মিশরের নীল নদ রক্তে লাল হচ্ছে ! বিশ্ববাসী হতবাক

    1
    460

    মেশিন গানের গুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে কায়রোর জনপদ। চ্যানেল কারেন্টলির কায়রোর সংবাদদাতা বলেন, নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি বর্ষণ শুরু হলে হাসপাতালগুলোতে নিহত ও আহতদের স্থান সংকুলান না হলে মসজিদের চত্বর বেছে নেয়া হয়। এই সাংবাদিক পরিস্থিতিকে ‘এক্সট্রিম হরোর’ অভিহিত করে বলেন, মুহুর্তের মধ্যে কারো মাথায়, ঘাড়ে, বুকে গুলি লাগার পর তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। যাদের অনেকেই ছিলেন মৃত। এর পাশাপাশি চলে গ্রেপ্তার পর্ব।

    ঢাকা, ১৬ আগস্ট : মিশরের রাজধানী কায়রোর রাজপথে গণতন্ত্রকে হত্যার এমন নমুনা গণতন্ত্রের ধারক বাহক দেশগুলোর সমর্থনে এমন হত্যাযজ্ঞে বিশ্ববাসী হতবাক। দেশটিতে এখন জরুরি অবস্থা জারি করেছে সেনা সমর্থিত সরকার।  একদিকে নিরস্ত্র জনতা। অন্যদিকে সশস্ত্র সেনাবাহিনী। জনতার দাবি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত তাদের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে মুক্তি দিতে হবে। সেনাবাহিনী পরাশক্তির লেজুরবৃত্তি হিসেবে রাজপথ থেকে তাদের হটিয়ে দিতে শত শত মানুষকে হত্যা করছে যাদের করের টাকায় তাদের বেতন হয়। অস্ত্র কেনা হয় পরাশক্তিগুলোর কাছ থেকে।

    তাদের ওপর ওই অস্ত্র ব্যবহারের নজির পৃথিবীতে খুব কমই দেখা যায় সেনা শাসক আগেভাগেই হুশিয়ার করেছিল রাজপথ ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু জনতা তাদের অপহৃত প্রেসিডেন্টকে না পেলে বাড়ি ফিরে যাবে না বলে পাল্টা ঘোষণা দেয়। শিশু, বৃদ্ধ, নারী, যুবক সবাই খালি হাতে ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে। মেশিনগানের গুলি চলছে জনতার বুক বরাবর। কায়রোর আকাশে চক্কর দিচ্ছে সামরিক হেলিকপ্টার। ট্যাঙ্কের ঘর ঘর আওয়াজে জনতার প্রতিবাদ বিক্ষোভ পদদলিত হচ্ছে। মিশর এখন মানবতা শূন্য এক জনপদ। কায়রোর উত্তরপূর্বে সেনাবাহিনী অভিযান শুরু করে বুধবার ভোরে।

    কারণ এসময় বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা খুব কম থাকে। সারারাত বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হাজির হয় শিশু থেকে শুরু করে নারীরা পর্যšত্ম। ভোরে সেনা অভিযান শুরুর পর মুহুর্তের মধ্যে বাড়তে থাকে লাশের সারি। শত শত লাশের জায়গা হচ্ছে না মর্গে। হাসপাতালে মেঝে রক্তাক্ত। স্বজন হারানোর বেদনা ভুলে একজন আরেকজনকে উদ্ধারের জন্যে ছুটে আসছে। তবু সেনা সদস্যদের মেশিন গান থামছে না।সহিংস ওই সংঘর্ষে স্কাই টিভির ব্রিটিশ ক্যামেরাম্যান মাইক ডিয়ানি নিহত হয়েছেন। ব্রাদারহুড দাবি করছে অšত্মত ২২০০শত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে আহত হয়েছে ৫ সহস্রাধিক।

    ব্রাদার হুডের এক শীর্ষ নেতা মোহাম্মদ আল বেলতাগিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তার মেয়ে গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। মিশরের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলছে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে ৫৬ জন এবং আহত হয়েছে ৫২৬ জন। ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ এক বিবৃতিতে মিসরে সহিংসতার নিন্দা করেছেন।মিশরের নীল নদ এখন রক্তে লাল হচ্ছে। সংঘর্ষ কায়রো থেকে ছড়িয়ে পড়ছে মিনিয়া ও আসিউত শহরে। পর্যটকদের মিশর ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান, তুরস্ক ও জার্মানি এ হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানিয়েছে।বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সাতটায় সেনা সদস্যরা নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি চালাতে শুরু করে। পেছন থেকে সামরিক যানগুলো ধেয়ে আসে। কায়রোর রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়ে।

    আহতদের আর্তনাদ, নারীর কান্না, বৃদ্ধের আহাজারি কিছুই থামাতে পারেনি সেনা সদস্যদের।ঝাঁঝালো কাঁদানো গ্যাস থেকে রক্ষা পেতে কেউ কেউ গ্যাস মাস্ক, সুইমিং গগলস পড়লেও কাজ হয়নি। কারণ বুলেট ততক্ষণে তাদের প্রাণ হরণ করে নিতে শুরু করেছে। সেনাসদস্যদের হাতে মেশিন গান, একে ৪৭ রাইফেল চকচক করে ওঠে। যেন তাবৎ মিশরে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।সরকারের বার্তা সংস্থা খবর প্রচার করতে থাকে সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দিতে শুরু করেছে। স্কাই নিউজ বলছে উঁচু ভবনের ছাদ থেকে স্নাইপার রাইফেল দিয়ে গুলি চালানো হয়।

    দমকল বাহিনীর কর্মীরাও এ অভিযানে অংশ নেয়। মেশিন গানের গুলিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে কায়রোর জনপদ। চ্যানেল কারেন্টলির কায়রোর সংবাদদাতা বলেন, নিরস্ত্র জনতার ওপর গুলি বর্ষণ শুরু হলে হাসপাতালগুলোতে নিহত ও আহতদের স্থান সংকুলান না হলে মসজিদের চত্বর বেছে নেয়া হয়। এই সাংবাদিক পরিস্থিতিকে ‘এক্সট্রিম হরোর’ অভিহিত করে বলেন, মুহুর্তের মধ্যে কারো মাথায়, ঘাড়ে, বুকে গুলি লাগার পর তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। যাদের অনেকেই ছিলেন মৃত। এর পাশাপাশি চলে গ্রেপ্তার পর্ব। টেলিগ্রাফকে ২৮ বছরের হোদা সাকি বলেন, তার বাবাকে খুঁজে আনতে গেলে তার ওপর গুলি বর্ষণ করা হয়। এসময় বিক্ষোভকারীদের তাবুতে একের পর এক অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছিল।

    পাশাপাশি গুলি বর্ষণ চলতে থাকে। হোদা সাকি বলেন, তাবুর মধ্যে শিশু ও নারীরাও ছিল। কতজন মারা গেছে, আহত হয়েছে তা কেউ বলতে পারছে না কারণ তাদের সবাই সামরিক হত্যাযজ্ঞের মধ্যে পড়ে এদিক ওদিক প্রাণটুকু নিয়ে পালাতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেখানেও তাদের ওপর ভবন গুলোর ছাদ থেকে স্নাইপার রাইফেল থেকে গুলি ছুড়তে থাকে সেনা সদস্যরা।সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করায় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় চারপাশ। এর পাশাপাশি চলতে থাকে গুলি বর্ষণ। এক ভৌতিক পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে কায়রোর রাজপথে। মুসলিম ব্রাদারহুড বলছে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই।

    ব্রাদার হুডের মুখপাত্র গিহাদ আল-হাদ্দাদ টুইটারে লিখেছেন, অšত্মত ৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। তিনি একে নজিরবিহীন ‘রক্তাক্ত নৃশংস গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেন।মিসর সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আহমেদ আল আনসারি জানিয়েছেন উভয় পক্ষে ৪ জন নিহত ও অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছে। এরপর সরকারি বিবৃতিতে মৃতের সংখ্যা ৭ বলা হয়। তারপর সরকারি বিবৃতিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে অর্ধশত ছাড়িয়ে যায়।কায়রোর রাবা আল-আদাউইয়া মসজিদের বাইরে যেখানে ব্রাদারহুড সমর্থকরা অবস্থান নিয়ে ছিলেন সেই জায়গাটি কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে গেছে।নিরাপত্তা বাহিনী পুরো এলাকাটি ঘিরে রেখেছে। আশেপাশের সড়কগুলিতে মুরসি-সমর্থকদের সাথে খন্ড খন্ড সংঘর্ষ চলছে।

    সেখানে উপস্থিত বিবিসির একজন সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে ঢিল ছুঁড়ছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে টিয়ার গ্যাসের পাশাপাশি তাজা বুলেট ব্যবহার করছে। তিনি বলছেন, সামরিক বাহিনী ঐ এলাকার হাসপাতালগুলির নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, শহরের আল-নাহ্দা স্কয়ার থেকে ব্রাদারহুড সমর্থকদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।মিসরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ ওথম্যান সিবিসি টেলিভিশনকে বলেন, ব্রাদারহুডের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিন্তু তাদের সংখ্যা ঠিক কত তা এখনো বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে গত ৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া মুরসি সমর্থকদের ওপর সেনা সদস্যদের গুলিতে বুধবারের অভিযান ছাড়া ৩ শতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারায়।