মানবতাবিরোধী অপরাধঃকামারুজ্জামানের ফাঁসির মাধ্যমে দ্বিতীয় রায় কার্যকর

    0
    273

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১১এপ্রিলঃ নানা জল্পনার  অবশেষে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।

    শনিবার  রাত সাড়ে ১০টা ১ মিনিটে  ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জানা গেছে, ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তার হাতে থাকা লাল রুমাল মাটিতে ফেলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে জল্লাদরা ফাঁসি কার্যকর করেন। এর আগে কামারুজ্জামানের মুখ কালো কাপড় ও মাথা কালো টুপি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। এরপর ফাঁসির দড়িটি তার গলার জড়িয়ে দেয়া হয়। ফাঁসির দড়িতে দীর্ঘক্ষণ ঝুলে থাকার পর কামারুজ্জামানের মৃত্যুর বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে দড়ি থেকে নামানো হয়। এরপর দায়িত্বরত সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

    ফাঁসি কার্যকরের সময় উপস্থিত ছিলেন কারা প্রশাসনের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল  সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্ণেল মো: ফজলুল কবীর, উপ-কারা মহাপরিদর্শক গোলাম হায়দার, জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী, কারাধ্যক্ষ নেসার আলম, ঢাকার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিঞা, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম, ঢাকার সিভিল সার্জন আবদুল মালেক, কারা চিকিৎসক আহসান হাবিব প্রমুখ।

    দণ্ড কার্যকরের আগে কামারুজ্জামানকে গোসল করানো হয়। গোসল শেষে এশার নামাজ আদায় করেন তিনি। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তওবা পড়িয়ে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়া হয় তাকে। প্রথা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক তাঁর হাতে রাখা একটি লাল রুমাল মাটিতে ফেললে প্রধান জল্লাদ ফাঁসির মঞ্চের লিভার (লোহার তৈরি বিশেষ হাতল) টেনে দেন। এতে পায়ের তলা থেকে কাঠ সরে ফাঁসি কার্যকর হয়।

    রায় কার্যকরের প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট পর তার লাশ অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে তার গ্রামের বাড়ি শেরপুরে নেয়া হয়েছে।

    অ্যাম্বুলেন্সের নিরাপত্তার জন্য আগে ও পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর (র‌্যাব ও পুলিশ) ১০টি গাড়ি রয়েছে। গাড়ি বহরে একটি অতিরিক্ত অ্যাম্বুলেন্সও রয়েছে। দ্বিতীয় এ্যাম্বুলেন্সে লাশটি বহন করা হচ্ছিল বলে জানা যায়।

    ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোঃ ফরমান আলী জেলগেইটে উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করায় রাত সাড়ে ১০টা ১ মিনিটে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। তার লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্সটি শেরপুরের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে।

    একাত্তরে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে ১৪৪ জনকে হত্যা ও নারী নির্যাতনের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে আসামিপক্ষ। গত বছরের ৩ নভেম্বর সোহাগপুর হত্যাকাণ্ডের দায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হলে ৫ মার্চ তা পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন কামারুজ্জামান। এরপর দুই দফা শুনানি পেছানোর পর গত ৫ এপ্রিল রোববার আপিল বিভাগে ওই আবেদনের শুনানি হয়। পরে রায় ঘোষণার জন্য ৬ এপ্রিল সোমবার দিন ধার্য করেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত। এদিন রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে কামারুজ্জামানের করা আবেদন আপিল বিভাগ খারিজ করে দেন।

    তবে এই বিচারের শুরু থেকেই জামায়াতে ইসলামীসহ আন্তর্জাতিকমহল বিচার-প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে। বিশ্বের যেসব দেশে এখন আর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় না, সেসব দেশও সর্বোচ্চ সাজার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান জানিয়ে আসছিল। সর্বশেষ জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড স্থগিতের দাবি জানিয়েছিল।

    মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে প্রথম ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ হয় কাদের মোল্লার। ওই দিন রাত ১০টা ১ মিনিটে তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয়।