মিলাদ-কিয়ামের বিপক্ষে লিখিত দলীল দিতে ব্যর্থ কথিত মুফতি

    0
    353

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৫ডিসেম্বরঃ পবিত্র মিলাদ মাহফিলে রাসূলﷻকে সম্বোধন করে সালাম দেয়ার সময় দাঁড়িয়ে যাওয়া অর্থাৎ ‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা’ বলার সময় দাঁড়িয়ে যাওয়া তথা কিয়াম করা জায়েজ কি নাজায়েজ এ বিষয় নিয়ে হাজীগঞ্জে দু’পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে আছে। এ বিতর্কের সমাধানে মিলাদ ও কিয়ামের পক্ষের ওলামায়ে কেরাম বসতে চাইলেও প্রতিপক্ষ বসতে চাইছেন  না। এমতাবস্থায় সাধারণ মানুষের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে।

    গত ৫ ডিসেম্বর শনিবার হাজীগঞ্জের মকিমাবাদ এলাকায় একটি বাড়িতে মিলাদ মাহফিলে এই বিতর্কের সূত্রপাত। ওই মিলাদ মাহফিলে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুর রউফও উপস্থিত ছিলেন। সেখানকার স্থানীয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওঃ জুনায়েদ জানান, আমি ওই মিলাদ মাহফিল পরিচালনা করছিলাম। মিলাদে নবীজীকে সালাম দেয়ার সময় আমিসহ উপস্থিত কয়েক শ’ মুসল্লি এবং অন্যান্য আলেম দাঁড়িয়ে গেলেও হাজীগঞ্জ বড় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুর রউফসহ তাঁর সাথে থাকা ৭/৮ জন বসে ছিলেন।

    শুধু তাই নয়, আমি যখন ইয়া নাবী সালামু আলাইকা বলে দাঁড়িয়ে যাই তখন মুফতি আবদুর রউফের সাথে থাকা একজন আমার পাঞ্জাবী ধরে টানাটানি করেছে বসে যাওয়ার জন্য অর্থাৎ কিয়াম না করতে। আমি যথারীতি মিলাদ ও কিয়াম শেষ করি। এরপরে মুনাজাতের আগে মুফতি আঃ রউফ বক্তব্য দিতে গিয়ে কিয়াম করাকে নানা যুক্তি দেখিয়ে র্শিক, বিদ্আত বলে ফতোয়া দেন। তার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর হাফেজ জুনায়েদ মুফতি আঃ রউফকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হুজুর এ নিয়ে কোনো মজলিশে বিতর্ক সৃষ্টি না করে আপনার দাবির সপক্ষে কি প্রমাণ আছে তা নিয়ে উভয় পক্ষের আলেমরা বসি। তখন মুফতি আবদুর রউফ বলেন, ঠিক আছে আমার রুমে আসবেন, আমি দলিল (প্রমাণ) দেখিয়ে দেবো।

    এ সময় মুফতি আঃ রউফের সাথে থাকা ক’জন হাফেজ জুনায়েদের সাথে অশালীন আচরণ করেন বলে তিনি জানান। হাফেজ জুনায়েদ জানান, গত ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার মাওঃ আবু সুফিয়ান খান আবেদী আল-কাদেরীর নেতৃত্বে আমিসহ কয়েকজন সুন্নী আলেম মুফতি আঃ রউফের সাথে সাক্ষাতের জন্য যাই। হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ সংলগ্ন কওমী মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলায় আমরা তাঁর সাথে বসি। তখন আমাদের পক্ষে মাওঃ আবু সুফিয়ান মুফতি আঃ রউফের কাছে কিয়ামের বিপক্ষে তাঁর কী বক্তব্য (দলিলসহ) তা লিখিত আকারে চান।

    কিন্তু মুফতি আবদুর রউফ তার বক্তব্য লিখিত আকারে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে কোরআন শরীফের তিনখানা আয়াত পড়ে শোনান। তখন মাওঃ আবু সুফিয়ান বলেন, হুজুর আমরা এখন আপনার সাথে বাহাস (বিতর্ক) করতে আসেনি। আমরা এসেছি আপনার বক্তব্য আপনি লিখিত দেবেন, আমরাও আমাদের বক্তব্য লিখিত আকারে দেবো। এরপর এ বিষয়ে  সমাধানের লক্ষ্যে আমরা উভয় পক্ষের আলেমরা বসবো। কিন্তু মুফতি আবদুর রউফ কোনোভাবেই তাঁর বক্তব্য লিখিতভাবে দিতে রাজী হননি। এর দ্বারা তাঁর দুর্বলতা প্রকাশ পেলো বলে মাওঃ আবু সুফিয়ান দাবি করেন। তখন ১২ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১০টায় উভয় পক্ষ পুনরায় বসার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে বৃহস্পতিবারের বৈঠক শেষ হয়।
    মাওঃ আবু সুফিয়ান জানান, আমি শুক্রবার মুফতি আবদুর রউফকে শনিবারের বৈঠকের ব্যাপারে ফোন করলে তিনি বসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, আমি তো তিন আয়াত বলেই দিয়েছি। সেই তিন আয়াতের অর্থ পড়লেই তো হয়, বসার তো আর প্রয়োজন নেই। তখন মাওঃ আবু সুফিয়ান তাকে বলেন, আপনি তো তিন আয়াত বলেছেন, কিন্তু আমাদের বক্তব্যের সপক্ষে তো পুরো কোরআন শরীফে বহু আয়াত রয়েছে। আর কোরআন শরীফের অর্থ তো আমি-আপনি মনগড়াভাবে করলে হবে না। মুফাস্সিরীনে কেরাম কী অর্থ ও ব্যাখা বিশ্লেষণ করেছেন তা আমাদের অনুসরণ করতে হবে এবং মানতে হবে। এজন্যই আমাদের উভয় পক্ষের আলেমরা বসে এসবের সমাধান হওয়া জরুরি। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই বসতে রাজী হন নি। মাওঃ আবু সুফিয়ান জানান, আজ (গতকাল শনিবার) সকালে মুফতি আঃ রউফের সাথে বসার জন্য আমরা কয়েকজন আলেম আলীগঞ্জে মাদ্দাহ খাঁ (রঃ) জামে মসজিদ কমপ্লেক্সে একত্রিত হই। সেখান থেকে সকাল ১০টায় পুনরায় মুফতি আঃ রউফকে ফোন করে আমাদের বসার আগ্রহের কথা জানিয়ে আবারো তাঁকে অনুরোধ করি বসার জন্য। কিন্তু তিনি এবারো বসার ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানান। এরপর আমরা এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্যে এবং উভয় পক্ষকে বসার ব্যবস্থা করতে হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে যাই। এ বাপারে তাঁরা আমাদের কিছু সুপরামর্শ দিয়েছেন আমরা সেভাবেই অগ্রসর হবো।

    মাওঃ আবু সুফিয়ান এ প্রতিবেদককে বলেন, মুফতি আঃ রউফ যদি তার বক্তব্যে উপর সুদৃঢ় থাকেন এবং কোরআন-হাদিস সম্মত হয় তাহলে তিনি লিখিত দিতে সমস্যা কোথায়? এ বিষয়ে তিনি প্রতিপক্ষের আলেমদের সাথে বসতে চাচ্ছেন না কেনো ? এতেই বুঝা যায় তার বক্তব্য মনগড়া। আমরা তো আমাদের বক্তব্যের  সপক্ষে প্রমাণাদি সহকারে তাদের (প্রতিপক্ষের) সাথে যে কোনো সময় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বসতে প্রস্তুত আছি। তারা বসতে রাজি হচ্ছেন না কেনো ? এতেই বুঝা যায় কারা হকপন্থী আর কারা বাতেলপন্থী।
    এসব বিষয়ে জানতে গতকাল বিকেলে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয় মুফতি আঃ রউফের সাথে। গতকাল যে উভয় পক্ষের আলেমরা বসার কথা ছিলো সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি তাদেরকে তিন আয়াত পড়ে শুনিয়ে দিয়েছি এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বাংলা অনুবাদ কোরআন শরীফের অর্থ দেখিয়ে দিয়েছি। তা মানলেই তো হয়, বসার তো প্রয়োজন নেই। তখন তাঁকে এ প্রতিবেদক বলেন, পবিত্র কোরআনের মতো মহা বিজ্ঞানময় গ্রন্থের অর্থ কী এ যুগের কারো করা বাংলা অনুবাদ দেখে করবেন, না কী শত শত বছর, হাজারো বছর পূর্বের সর্বজন স্বীকৃত মুফাস্সিরিনে কেরামের সুপ্রসিদ্ধ ও জগদ্বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ দেখে অর্থ ও ব্যাখা বিশ্লেষণ করবেন। এর কোনো সদুত্তর তিনি দেননি। এরপর তাঁকে বলা হয়, আপনার বক্তব্যের সপক্ষে যেমন আপনার কাছে যুক্তি বা দলিল আছে প্রতিপক্ষের কাছেও তো তাদের বক্তব্যের সপক্ষে দলিল আছে। তাই কোন্টি সঠিক তা সমাধানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষের আলেমরা বসলে সমস্যা কোথায়? তখন তিনি বলেন, তারা তো বিশৃঙ্খলা বা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে বসার কথা বলছে।

    এ প্রসঙ্গে তাঁকে বলা হয়, বিশৃঙ্খলা তো আপনি করলেন, একটি মিলাদ অনুষ্ঠানে শত শত মানুষ কিয়াম করলো আর আপনিসহ ৬/৭ জন বসে রইলেন, এমনকি নানা যুক্তি দেখিয়ে কিয়ামকে শিরক্-বিদ্আত বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করলেন। এখন মিলাদ-কিয়ামের পক্ষের আলেমরা বসতে আগ্রহ দেখালেও আপনি রাজী নন। এতে কি বুঝা যায় না আপনি সমাধান চান না, সমাজে ফতোয়াবাজি করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চান। এরও কোনো সদুত্তর তিনি দেন নি।
    সর্বোপরি হাজীগঞ্জের মানুষ এ নিয়ে আর কোনো দ্বিধা-বিভক্তি বা বিশৃঙ্খলা চান না। তারা এর সুষ্ঠু সমাধান চান। এক পক্ষ বলবে মিলাদ-কিয়াম জায়েজ আর অন্য পক্ষ বলবে নাজায়েজ এসব আর তারা শুনতে চান না। তারা এর একটি সমাধান চান। প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে উভয় পক্ষের আলেমদের নিয়ে বসে এর সমাধান চান।
    উল্লেখ্য, গেলো রমজান মাসেও চাঁদপুর শহরে মিলাদ-কিয়াম জায়েজ কি নাজায়েজ এ নিয়ে দু পক্ষের আলেমদের মধ্যে বাহাসে বসার একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়। সবশেষে মিলাদ-কিয়ামের বিপক্ষ দল নানা অপকৌশল করে এর থেকে পিছু হটে।সুত্রঃ চাদপুর বার্তা