‘মিনিকেট’ নামের কোনো ধান নেই,এটি গবেষণায় প্রমাণিত

    0
    233

    ‘মিনিকেট’ নামের কোনো ধান নেই। বাজারে এ নামে রং-বেরঙের নানা বস্তাবন্দি যে চাল পাওয়া যায় তা আসলে সাধারণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিম্নমানের মোটা চাল মেশিনে ছেঁটে সরু করে ‘মিনিকেট’ নামে মুলত প্রতারণা’

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৮সেপ্টেম্বর,ডেস্ক নিউজঃ  দেশে-বিদেশে ‘মিনিকেট’ নামের কোনো ধান নেই। বাজারে এ নামে রং-বেরঙের নানা বস্তাবন্দি যে চাল পাওয়া যায় তা আসলে সাধারণ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিম্নমানের মোটা চাল মেশিনে ছেঁটে সরু করা। আর বিষয়টি এবার প্রমাণ হয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) গবেষণায়। বিআইডিএসের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশি দামে বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা লাভের লক্ষ্যে বিশেষ পলিশিং মেশিনে মোটা চাল কেটে চিকন ও চকচকে করা হয়। সুস্বাদু ও অতিরিক্ত চকচকে করতে এই চালে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানোরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। মোটা চাল ছেঁটে সরু এবং রাসায়নিকের মাধ্যমে চকচকে করায় কথিত ‘মিনিকেট’ চালে স্বাভাবিক খাদ্যমান ও পুষ্টিগুণও থাকে না।

    ‘মিনিকেট’ চাল নিয়ে বিআইডিএসের গবেষণার এই ফলাফল গতকাল রবিবার তুলে ধরা হয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে গবেষণালব্ধ ফলাফলটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করে জনসচেতনতা সৃষ্টির পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।

    এ ব্যাপারে বৈঠকে সভাপতিত্বকারী পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘মোটা চাল মেশিনে কেটে চিকন করে মিনিকেট নামে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। বাস্তবে এই নামে কোনো ধান বা চাল নেই। পরিষ্কার ও চিকন হওয়ায় মানুষ এই চালের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বেশি দামে কিনছে। এতে একদিকে মানুষের খরচ হচ্ছে বেশি, অন্যদিকে কেটে চিকন করায় ও রাসায়নিক মেশানোর কারণে এই চালের পুষ্টিগুণও নষ্ট হয়ে যায়। দেশের মানুষ যেন এই প্রতারণার হাত থেকে রেহাই পায় সেজন্য কমিটি এ ব্যাপারে ব্যাপক ভিত্তিতে প্রচারণা চালানোর সুপারিশ করেছে।’

    কমিটি সভাপতি জানান, ‘মিনিকেট’ চাল নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা ওঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করার জন্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকেও নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মিনিকেট নিয়ে প্রচারণার উদ্যোগ নিতে বৈঠকে উপস্থিত কমিটির সদস্য পরিকল্পনা মন্ত্রী আ.হ.ম মুস্তফা কামালকে (লোটাস কামাল) অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া সংসদ ভবনে কৃষিমন্ত্রীর দেখা পেয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকেও বিষয়টি জানিয়েছি।’

    বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে বিআইডিএসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- কতিপয় অতিরিক্ত মুনাফালোভী অটো রাইস মিল মালিক আধুনিক মেশিনে মোটা চাল ছেঁটে চিকন ও চকচকে করে মিনিকেট নামে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছে। এসব অটো রাইস মিলে রয়েছে অতি বেগুনিরশ্মির ডিজিটাল সেন্সর প্লান্ট। এর মধ্য দিয়ে ধান পার হওয়ার সময় প্রথমে কালো-মরা ধান ও পাথর সরিয়ে ফেলা হয়। এরপর ওই মোটা ধান চলে যায় অটো মিলের বয়লার ইউনিটে। সেখানে পর্যায়ক্রমে পাঁচ বা একাধিক ধাপ পার হওয়ার পর লাল বা মোটা চাল সাদা রং ধারণ করে। এরপর অতি সূক্ষ্ম পলিশিং মেশিনে মোটা চালের চারপাশ কেটে চিকন করা হয়। পরে  সেটিকে আবার পলিশ ও স্টিম দিয়ে চকচকে শক্ত আকার দেয়া হয়। অতিরিক্ত চকচকে ও সুদৃশ্য করতে কেউ কেউ সেটিতে ক্ষতিকর রাসায়নিকও মিশিয়ে থাকেন। এসব প্রক্রিয়া শেষে নানা নামে ‘মিনিকেট’ হিসেবে সেটি বাজারে ছাড়া হচ্ছে।

    বিআইডিএসের গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি ফসলের গবেষণার ক্ষেত্রে মিনি কিট করা হতো। এ শব্দটিকে ধান বা চাল ব্যবসায়ীরা মিনিকেট করে নিয়েছে। এক শ্রেণির মিল মালিক মাঝারি সরু বি আর-২৮, বিআর-২৯ ও বি আর-৩৯ জাতের এমনকি মোটা ধান ছেঁটে মিনিকেট বলে বাজারজাত শুরু করে।

    বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের কোথাও মিনিকেট নামে চাল নেই। বর্তমানে বাজারে এ নামে যে চাল পাওয়া যাচ্ছে তাতে ভিটামিন ডিসহ মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির উপাদানগুলো নেই।

    সংসদীয় কমিটির বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী  আহম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল), মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম), মুহিবুর রহমান মানিক ও তাজুল ইসলাম অংশ নেন। কমিটির বিশেষ আমন্ত্রণে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বৈঠকে যোগ দেন।