মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে নিজামীর আপিলের রায় ৬ জানুয়ারি

    0
    198

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৮ডিসেম্বরঃ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর আমীর মতিউর রহমান নিজামীর আপিলের রায়ের দিন ৬ জানুয়ারি ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

    মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার এ দিন ধার্য করেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

    আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের দেয়া যুক্তিখণ্ডন করেন নিজামীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। আপিলের শুনানি শেষে নিজ কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মাহবুব হোসেন দাবি করেন, এ মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছিল না।

    তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় যাঁরা প্রধান আসামি ছিলেন, তাঁদের বিচার হচ্ছে না। যাঁরা তাঁদের সহযোগী ছিলেন বা সমর্থন করেছেন, তাঁদের বিচার করা হচ্ছে। মতিউর রহমান নিজামী ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন না। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল না। আপিল বিভাগে আশা করি তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।’

    তিনি আরও বলেন, বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনায় নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও সাক্ষীদের বক্তব্যে অসামঞ্জস্যতা পাওয়া গেছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ড. আলীমের স্ত্রী শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী দুটি বই লিখেছেন। এর মধ্যে একটি হলো ‘একাত্তরে শহীদ ডা. আলীম’। এ বইয়ে নিজামী বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত ছিলেন বলে শ্যামলী নাসরিন উল্লেখ করেননি। কিন্তু ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেয়ার সময় নিজামী বুদ্ধিজীবী হত্যায় উসকানি দিয়েছেন বলে সাক্ষ্য দেন তিনি। এতে করে তাঁর দুই রকম বক্তব্য পাওয়া গেল।

    খন্দকার মাহবুব বলেন, বুদ্ধিজীবী আজহারুল ইসলামের স্ত্রী সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন শাহরিয়ার কবিরের কাছে। সেখানেও নিজামী বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেননি। তাই সরাসরি মতিউর রহমান নিজামী যেহেতু জড়িত ছিলেন না, তাই তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া যাবে না।

    তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতকে বলেছি, আদালত যদি প্রসিকিউশনের বক্তব্য বিশ্বাসও করে, তাহলেও তাঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া যাবে না। আমরা আদালতের কাছে ন্যায় প্রত্যাশা করি।’

    অন্যদিকে, নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

    গতকাল রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এটা বিশেষ আইনের মামলা। সাধারণ আইনের নয়। তাই সাক্ষী কী দেখলো কি-না, তা বিবেচ্য নয়। আইনে অপরাধ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার কথা বলা হয়েছে। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, মৃত্যুদণ্ড আছে বলে দিতে হবে এমনটি নয়। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে অন্য যেকোনো দণ্ড দেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

    এর আগে গত ৩০ নভেম্বর এবং ১ ও ২ ডিসেম্বর নিজামীর পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এর পর ৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আজ আসামিপক্ষের পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন ও রাষ্ট্রপক্ষের পাল্টা যুক্তি খণ্ডন শেষ হল। চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নিজামীর আপিল শুনানি শুরু হয়।

    মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে আনা হত্যা, বুদ্ধিজীবীদের গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়। এ সব অভিযোগে ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ রায়ের পর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ২৩ নভেম্বর মতিউর রহমান নিজামী আপিল করেন। মোট ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে এ আপিল করা হয়। ছয় হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার আপিলে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চান তিনি।ইরনা