“মৃত্যুপুরীর গল্প” স্পেন থেকে ইমরান বিন বদরী

    0
    257

    অনিশ্চিত জীবনের সবচেয়ে কঠিন সত্যটি হচ্ছে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জয়ী হওয়া। এই এক দেড়মাসে দেখেছি খোদার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবজাতির কী করুণ পরিণতি। দেখেছি কতোটা আতঙ্ক আর অসহায়ত্বের মাঝে সময় পার করেছে । লাশের মিছিলে না যেতে কতইনা চেষ্টা চালিয়েছে মানুষ। তবুও যেতে হয়েছে। আসলেই এটি এক অবর্ণনীয় কষ্টের অভিজ্ঞতা।

    হ্যাঁ, আজ আমি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথাই বলছি। চীনের সেই ভাইরাস যুক্তরাষ্ট্র সহ ইউরোপের দেশগুলোকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে। থামছেনা মৃত্যুর করুণ মিছিল। প্রাণঘাতী ভাইরাসে তুলনামূলক মৃত্যুর হার কমে আসলেও এটাকে আমি মোটেও কম বলছিনা। এখনো দু’চারশ মানুষ পরপারে পাড়ি জমাচ্ছে।

    স্পেনে গত ২৬ তারিখ প্রায় ছয় সপ্তাহ গৃহবন্দী থাকার পর ১২ বছরের নিচে বাচ্চাদের শর্তসাপেক্ষে বাইরে হওয়ার অনুমতি দিয়েছে সরকার। স্কুল কলেজ সবি বন্ধ রাখা হয়েছে। ভেবেছিলাম হয়তো এ মহামারী বিদায়ের পথে! কিন্তু না, এখনো আশঙ্কাজনক হারে মৃত্যুর মিছিল থামছেনা। প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাড়ে ২৪ হাজারেরও অধিক প্রাণ হারিয়েছে। প্রতিদিন দু’তিন হাজার মানুষ নতুনকরে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ যেন এক মৃত্যুপুরীতে। বসবাস। তবুও আল্লাহর রহমত থেকে বিন্দুমাত্র নিরাশ হয়নি। কিছুকিছু ক্ষেত্রে শীতল করলেও স্পেনের লকডাউন কিন্তু এখনো উঠে নেয়নি । এতো কিছুর পরেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আমাদের বাংলাদেশীরা মোটামুটি ভালোই আছেন। অনেক স্বদেশী ভাই এই মারাত্মক মহামারীর স্বীকার হয়েছেন এবং হচ্ছেন। অনেক ভাই আছেন যাদের কাগজ নেই মূলত তারাই বেশী ভুক্তভোগী। বিদেশের মাটিতে কর্মহীন এ কঠিন পরিস্থিতিতেও সাম্যের বন্ধনে বাংলাদেশীরা বিন্দুমাত্র পিছু হটেনি। শক্তিকে মুক্তির পথে রুপান্তরিত করে এগিয়ে চলেছে।

    দক্ষিণ ইউরোপের ইসলামি ঐতিহ্যের আইবেরীয় দেশ স্পেন শীতের বিদায়ে প্রকৃতি অপরুপ সাজে আজ সজ্জিত, কিন্তু সে সৌন্দর্য দেখার যেন কেউ নেই। রাস্তারধারে শোভা পাচ্ছে অগণিত নাম না-জানা ফুলের মিলন মেলা। আলোয় জ্বলজ্বল করা নীল আকাশে চাঁদের উঁকি দেয়া দৃশ্য উপভোগের সেই ইচ্ছেটুকুও মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। আজ বায়ুমন্ডলে কার্বনডাইঅক্সাইডের রাজত্ব নেই, ফলে চোখ তার নিজস্ব দূরসীমারেখাও খুঁজে পেয়েছে। এতো কিছু পরিবর্তনের মাঝেও মানুষ আজ শঙ্কিত কারণ এখনো আশঙ্কামুক্ত নয় স্পেনের পরিস্থিতি। বাকীটা আল্লাহ তায়া’লা দয়ার উপর ছেড়ে দিয়েছি। তিনিই সবাইকে এ মানব বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবেন।

    লেখকঃ ইমরান বিন বদরী।
    ৩০/০৪/২০২০ মাদ্রিদ, স্পেন।