আমারসিলেট24ডটকম,২৮মার্চঃ মিসরে নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল সেদকি সোবহি শপথ নিয়েছেন। তিনি একই সঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে।প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য গত বছরের সেনা অভ্যুত্থানের মূল হোতা ও সাবেক সেনাপ্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি পদত্যাগ করার একদিন পর সোবহি এসব দায়িত্ব নিলেন। অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আদলি মানসুর গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রীসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে জেনারেল সেদকি সোবহির নিয়োগ অনুমোদন করেছেন। এছাড়া, জেনারেল মাহমুদ হেগাজিকে মিসরের সেনাবাহিনীর নয়া চিফ-অব-স্টাফের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। জেনারেল হেগাজির মেয়ে হচ্ছেন জেনারেল সিসির পুত্রবধূ।
উল্লেখ্য,পদত্যাগকারী স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল সিসি বৃহস্পতিবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে বেসামরিক পোশাকে অংশ নেন বলে জানা গেছে। গত বছরের জুলাই মাসে তিনি মিসরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাকে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। এর প্রায় এক বছর আগে প্রেসিডেন্ট মুরসি জেনারেল সিসিকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। মুরসিকে অবৈধভাবে ক্ষমতাচ্যুত করার পর তার দল ইখওয়ানুল মুসলিমিন ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায়। এ সময় জেনারেল সিসির নির্দেশে কয়েক হাজার ইখওয়ান কর্মীকে প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আটক করা হয় অপর অন্তত ১৬ হাজার নেতা-কর্মীকে। অথচ ২০১১ সালে তৎকালীন শাসক হোসনি মুবারকের নির্দেশে প্রায় ৮৫০ জন বিক্ষোভকারীকে হত্যার পর মুবারকের পতন হয়েছিল।এদিকে, মিসরের সেনা সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকার বহু আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেনারেল সিসিকে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে ক্ষেত্র তৈরির কাজ করে আসছিল। এমনকি সিসি’র পক্ষে নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু হয়ে যায় এখন থেকে প্রায় তিন মাস আগে। এছাড়া, কয়েকটি আরব দেশ মিসরের সামরিক অভ্যুত্থানের নায়ক সিসি’র প্রচারাভিযানের ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নিয়েছে।গত প্রায় এক বছরে মিসরের এ পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায় আর তা হলো- সেনাবাহিনী আবার পূর্ণ শক্তিতে দেশটির ক্ষমতায় ফিরতে চায়। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে মিসরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার সময় থেকেই সেদেশে জেনারেল সিসি’র নাম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হতে থাকে। অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারে সিসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান, কিন্তু তার ক্ষমতা ছিল একজন মন্ত্রীর চেয়ে অনেক গুণ বেশি। বর্তমানে আদলি মানসুর দৃশ্যত মিসরের প্রেসিডেন্ট হলেও মূলত দেশ চালাচ্ছেন সিসিই।দেখা যায়, মিসরের রাজনীতিতে বহুকাল ধরে সেনাবাহিনীর দাপট ছিল একচেটিয়া। কিন্তু ২০১১ সালের গোড়ার দিকে প্রবল গণ-অভ্যুত্থানে নব্য-ফেরাউন হিসেবে পরিচিত হোসনি মুবারক সরকারের পতন হলে সে দাপটে হঠাৎ ছেদ পড়ে। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ইখওয়ানুল মুসলিমিন ক্ষমতায় আসে। ফলে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ঐতিহ্যে আমূল পরিবর্তন আসে এবং বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। এ বিষয়টি মেনে নেয়া প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর জন্য সহজ ছিল না।
এ কারণে সেনা কর্মকর্তারা ইখওয়ানুল মুসলিমিনের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা সেক্যুলার জনগোষ্ঠীকে সরকারের বিরুদ্ধে উস্কে দিয়ে বিষয়টিকে সামরিক অভ্যুত্থানের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেন। সেক্যুলার ও কথিত উদারপন্থীদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী।মিসরের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ এখনো ঘোষিত হয়নি। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, আসন্ন নির্বাচনে জনগণ যাকেই ভোট দিক না কেন, ব্যালট বাক্স থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেনারেল সিসির নামই বেরিয়ে আসবে।সূত্রঃইন্টারনেট