আমারসিলেট24ডটকম,২৭এপ্রিলঃ মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন রেজিঃ নং চট্টঃ ২৩০৫-এর উদ্যোগে মহান মে দিবসে পূর্ণ দিবস স্ববেতনে ছুটি, ৮ ঘন্টা কর্মদিবসসহ শ্রম আইন বাস্তবায়ন ও বাজার দরের সাথে সঙ্গতি রেখে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও শ্রীমঙ্গলে শ্রম আদালত স্থাপনের দাবিতে ২৬ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল ৫ টার সময় সংগঠনের চৌমুহনাস্থ দলীয় কার্যালয়ে জমায়েত হয়ে এক বিক্ষোভ মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে কুসুমবাগ পয়েন্টে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন রেজিঃ নং- বিঃ ২৩০৭ এর কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন কুলাউড়া উপজেলা কমিটির সভাপতি মোঃ ছায়েদ মুন্সী ও পৌর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশিক খান, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন শ্রীমঙ্গল উপজেলা কমিটির সভাপতি কুটি মিয়া, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এখলাছুর রহমান সোহেল প্রমূখ।
সমাবেশ বক্তারা বলেন মহান মে দিবস উপলক্ষে ১ মে সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণী ছুটি ভোগ করে থাকেন। বাংলাদেশের সর্বস্তরের সরকারীÑবেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা ছুটি ভোগ করলেও আমরা হোটেল শ্রমিকরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছি। মে দিবসে ছুটি প্রদানের জন্য আমরা দীর্ঘদিন থেকে দাবী জানিয়ে আসছি। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নিরবতা পালন করে আসছেন। এমন কি শ্রমিক সংহতি দিবস পালনেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বাঁধা নিষেধ ও অনুষ্ঠানে যোগদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকেন। শুধু তাই নয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর হোটেল সেক্টরে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য নি¤œতম মজুরীর গেজেট প্রকাশ করলেও অদ্যাবধি তা কার্যকর করা হয়নি। শ্রম আইনে পরিচয় পত্র, নিয়োগপত্র, সার্বিসবুক, সাপ্তাহিক ছুটি, অসুস্থতা ছুটি, অর্জিত ছুটি, উৎসব ছুটি ও উৎসব বোনাস প্রদানের বিধান থাকলেও মালিকরা আইনের কোন তোয়াক্কা না তাদের ইচ্ছে মতো শ্রমিকদের উপর শোষণ নির্যাতন চালাচ্ছেন। হোটেল শ্রমিকরা দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন, যার কারণে হোটেল শ্রমিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। সমাবেশে বক্তারা মে দিবসে স্ববেতন ছুটি, পরিচয় পত্র, নিয়োগ পত্র, ৮ ঘন্টা কর্ম দিবসসহ শ্রম আইন বাস্তবায়ন, সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি কার্যকর, শ্রীমঙ্গলে স্থায়ী শ্রম আদালত চালু ও শ্রমিকদের জন্য রেশনিং চালুর দাবি জানান। অন্যথায় সারাদেশের হোটেল শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি বাস্তবায়ন করবে। সমাবেশে বক্তারা গত ২৫ এপ্রিল হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ইউনিয়ন ছাতক উপজেলা কমিটি আয়োজিত মিছিল-সমাবেশে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও বিচার দাবি করেন।
অপরদিকে মহান মে দিবস পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা শাখা বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মে মাসব্যাপী কর্মসূচি ১ মে মহান মে দিবস পালনের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে। ১ মে সকাল ১০ টায় ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ জেলা কমিটির উদ্যোগে মৌলভবাজার পৌর মিলনকেন্দ্রে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সারা শহরে লাল পতাকার বর্ণাঢ্য র্যালী বের হবে। ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের কর্মসূচিতে হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন, স’মিল শ্রমিক সংঘ, চা শ্রমিক সংঘ, রিকশা শ্রমিক সংঘ স্ব স্ব ব্যানার নিয়ে অংশ গ্রহণ করবে। এছাড়া ১ মে ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের বেসিক ইউনিট হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন কুলাউড়া উপজেলা কমিটি কুলাউড়া পাবলিক লাইব্রেরীতে এবং স’মিল শ্রমিক সংঘ বড়লেখা উপজেলা কমিটি আলোচনা সভা ও লাল পতাকার র্যালী করবে। মাসব্যাপী কর্মসূচিতে আগামী ৯ মে শ্রীমঙ্গল, ১৬ মে সদর উপজেলা, ৩০ মে কুলাউড়ায় স’মিল শ্রমিক সংঘ, ১১ মে চা শ্রমিক সংঘ এবং মে মাসের মধ্যে রিকশা শ্রমিক সংঘ ও হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটি মে দিবসের আলোচনা সভা করবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা শাখার অন্যতম নেতা মোঃ মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে চৌমুহনাস্থ কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় মে দিবসের উল্লেখিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের জেলা সম্পাদক রজত বিশ্বাসের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সাধারণ সম্পাদক এখলাছুর রহমান সোহেল, রিক্সা শ্রমিক সংঘের জেলা সভাপতি সোহেল আহমেদ, স’মিল শ্রমিক সংঘের জেলা সভাপতি মোঃ আরজান আলী, কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ জেলা সাধারণ সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এনডিএফ কমলগঞ্জ উপজেলা কমিটির অন্যতম নেতা মৃগেন চক্রবর্তী প্রমুখ। সভায় বক্তারা মহান মে দিবস সর্বস্তরের শ্রমিকরা যাতে সর্বাতœকভাবে পালন করতে পারে সেজন্য ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে হোটেল-রেস্টুরেন্ট, দোকান প্রতিষ্ঠান, পরিবহন, দর্জি, স’মিল, নির্মাণ,স্বর্ণকার ইত্যাদি শ্রমিকদের স্ববেতন ছুটি প্রদান করার জন্য মালিক ও সকারের প্রতি জোর দাবি জানান।