মৌলভীবাজারে বন্যাঃশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ

    0
    503

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৮জুলাই,জহিরুল ইসলামঃ   রমজান মাসের ছুটির পর পাঠদান কার্যক্রম শুরুর দিকে বন্যা কবলিত হয় বিদ্যালয় গুলো।পানিতে তলিয়ে গেছে বিদ্যালয় রাস্তাঘাট,মাঠ-ঘাট,অফিস কক্ষ শ্রেণীকক্ষ সবই পানি বন্ধি। তাই বন্ধ রয়েছে পাঠদান কার্যক্রম।

    এখন ওই এলাকার বিদ্যালয় গুলোতে যেমন পানি। তেমনি বানের পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ি ঘর।বন্যার কারনে বিদ্যালয় গুলো বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বাড়িতেও পড়া লেখা চালিয়ে যেতে পারছেন না এজেলার অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। ফলে এ বছর চরম ক্ষতিগ্রস্থ তাদের শিক্ষা জীবন। বন্যার পানি দ্রুতগতিতে না কমায় র্তীব্র আকার ধারণ করেছে। এ নিয়ে চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
    বিশেষ করে এবছরের পিএসসি,জেএসসি,জেডিসি,দাখিল ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা পড়েছেন মহাবিপাকে। পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের সিলেবাস অনুযায়ী কোর্স শেষ হবে কি না এনিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।তাই চলমান বছরের চূড়ান্ত পরীক্ষায় আশানুরুপ ফলাফল নিয়েও তাদের ভাবনা। তাদের ফলাফল বির্পযয়ের এমন দুশ্চিন্তা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক,পরিচালনা কমিটির সদস্য ও অভিভাবকদের।

    তাছাড়া গত ৬ জুলাই বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা। কিন্তু ওই ক্ষতিগ্রস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীরা তাতে অংশ নিতে পারছে না। তবে স্কুল ভিত্তিক ভিন্ন প্রশ্নপত্র থাকায় তা পরবর্তিতে নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

    প্রায় ২ সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও বন্যার পানি না কমে তা দীর্ঘস্থায়ী রুপ নেওয়ায় তাদের এ দুশ্চিন্তা। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের দাবী বন্যা কাটিয়ে উঠলে বিদ্যালয়গুলো খোলার পর বাড়তি পাঠদানের মাধ্যমে এ ক্ষতি পোষিয়ে উঠা সম্ভব বলে তারা আশাবাদী।
    এ বছর উজানের পাহাড়ী ঢল আর টানা ভারী বর্ষণে জেলার হাওর ও নদী গুলোর পানি উপছে পড়ে দেখা দিয়েছে বন্যা। নদী ভাঙ্গন আর উত্তাল হাওর রাক্ষুসে হয়ে তাদের সবই গিলে খেয়েছে। দফায় দফায় বন্যায় সবই হারিয়ে তারা একেবারেই নি:স্ব। এ বছর জেলার হাওর ও নদীগুলোতে চৈত্রের অকাল বন্যার পর এনিয়ে ৩য় বারের মত দেখা দিয়েছে বন্যা। গেল দু’বারের বন্যা স্থায়ী না হলেও চলমান এ বন্যা স্থায়ী রুপ নিয়েছে। সকালে পানি কমে স্থানীয়দের আশা বৃষ্টির কারনে আবার রাতের দিকে পানি বেড়ে গিয়ে হতাশ করছে তাদের। স্থানীয় বাসিন্দাদের সুত্রে জানা যায় ২০০৪ সালের পর এমন ভয়াবহ বন্যা কবলিত হয়েছেন তারা। ওই বন্যায় এতো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও এবারের বন্যায় নানা ভাবে তারা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।

    অনুসন্ধানে জানা যায় চলমান বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন জেলার হাকালুকিও কাউয়া দিঘি হাওর তীরের কুলাউড়া,জুড়ী,বড়লেখা,রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসিন্ধারা। দফায় দফায় বন্যায় তাদের কৃষি ফসল ও মৎস্যখামার ক্ষতির পাশাপাশি এখন ৩য় দফা বন্যায় ডুবিয়ে দিয়েছে ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট,বাজার, ধর্মীয় উপসনালয় আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

    এদিকে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: আব্দুল আলিম জানান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ থাকায় পাঠদান কর্যক্রম থেকে বঞ্চিত রয়েছেন প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। বিকেল পর্যন্ত বন্যায় মৌলভীবাজারের হাকালুকি ও কাউয়াদিঘি হাওরের তীরবর্তী ৫টি উপজেলার ১৫২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় তলিয়ে গিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে বড়লেখায় ৭০টি, কুলাউড়ায় ৪৪টি, জুড়ীতে ২০টি রাজনগরে ১৪টি ও সদর উপজেলায় ৪টি বিদ্যালয় পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারনে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
    তিনি আরোও জানান, উজানের পাহাড়ী ঢল ও টানা বৃষ্টি না থামলে আরো ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে বড়লেখা, জুড়ী, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার ২২ টি স্কুলে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

    বন্যা হলে যেমন বিদ্যালয়ে পাঠদান বিঘ্নিত হয়,তেমনি মানবিক কারনে আশ্রয় কেন্দ্র খোলার জন্য বিদ্যালয় ছেড়ে দিতে হয়। বন্যার কারনে এ পর্যন্ত ব্যাহত হচ্ছে প্রায় ৩১ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম।

    মৌলভীবাজর জেলা (মাধ্যমিক) শিক্ষা কর্মকর্তা এ এস এম আব্দুল ওয়াদূদ  আমার সিলেট প্রতিনিধিকে জানান, বন্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসা পর্যায়ের মোট ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।জেলার বড়লেখা উপজেলায় ২০টি, কুলাউড়ায় ১২টি ও জুড়ীতে ১৬ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যা কবলিত হওয়ায় এখন পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্যা কবলিতদের জন্য জুড়ী উপজেলায় ৪টি, বড়লেখায় ২টি ও কুলাউড়ায় ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।সব মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম বন্যার কারনে ব্যাহত হচ্ছে ।

    জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা মুঠোফোনে জানিয়েছেন, বন্যায় পানিতে তলিয়ে যাওয়া বিদ্যালগুলোর ভবন ও অফিস কক্ষের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া অনেক বিদ্যালয় এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে আর পানি বাড়লে এগুলোও তলিয়ে যাবে।

    এছাড়া অনেক বিদ্যালয়ের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম চালু হলেও সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম।