মৌলভীবাজারের জুড়ীতে রাত পোহালেই ইউপি নির্বাচন,সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

0
485
মৌলভীবাজারের জুড়ীতে রাত পোহালেই ইউপি নির্বাচন,সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

এম এম সামছুল ইসলাম, জুড়ী,মৌলভীবাজারঃ  মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের রাত পোহালেই বৃহস্পতিবার ১১ নভেম্বর ২০২১ ইং ইউপি নির্বাচন, কে হাসবে বিজয়ের হাসি ? ইতিমধ্যে প্রচারণার কাজ শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা শেষ হলেও ভোট গ্রহণ ও ফলাফল ঘোষণা শান্তিপূর্ণভাবে যেন হয়, সেটাই ভোটারদের প্রত্যাশা। তবে অবাধ, সুষ্ট ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৬০৭, পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নে ১৬ হাজার ৩০, জায়ফরনগর ইউনিয়নে ২৮ হাজার ৫৭৬, সাগরনাল ইউনিয়নে ১৮ হাজার ৮৪৪ এবং গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে ১৫ হাজার ৮২৪ জনসহ মোট ৯২ হাজার ৮৮১ জন ভোটর রয়েছেন।

এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় ভাবে ৫ ইউনিয়নে ৫ জন প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক দিলেও তিন ইউনিয়নে চার জন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। দল থেকে তাদের বহিস্কার করা হয়। এখানে আওয়ামী লীগ দলীয় লোকজন দিনে নৌকা রাতে অন্য প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের পুত্র জাকির হোসেন ঝুমন নিজের ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি উল্লেখ করে ওদেরকে ঠিক হয়ে যাবার কঠোর হুসিয়ারী দিয়েছেন। বিএনপি দলীয় ভাবে নির্বাচনে না এলেও ৫ ইউনিয়নে বিএনপির বিভিন্ন পদধারী ৭ জন প্রার্থী নির্বাচন করছেন। যদিও দল তাদের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। উপরন্তু দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।

মোহাম্মদ জায়েদ আনোয়ার চৌধুরী জায়ফরনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রতীকের একক প্রার্থী। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী নির্বাচনী সকল সভায় বক্তব্য রাখেন। কিন্তু মাট পর্যায়ে সেরকম কোন ভূমিকা না রাখার অভিযোগ রয়েছে। প্রার্থীর বিরুদ্ধেও কর্মীদের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এ ইউনিয়নের সাবেক ২৬ বছরের চেয়ারম্যান ও জুড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক আব্দুল খালিক চৌধুরীর পুত্র জায়েদ দলীয় প্রতীক এনে চমক দেখালেও ভোটের মাঠে তেমন প্রভাব দেখাতে পারেননি। এখানে বিএনপি দলীয় বর্তমান চেয়ারম্যান মাছুম রেজা (ঘোড়া) প্রতীকে নির্বাচন করছেন। নিজের ব্যক্তিত্বগুণে ইউনিয়নে নিজের ভিত্তি বেশ মজবুত করতে সক্ষম হয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মক্তদীর এর পুত্র।

এদিকে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান (আনারস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। নতুন প্রার্থী হিসেবে তিনি বেশ সাড়া ফেলে প্রতিদ্বন্ধীতায় উঠে এসেছেন। এ ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রার্থী মো: সোহেল আহমদ (হাতপাখা) নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন।

পশ্চিমজুড়ী ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান শ্রীকান্ত দাশ আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থী হলেও তার গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আনফর আলী। (ঘোড়া) প্রতীকে তিনি আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন। এখানে স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মইন উদ্দিন মঈজনের পুত্র মামুনুর রশীদ পিতার ঐতিহ্য ধরে রাখতে আনারস প্রতীকে বিজয়ের স্বপ্ন দেখছেন। অপর স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী মো. হেলাল উদ্দিন (অটোরিক্সা) প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন।

পূর্বজুড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল কাদির। নির্বাচনে এ নতুন প্রার্থীর সামনে বাঁধার প্রাচীর আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী। বর্তমান চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন আহমদ (আনারস) প্রতীকে নিজের ও পরিবারের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার ধারে কাছে রয়েছেন। এ ইউনিয়নে আরেক নতুন প্রার্থী আওয়ামী লীগের আরেক বিদ্রোহী রুয়েল উদ্দিন। (ঘোড়া) প্রতীকে অপর দুই প্রার্থীর ঘুম হারাম করে দিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের ভ্রাতুস্পুত্র ফ্রান্স প্রবাসী রুয়েল। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জাবের উদ্দিন (মোটরসাইকেল)।

সাগরনাল ইউনিয়নে (ঘোড়া) প্রতীকে স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এমদাদুল ইসলাম চৌধুরী, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল নুর এবং স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী শাহিন আহমদ রুলন (আনারস) প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এ উপজেলার পূর্বজুড়ী, পশ্চিম জুড়ী, গোয়ালবাড়ি ও সাগরনাল ইউনিয়ন চা বাগান অধূষ্যিত। এখানে চা বাগানের ভোটের উপর জয়-পরাজয় অনেকটা নির্ভর করে। যদিও চা শ্রমিকদের ভোট সব সময় নৌকার পক্ষে যায়। তবুও স্থানীয় নির্বাচনে অনেক প্রার্থী বাগানের ভোটে ভাগ বসান।গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ মনোনীত (নৌকা) প্রতীকের প্রার্থী শাহাব উদ্দিন আহমদ। সাবেক চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমদের পুত্র, ৪ বারের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন নির্বাচনের শুরু থেকেই বেশ বেকায়দায় রয়েছেন। তার প্রায় বিশ বছরের সাজানো বাগান তছনছ করে দিচ্ছেন তারই গোত্রীয় চাচাতো ভাই স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী মো. আব্দুল কাইয়ুম। নির্বাচনে নতুন মুখ কাইয়ুম (ঘোড়া) নিয়ে হেলে দুলে চলছেন। সেই সাথে (ঢোল) প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী মো. সবুজ মিয়া শাহাব উদ্দিনের পথ আগলে ধরার চেষ্টা করছেন। এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থী মো. মোশতাক খাঁন (চশমা) প্রতীকে সবার ভোটে ভাগ বসাচ্ছেন। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ওয়াছির উদ্দিন আহমদ (আনারস) প্রতীক এবং (রজনীগন্ধা) প্রতীকে সুহেল আহমদ স্বতন্ত্র প্রার্থী।

এ চার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ প্রার্থী চা শ্রমিকের ভোট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারলে বিজয়ের স্বাদ পেতে পারেন বলে ভোটারদের ধারণা।