মোদির কাছে গণতন্ত্র অনুপস্থিতির অভিযোগ বিএনপির

    0
    222

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৭জুন: ঢাকা সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে বহুল আলোচিত একান্ত  বৈঠকটি  আজ (রোববার) বিকেলে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে  অনুষ্ঠিত হয়েছে।

    ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির’ কথা গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রহীনতা এ অঞ্চলের জন্য অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

    বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল আজ রোববার বিকেল চারটায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করে। এর মধ্যে ১২ মিনিট খালেদা জিয়া ও মোদি একান্ত আলাপ করেন। বৈঠক শেষে হোটেলের লবিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, অত্যন্ত আন্তরিক ও ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

    পরে বৈঠক সম্পর্কে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

    বৈঠকে কি আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে আবদুল মঈন খান বলেন, ‘আমরা দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রতিটি বিষয় উল্লেখ করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আজ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি। বাংলাদেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, তাহলে কেবল বাংলাদেশ নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের জন্য অস্থির পরিবেশের সৃষ্টি করতে পারে।’

    মঈন খান বলেন,‘আমরা গ্লোবাল ভিলেজে বাস করি। এখানে কেউ যদি মনে করে নিজের পরিমণ্ডলে শান্তশিষ্ট হয়ে ঘুমিয়ে থাকব, অন্য কেউ এখানে সমস্যা সৃষ্টি করবে না। এটা হতে পারে না।’

    বিএনপির এই নেতা বলেন,‘আজ বাংলাদেশে বিরোধী দলের ওপর অত্যাচার, আমাদের মহাসচিব, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের হাজার হাজার কর্মীদের অত্যাচার-অনাচার করা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো গণতন্ত্রের অনুপস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আপনাআপনি উঠে এসেছে।’

    মঈন খান বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিত্বহীন সরকার দেশের উন্নয়নের যেসব কথা বলছে তা অর্থহীন, যদি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি না থাকে। তাই জনগণের কল্যাণ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এখন গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা। আমরা এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছি।’

    মঈন খান বলেন, ১৬ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং বাংলাদেশ মধ্যম বা উচ্চ আয়ের দেশ হতে হলে মানুষকে কথা বলার, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।

    বিএনপির প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ।

    ওদিকে, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদের সাথে বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশকে আরও ধৈর্য ধরতে হবে। তিনি বলেছেন, দুই দেশ ঐক্যবদ্ধ ও আন্তরিক প্রচেষ্টা চলাতে পারলে পর্যায়ক্রমে সব সমস্যার সমাধান হবে।

    এর আগে দুপুরে বঙ্গভবনে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়িকে দেয়া স্বাধীনতা সম্মাননা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন,  বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক রক্তের বাঁধনে গড়া; এই সম্পর্ক কোনো কূটনীতিতেই ছিন্ন হবে না।

    বিএনপি’র সাথে মোদির বৈঠকের তাৎপর্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক রেডিও তেহরানকে বলেন বিএনপি অত্যন্ত  স্থুলভাবে  ভারত-তোষণ নীতি অবলম্বন করতে গিয়ে তার পূর্বঘোষিত অনেক বক্তব্য থেকে সরে এসেছে।

    ওদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা জোনায়েদ সা’কী ঢাকার বাইরে থেকে জানান, মোদির আগমন উপলক্ষে তাদের পূর্ব-ঘোষিত সমাবেশ করতে দেয়নি সরকার। গতকাল থেকেই  তোপখানা রোডের  বামপন্থী দলগুলোর অফিস পুলিশ ঘিরে  রাখে এবং জোটের সমন্বয়ক মোশরেফা মিশুকে বাসায় গৃহবন্দি করে রাখে।

    মোদির বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ দু:খ প্রকাশ করে বলেন, সরকার বা বিরোধী নেতারা ভারতে মুসলমানদের উপর পরিচালিত  নির্যাতন নিপীড়নের  বিয়য়টি একেবারেই এড়িয়ে গেলেন। নিন্দা তো দূরে থাক, উদ্বেগ প্রকাশও করলেন না।

    উল্লেখ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় অন্তত ২২টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই এবং এ সংক্রান্ত নথি বিনিময় হয়েছে।

    শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে দু’দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সব চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক সই করেন।ইরনা