মা-বাবার ভরণপোষণ না করলে শাস্তির আইন পাশ

    0
    213

    আমার সিলেট  24 ডটকম,অক্টোবরজাতীয় সংসদে ‌আজ বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি বেসরকারি বিল পাস হয়েছে। এর মধ্যে ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ)-২০১১’ বিলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সরকারি কর্মকর্তার হেফাজতে মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে,এবং  পিতা-মাতাকে ভরণ-পোষণ না করলে সন্তানের বিরুদ্ধে জেল জরিমানার বিধান রেখে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিল-২০১১ পাস করা হয়েছে। এ নিয়ে নবম সংসদে তিনটি বেসরকারি বিল পাস হলো।

    আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর আনা নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ)-২০১১ বিলে বলা হয়েছে, সরকারি কোনো কর্মকর্তার বা আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির নূন্যতম যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকার জরিমানা এবং ক্ষেত্র বিশেষ অপরাধীকে উভয় দন্ডে দণ্ডিত করা যাবে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপুরণ দেওয়ার জন্য দণ্ডপ্রাপ্তকে অতিরিক্ত দুই লাখ টাকার জরিমানা দিতে হবে।

    বিলে বলা হয়েছে, নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা অমর্যাদাকর আচরণ অথবা শাস্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সনদের কার্যকারিতা প্রদানের লক্ষ্যে বিলটি আনা হয়েছে। এটি জামিন অযোগ্য অপরাধ। কোন ব্যক্তি আদালতে নির্যাতনের অভিযোগ করলে তাত্ক্ষণিকভাবে ওই ব্যক্তির বিবৃতি লিপিবদ্ধ করতে হবে। কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা তার পক্ষে কর্তব্যরত কোনো ব্যক্তির গাফিলতি বা অসতকর্তার কারণে অভিযোগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হলে অভিযোগকারীকেই প্রমাণ করতে হবে তার কোনো দোষ নেই। অপরাধের জন্য দণ্ড ঘোষণার দিন থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে জানাতে হবে এটি জামিন অযোগ্য। এটি পুরণ করা ছাড়া কোনো আপিল করা যাবে না। কোনো অপরাধী যদি অন্য দেশের নাগরিক হন তাহলে প্রত্যাবর্তন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

    বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ন্যায় বিচার পাওয়ার অধিকার মানুষে মৌলিক মানবাধিকার। সংবিধান অনুযায়ী, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। কিন্তু গ্রেপ্তারের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির করার বিধান থাকলে তা করা হয় না। এ ধরনের ক্ষমতার অপপ্রয়োগ রাষ্ট্রের কাঠামোকে দুর্বল করে। সাধারণ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে, আইনের শাসন সুরক্ষিত ও জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে এবং সাধারণ মানুষকে সরকারি প্রশাসনযন্ত্র এবং পুলিশের  বেআইনী আচরণ অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রক্ষায় এই বিল আনা হয়েছে।

    এদিকে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর আনা ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ বিল-২০১১ বিলে পিতার ঔরসে এবং মাতার গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্তান তার পিতা-মাতাকে ভরণ-পোষণ না করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। কোন সন্তানের স্ত্রী বা স্বামী পিতা-মাতার ভরন-পোষণ প্রদান না করতে প্ররোচনা দিলে উক্ত স্ত্রী বা স্বামীও কিংবা অন্য সহায়তাকারী উপরোক্ত অপরাধে অভিযুক্ত হবেন।

    বিলে বলা হয়েছে, ভরণ-পোষণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানকে পিতা-মাতার সঙ্গে একই স্থানে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে। কোন সন্তান তার পিতা বা মাতাকে বা উভয়কে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বৃদ্ধ নিবাস, বা অন্য কোথাও বা আলাদা আলাদা ভাবে বসবাস করতে বাধ্য করতে পারবেন না। প্রত্যেক সন্তান তার পিতামাতার স্বাস্থ্য সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ খবর রাখবে। প্রয়োজনীয় চিকিত্সা সেবা ও পরিচর্যা করবে। তারা পৃথকভাবে বসবাস করলে সন্তানদের নিয়মিত সাক্ষাত করতে হবে। এ সংক্রান্ত অপরাধের জন্য এক লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে সর্বোচ্চ ৩ মাসের জেলের বিধান রাখা হয়েছে।

    স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে বিল দু’টি কণ্ঠ ভোটে পাস হয়। বিল দু’টির উপর বিরোধী দলের সদস্যদের আনা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব অনুপস্থিতির কারণে উত্থাপিত হয়নি। এর আগে গত বুধবার অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ বিল দু’টি পাশের সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রী ছাড়া অন্য সদস্যরা আইন প্রণয়নের জন্য কোনো বিল আনলে তা বেসরকারি বিল হিসেবে বিবেচিত হয়। সংসদে বেসরকারি বিল পাসের ঘটনা খবুই কম। এর আগে ২০১১ সালে সাবের হোসেন চৌধুরীর “দ্যা লেপারস (রিপিল) অ্যাক্ট-২০১১” নামে আরো একটি বিল পাস হয়। এর আগে ৮টি সংসদে উত্থাপিত ২৫৫টি বিলের মধ্যে মাত্র ৬টি বেসরকারি বিল পাস হয়।