মুক্তিযুদ্ধে আলেম ওলামাদের অবদান ও তাঁদের উপর নির্যাতন

    0
    381

    মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত অনেক এলাকায় উলামায়ে কেরামের অবদান অনস্বীকার্য। দেশে ওলামায়ে কেরামদের যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সহযোগিতা ও ভালবাসা দিয়ে নিজ নিজ এলাকায় আজও উজ্জ্বল ভাস্কর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত তাদের অনেকেই লিখিত অনেক ইতিহাসের পাতায় অনুপস্থিত থাকলেও এদেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। নিম্নের লেখাটি একটি প্রকাশনা থেকে সংগ্রহীত যা হূবহ উল্লেখ করা হল “দেশের সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং আত্নত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশ। অনেক আলেম ও ইসলামী চিন্তাবীদ এ যুদ্ধে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসানি, মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী, মাওলানা আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ জালালাবাদী,মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা আব্দুর রব, মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান, মাওলানা আব্দুস সোবহান, মুফতি আব্দুস সালাম, মাওলানা আবু ইসহাক, মাওলানা আব্দুল কালাম, মাওলানা কাজী আবু ইউসুফ, মাওলানা দলিলুর রহমান, মাওলানা মতিউর রসুল প্রমূখ। পাকিস্তান সেনাবাহিনি এদেশের আলেম সম্প্রদায়কেও রুদ্ররোষ থেকে রেহাই দেয়নি। বিভিন্ন স্হানে নির্বিচারে আলেমদের হত্যা করা হয়েছে। নিম্নে কয়েকটি সংক্ষিপ্ত ঘটনা বর্ণিত হলোঃ—-

    ১) ১৯৭১ সালের ১৮ই জুন শুক্রবার পাকিস্তান সেনাবাহিনি নওগাঁ জেলার দামুইরহাট থানার পাগলা দেওয়ান মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের মসজিদ থেকে বিতাড়িত করে। পরে মুসল্লিদের গলা কর্তন করে হত্যা করা হয়। সেদিন ৪০জন মুসল্লি শহীদ জন।

    ২) ১৯৭১ সালের ১৮ জুলাই ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার ৭ নম্বর মল্লিকবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর বয়টাপাড়া ভান্ডার মসজিদের পেশ ইমাম ছফির উদ্দিন মুন্সীসহ পরিবারের ৫জন সদস্যকে পাকিস্তান সেনাবাহিনি গুলি করে হত্যা করে তাদের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলে।

    ৩) ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার মালাকারটোলার বাসিন্দা হারুন-অর-রশীদ ১৯৭১ সালে লোহারপুর জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন কর্মরত ছিলেন। পাশাপশি তিনি ছাত্রদেরকে কুরআন ও ধর্মীয় শিক্ষা পৃরদান করতেন। মাওলানা হারুন-অর-রশীদ সর্বদা একটা লাঠি ভর করে হাঁটতেন বলে সূত্রাপুর এলাকাবাসীর নিকট তিনি লাঠিওয়ালা মাওলানা বলে পরিচিত ছিলেন। ২৬শে মার্চ সকাল ৮টায় পাকিস্তান সেনাবাহিনি সূত্রাপুর থানার নিকট লালাকুঠির সামনে মাওলানা হারুন-অর-রশীদকে গুলি করে হত্যা করে। এলাকাবাসী ও তাঁর পরিবারের সূত্র থেকে জানা যায়, ২৬শে মার্চ সকাল ৮টায় সূত্রাপুরের লালকুঠি রাস্তার সম্মুখে তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায়।

    ৪) ঢাকার অদূরে পূর্বদিকে বালু নদীর নিকট নিম্নাঞ্চলে ১৯৭১ সালে ২১ শে নভেম্বর ইদুল ফিতরের দিন গোড়ানের পূর্বদিকে জাউলা পাড়া ছাপরা মসজিদে সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনি ও তাদের দোসররা গণহত্যা সংঘটিত করে। অভিযানে তারা ১০জন মুসল্লিকে হত্যা করে মুসল্লিদের মরদেহ দাফন ব্যাতিত প্বার্শবর্তী নদীতে ফেলে দেয়।

    ৫) ভৈরব উপজেলার মানিকদী গ্রামে মধ্যপাড়া হাজিবাড়ি মসজিদে আশ্রয়রত ৪০জন মানুষকে হত্যা করা হয়।

    ৬) সিলেটের বিয়ানীবাজারের নয়াগ্রামের ইমাম মাওলানা মকদ্দস আলীকে এলাকার রাজাকারদের সহায়তায় ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনি। তারপর তাদের ছাউনির কাছে বটগাছে ঝুলিয়ে তাঁর উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। গাছে ঝুলন্ত অবস্হায় পাকিস্তান সেনাবাহিনির নির্দয় প্রহারে ১৯৭১ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর মাওলানা মকদ্দস আলী শহীদ হন।শাহাদাতের সময়বতার বয়স ছিল ৫৫ বছর। তা ছাড়া ২৬শে সেপ্টেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনি এবং তাদের দোসররা এলাকার আরও ৬জন নিরীহ গ্রামবাসিকে হত্যা করে। নয়াগ্রামের আব্দুন নূর জমিদারের পুকুরপাড়ে একই গর্তে সবগুলো লাশ পুঁতে ফেলা হয়।পরবর্তীকালে গ্রামবাসীরা লাশগুলো গণকবর থেকে উত্তোলন করে স্ব স্ব বাড়ির প্রাঙ্গণে সমাহিত করেন। মাওলানা মকদ্দস আলাীর অপরাধ ছিল তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনি ও তাদের দোসরদের অনৈতিক কর্মকান্ডকে সমর্থন করেননি। আর এ জন্যই তাঁকে এ নির্মম পরিণতি বরণ করতে হয়েছিল।

    ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এদেশের জনগণের উপর পাকিস্তান সেনাবাহিনি এবং তাদের এদেশীয় সহযোগী তথাকথিত মৌলবাদী সম্প্রদায়িক জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলাম প্রভৃতি দল ইসলামের নামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর নৃশংসতম গণহত্যা ও নারী নির্যাতনসহ মানবতা র বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ সংঘটিত করে।”

    তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি,ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত পুস্তক থেকে সংগ্রহীত। সংগ্রাহক শেখ মুহাম্মদ খাইরুল আমিন।