মহাকাল নাট্য ও শিল্পকলার যৌথ আয়োজনে ‘সাপুড়ে’ রোববার

    0
    237

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০১অক্টোবর,সিলেট প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র যৌথ আয়োজনে জাতীয় নাট্যোৎসব ২০১৬ এ আগামী ২ অক্টোবর রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় পরিক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় প্রযোজনা দ্রোহ ও প্রেমের কবি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ‘সাপুড়ে’ আশ্রয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনন জামান রচিত এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. ইউসুফ হাসান অর্ক নির্দেশিত মানব প্রেমের অমর উপাখ্যান ‘‘নীলাখ্যান’’ এর সতেরোতম ম ায়ন। ‘‘নীলাখ্যান’’ মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় এর ৩৬তম প্রযোজনা। নাটকটি নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের হুগলী,  শান্তিনিকেতন ও বোলপুরে এ নাটকের ৩টি সফল ম ায়ন সম্পন্ন হয়েছে।

    মঞ্চের নেপথ্য শিল্পীরা হলেন-মঞ্চ  পরিকল্পনা, সুর, সঙ্গীত ও আবহসঙ্গীত পরিকল্পনায় ইউসুফ হাসান অর্ক, আলোক পরিকল্পনায় ঠান্ডু রায়হান, পোষাক পরিকল্পনায় ড. সোমা মুমতাজ, কোরিওগ্রাফী জেরিন তাসনিম এশা, প্রপস পরিকল্পনা ও নির্মাণ হাসনাত রিপন, রূপসজ্জায় শুভাশীষ দত্ত তন্ময়, পোষ্টার ও স্মরণিকা ডিজাইন পংকজ নিনাদ, ম  ব্যবস্থাপক জাহিদ কামাল চৌধুরী এবং প্রযোজনা অধিকর্তা মীর জাহিদ হাসান।

    অভিনয় শিল্পীরা হলেন জেরিন তাসনীম এশা, কোনাল আলী চৈতী সাথী, শাহিনুর প্রিতী, আদিবা, সুরেলা, সৈয়দা কানিজ ফাতেমা লিসা, নির্ঝর অধিকারী, তনু ঘোষ, আমিনুল আশরাফ, আসাদুজ্জামান রাফিন, মোহাম্মদ আহাদ, শিবলী সরকার, শাহরিয়ার হোসেন পলিন, ইয়াছির আরাফাত, তৌহিদুর রহমান শিশির, রাজিব হোসেন, ইকবাল চৌধুরী, মোঃ শাহনেওয়াজ এবং মীর জাহিদ হাসান।

    নাটকের কাহিনীর অনুকথা :বেদিয়ার সর্দার জহরের বিষ জয় সাধনায় মনসা কর্তৃক কাম নিষিদ্ধ বলে- তার ভাষে আভাসে প্রত্যাখ্যাত ভালবাসার মানুষ বিন্তী রানী আত্মহত্যা করে আড়ালি বিলে রাশি রাশি শাদা শাপলার বনে। বেদিয়া বহরে বেড়ে উঠা সাপে কাটা মান্দাস ভাসা বালিকা চন্দনের চুলের আড়ে বিন্তীর সুরভী পায় জহর। নারী নিষিদ্ধ বলে এ বালিকা বেড়ে উঠছিল বালকের বেশে। যাকে সন্তান করেছিল জ্ঞান- ঋতুমতি হয়ে উঠার পর তার প্রতি প্রবল রতি অনুভব করে জহর। বেদিয়া দলে তাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় বিচিত্রমুখী সংকট। চন্দনের যুবা সাজে তাকে প্রেম নিবেদন করে মৌটুসী আর চন্দন ঠোটে মালতী ফুলের লাল ডলে ঝুমরোর সামনে দাড়ায়। বেদিয়াদের উৎসবে চন্দনের নারীত্ব উন্মোচন হলে দলের অতিপ্রাকৃত বৃদ্ধ ঘন্টাবুড়ো বেদিয়া দল ও জহরকে তিনটি অনিবার্য ভবিতব্যের ঘোষনা দেয়- ‘ভবিতব্যের তিনরূপ কহি- যে ভাতের পাতিল নেবার জন্য জলে ডুবেছে বিন্তী- তা অন্যরে দিতে চেয়ে পতিত হবি তুই। অথবা তোর আচরে বিন্তীর অনুগামী হবে চন্দনে। আর যদি না হয় তা- তবে আছে তৃতীয়জন- তার হবে মৃত্যু। মৃত্যু অনিবার্য- তবে তা কার হবে- তোর কার্যকরণ হবে থির।’

    সামগ্রিক দৃশ্যকাব্যে ক্ষণে ক্ষণে তিনটি ভবিতব্য ঘটে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল হয়ে উঠে। যাকে পিতা মানে তাকে পতি মেনে নিতে পারে না চন্দন। ঝুমরোর জন্য জহরের ঝাঁপিতে আছে দাঁত না ভাঙা পোষা সাপ। শাওনের অখ- চাঁদের সাঁজ বেলায় আকাশজুড়ে যেন মনসার নীল মুখচ্ছবি ভেসে ওঠে। জহরের অন্তরে তখন বাজে চন্দন চেয়েছিলো গাঢ় নীল রঙের ফতুয়া। সে ক্ষণে একশ তম সাপের দংশন নেবে জহর- মন্ময় নীলের দোলাচলে সে চিত্রল ফণায় টোকা দিয়ে সাপটিকে ক্রোধমত্ত করে তোলে।

    রচনা প্রসঙ্গ : শব্দে সুরে ভাবের বিত্ত বৈভব বিনির্মাণে বাংলা সাহিত্যে কী সঙ্গীতের ঐশ্চর্যকবি কাজী নজরুল ইসলাম। সুরে আসরে তার গান আর কাব্য গুলো এক আকাশ শূণ্যতার বেদনা মন্থিত নির্যাস। সাঁজকালি আন্ধার রাতে শিমূল মোস্তফার কাব্যকন্ঠে কাজী মোতাহার হোসেনের কাছে লেখা তার বেদনা বিধুর চিঠির শব্দপাঠ মনে হয়েছিলো তার কবিভাব আর কাব্যপম শব্দপুচ্ছ যদি শাদা কুয়াশা হতো- তা যদি স্পর্শ করা যেতো- তবে তা নখে মাখিয়ে ভাব এবং আবেগের প্রকাশ শিখতাম। হে দ্রোহের পুরোহিত- অভাজনের দোষ নেবেন না- আপনার ‘সাপুড়ে’ গল্প পাঠের পর বেদিয়া জহর-ই আমার কাছে যা কিছু বেদনা বলবার- বলেছিল- আপনার চরিত্রের ভাবকথা আমি অনুলিপি করেছি মাত্র। সাপুড়ে গল্পের বেদিয়াদের ঝাঁপির ভেতর যা ছিল গোপন- সেই ঝাঁপি খুলে গোপন উন্মোচনের চেষ্টায় এ নবতর নাট্য আয়োজন।

    ঘুম অথবা জাগরণের ভেতর ভূবন থেকে মনসা বলেছিল অখ- চাঁদের সাঁজক্ষণে যদি একশ সাপের দংশন শরীরে নেয় আর কাম রাখে আপন শরীরে বন্দক তবে বিষ বশ করতে পারবে জহর। একটি সাপের বিষ বুকে সয়ে- জহর হত হয় কাম আর প্রেমের দংশনে। ‘নীলাখ্যান’ নাট্য জহরের পরাণ আর চৈতন্যের গোপন পাত্রের রতি আর আরতির নাট্য।

    আনন জামান
    সহকারী অধ্যাপক, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ
    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
    নির্দেশকের কথা

    কাহিনীটির প্রেক্ষাপট বেদে বহর হলেও কবি নজরুল এর অন্ত¯্রােতে এমন একটি সার্বজনীন বীজ ভাসিয়ে দিয়েছেন যা স্পষ্টতই গোটা মানবকূলের সর্বকালকে ছুঁয়ে যায়। অনতিক্রম্যদূর্মর আকাঙ্খা আর বিরাট প্রকৃতির তুলনায় মানুষের অসহায়ত্ব তাই কবিকে এমন প্রেমাখ্যান লিখতে কলম ধরায়। কবি আর নাট্যকার তাদের মন্ময়তায়-তন্ময়তায় যে জগৎ রচনা করেন তার থেকেও ভিন্ন কোন ভাষা অনুসন্ধান করতে হলে বাঙলা নাট্যের সঙ্গীতের ঐতিহ্যের দ্বারস্থ হতেই হয়। কেননা সেখানেই অনেক কথা না বলেও বলা হয়ে যায়। ‘নীলাখ্যান’ প্রযোজনাতেও সেই প্রয়াস রয়েছে। শব্দ-সুরের শক্তিতে প্রেম আর মানুষের অসহায়ত্বের মনকথা বলবার জন্যই অভিনেতা-চরিত্রেরা অনেকটা গীতলভাবে তাদেরকে প্রকাশ করে।

    এ নাট্যে অভিনেতা নিজেই চরিত্র ও পরিস্থিতির বিবরণ উপস্থাপন করেন ম ক্রিয়া সহযোগে। একে শুদ্ধ চরিত্রাভিনয় না বলে আমরা ‘বর্ণনাত্মক চরিত্রাভিনয়’ বলছি। এ অভিনয় আমাদের আবিষ্কার নয়। আমাদের ঐতিহ্যে পালাকার-গায়েন-বয়াতিগণ এভাবেই অভিনয় করেন। তাতে কাহিনীর রসাস্বাদনে কোন অসুবিধা হয়না। পার্থক্য শুধু এইটুকু যে, সেখানে একজনই কাহিনী বয়ান করেন আর এখানে সকলে মিলে একটি গল্প বলার চেষ্টা। প্রযোজনাতে খুব বেশী ইমেজ তৈরী করবার চেষ্টা নেই এই কারণে যে নির্দেশকের বিশ্বাস, ‘বর্ণনাত্মক’ এমন একটি শিল্প আঙ্গিক যেখানে শ্রুতিময়তা দিয়েই দৃশ্যময়তা তৈরী হয় দর্শক চিত্তে। আর সে কারণে নাটকটির নামকরণেও ‘আখ্যান’ শব্দটি জুড়ে দেয়া হয়েছে। দর্শক সুধীবৃন্দের প্রেমময় মনের কাছে বলি: গীতের পালকিতে করে মহান কবির একটি কাহিনীকে আপনাদের উঠানে এনে হাজির করেছি আমরা, ‘মনে নেবেন’ না ‘মেনে নেবেন’ সে ভক্তিপূর্ণ বিনয় নিয়েই সৃজনশীলতার পথ হেঁটেছি।

    ড. ইউসুফ হাসান অর্ক
    অধ্যাপক, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ
    জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়