মন্ত্রিসভার দুই সদস্যকে সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী

    0
    226

    ডেস্ক নিউজঃ মন্ত্রিসভার দুই সদস্যকে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় দুটি ভিন্ন ইস্যুতে বক্তব্য রাখায় এক মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রীকে সতর্ক করেন।

    এ ছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নামে চট্টগ্রামে গড়ে তোলা ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে’ সংস্কারের প্রস্তাব দেন এক উপমন্ত্রী। তিনি ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর’-এর স্থলে ‘চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর’ স্থাপনের প্রস্তাব দিলে মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্য এ প্রস্তাবে সমর্থন দেন বলে জানা গেছে।

    মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে তথ্যটি জানা গেছে।মন্ত্রিসভার ওই সদস্যরা বলেন, বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় ভারত সফর নিয়ে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। দিল্লিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে গত শনিবার দেশে ফেরেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর ড. একে আবদুল মোমেনের এটাই প্রথম বিদেশ সফর ছিল।

    এই সফরে তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও দেখা করেন। দিল্লি সফরের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তুলে ধরার এক পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে পিলার স্থাপনের বিষয়ে তার অভিমত তুলে ধরেন মন্ত্রিসভার বৈঠকে। বিষয়টি পছন্দ হয়নি প্রধানমন্ত্রীর। তিনি এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে বেশ শক্তভাবেই বলেন, আপনার যেটা কাজ সেটা করেন। পিলার বসানোর চিন্তা আপনার করা লাগবে না।

    বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা কবে নাগাদ তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবে? রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জানতে মন্ত্রিসভায় কথা তোলেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কিছুটা বিরক্ত প্রকাশ করে ডা. এনামের উদ্দেশে বলেন, রোহিঙ্গারা কবে ফিরবে এটা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেখার বিষয় নয়। আপনার মন্ত্রণালয়ের কাজ রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সুবিধা দেওয়া আপনি সেটা অব্যাহত রাখেন।

    বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রয়াত জিয়াউর রহমানের নামে গড়ে তোলা ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘরকে’ চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাব করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। জাদুঘরটির অবস্থান চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার কাজির দেউড়ি এলাকায়। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নওফেলের এই প্রস্তাবে সমর্থন দিয়েছেন মন্ত্রিসভার প্রায় সব সদস্য।

    প্রস্তাবে নীতিগত সমর্থন এসেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকেও।মন্ত্রিসভার বৈঠকে নওফেল এই প্রস্তাব রাখার পর এতে সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং প্রমুখ।বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার নওফেল বলেন, যে ভবনটিকে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর বানানো হয়েছে, সেটি ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃৃৃৃতিবিজড়িত ভবনটি। এক সময় এটি সার্কিট হাউস হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃৃতি জড়িয়ে আছে। ১৯৭১ সালে অনেক নিরীহ বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাকে পাকিস্তানি সেনারা ধরে নিয়ে ওই ভবনে রেখে নির্যাতন করেছিল।

    তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান যখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন, তখন এই সার্কিট হাউসে এসে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৯১ সালে তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর সেটিকে আকস্মিকভাবে জিয়া স্মৃৃৃতি জাদুঘর হিসেবে রূপান্তর করেন, যা চট্টগ্রামবাসী এবং আপামর মুক্তিযোদ্ধারা মেনে নেননি। সেখানে জিয়াউর রহমানের কোনো স্মৃৃৃতি নেই। শুধু ১৯৭১ সালে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাটি জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে যে ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল, সেটি এনে সেখানে রাখা হয়েছে। অথচ জিয়াউর রহমানের আগে একই ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে এ ঘোষণা দিয়েছেন প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান।

    তা হলে শুধু জিয়াউর রহমানের নামে কেন জাদুঘর হবে? তিনি আরও বলেন, আদালতের রায়ে জিয়াউর রহমান একজন অবৈধ সামরিক শাসক। তার নামে কেন একটি রাষ্ট্রীয় স্থাপনা এভাবে ব্যবহার করা হবে? তা ছাড়া জিয়ার নামে স্থাপনা হওয়ায়, এই দর্শনীয় স্থানটিতে চট্টগ্রামের মানুষ যান না।

    অথচ এটিকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর করে একটি সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তর করলে এটি দেশের সম্পদে পরিণত হবে।আমাদের সময়