেলার নামে অশ্লিলতা বন্ধে গত ১০ মে জেলা আইন শৃংখলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে।

    স্মারকলিপির অনুলিপি কপি সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী এমপি,মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন,পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমদকে  প্রদান করা হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জহিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, স্মারকলিপি আমরা পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।

    এদিকে মৌলভীবাজার এম সাইফুর রহমান ষ্টেডিয়াম ছাড়াও বর্তমানে সদর উপজেলার শেরপুর, সাধু হাটি, কাগাবলা ইউনিয়নের আথানগীরি, রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নে চলছে মেলার নামে জুয়া, লটারী, অশ্লিল ন”ত্য, ভেরাইটিজ শো।

    উল্লেখ্য যে সচেতন মানুষ অভিযোগ করে বলেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাহাদুর পুর গ্রামে ডিসেম্বর–জানুয়ারী মাসে চলে যাত্রাগান,জুয়া আর অশ্লিল নৃত্যে । পরে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে যাত্রা প্যান্ডেলের আসর ভেঙ্গে দেয়। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর স্থান পরিবর্তন হয়।

    একই সাথে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারী-১৫ইং পর্যন্তমৌলভীবাজার সরকারী উচচ বিদ্যালয় মাঠে বিজয় মেলার নামে চলে লোভনীয় লটারী ,বাম্পার ও জুয়া। পরে এক পর্যায়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর প্রতিবাদে বন্ধ হয়।পরে শুরু হয় মৌলভীবাজার প্রেমনগর চা বাগানে পাহাড়ী মেলা। চলে মেলার নামে মাস ব্যাপী লটারী ও অসামাজিক কার্যক্রম।

    এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে তা বন্ধ হয় । মৌলভীবাজারের রাজনগরে এসএসসি  পরিক্ষার  সময় চলে লটারী ও যাত্রা। ফলে লটারীর মাইকিং- এর শব্দে “মাথায় নষ্ঠ মামা”  আর যাত্রা মঞ্চের হিন্দি -বাংলা কুরুচিপূর্ন গানের শব্দে মারাত্বক ক্ষতি   হয়েছে এসএসসি পরীাথীদের।

    প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে এসব এলাকায় যাত্রার নাম করে অবৈধ জুয়া ও লক্ষ লক্ষ টাকার লটারী বানিজ্য। রাত দিন রিকসা-ভ্যান,মিনি ট্রাকসহ অন্যান্য যাবাহনে গাড়ী-মটর সাইকেলযোগে মাইকিং করে লটারী বিক্রি। লক্ষ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষনা করে একটি প্রতারক চক্র প্রতিদিন এসব স্থান থেকে হাতিয়ে নিচেছ কোটি টাকা।

    বিভিন্ন মেলার স্লোগান নিয়ে চলা এসব মেলায় নামে মাত্র পণ্য সামগ্রীর ষ্টল থাকলেও এই সিন্ডিকেটের মুল লক্ষ্য লটারী ও জুয়ার নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া। প্রশাসনের কোন অনুমোদন ছাড়াই স্থানীয় ওই সব সিন্ডিকেট চক্র মাসের পর মাস এসব অপর্কম করলেও যেনো দেখার কেউ নেই। এদিকে ধারাবাহিকভাবে চলা অবৈধ এই কার্যকলাপের ফলে সাধারন মানুষ নিস্ব হওয়ার পাশাপাশি এলাকার তরুন ও যুব সমাজ জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপরাধে। প্রতিদিন লটারী ও জুয়ার টাকা জোগার করতে গিয়ে বাড়ছে চুরি,ছিনতাই। পাশাপাশি বসছে ওয়ানটেন,চরকি নামের জুয়ার বোর্ড।

    এসব জুয়ার বোর্ডে দীর্ঘদিন টাকা বিলিয়ে দিয়ে ক্রমাগত নিশ্ব হতে চলেছে সাধারন শ্রমজীবি খেটে খাওয়া মানুষ।

    অপরদিকে তার চেয়েও ভয়ংকর হয়ে দাড়িয়েছে ২০টাকা মূল্যের লটারীর ড্র টিকেট। পরীার সময়ে যাত্রা-জুয়া,অশ্লিল নৃত্য লটারী বিক্রি  বন্ধে স্মারক লিপি পেশ করেন স্থানীয় এলাকাবাসী। কিন্ত কোন ফল  পাওয়া যায়নি। এসব মেলা বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সরকারের প্রশাসনের কর্মকর্তারাও যেনো নির্বিকার। এসব অবৈধ কার্যকলাপের প্রশ্রয় দেয়ার কারণে সাধারন মানুষদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা।

    অনুসন্ধানে জানা যায়,রাজনগর নন্দীউড়া, মৌলভীবাজারের শেরপুর, আথানগীরি, মৌলভীবাজার ষ্টেডিয়ামে যাত্রার নামে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নৃত্য ও যাত্রা শিল্পীদের এনে রাত জুড়ে চলছে অশ্লীল নৃত্য ।

    এ সব স্থানে গভীর রাত পর্যন্ত বসানো হয় বিভিন্ন ধরনের জুয়ার জমজমাট আসর। স্থানীয় প্রভাবশালী কতিপয় অসাধু লোকদের পৃষ্টপোষকতায় ও ছত্রছায়ায় এসব অপকর্ম চলছে।

    তবে অনেকে মানসম্মানের ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচেছন না। ফলে ধারাবাহিক ভাবে চলা এসব অপকর্মের কোন প্রতিকার না হওয়ায় সাধারন জনমনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

    এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলে আশাবাদী মৌলভীবাজারবাসী।