ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে রাজপথে

    0
    213

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৩সেপ্টেম্বর: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফির ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে রাজপথে নেমেছেন।

    পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ (রোববার) সকাল সোয়া ১০টার পর রাজধানীর বারিধারা, ধানমন্ডি, উত্তরা ও রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তারা। বারিধারায় যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন সড়ক অবরোধে নামেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা, উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকার সড়ক অবরোধে নামেন উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা, রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ শুরু করেছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এবং কলাবাগান থেকে শংকর পর্যন্ত সড়কে বিক্ষোভ করছেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা।

    ইস্ট ওয়েস্টের শিক্ষার্থীরা রামপুরার আবতাবনগরে রোববার সকাল ১০টা থেকে ক্লাস বর্জন করেন। এরপর সাড়ে ১০টা থেকে তারা সড়ক অবরোধ করে রাখে। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

    আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সালাহ উদ্দিন মিঠু বলেন,”ভ্যাট প্রতাহারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা ক্লাসবর্জনের পর সড়ক অবরোধ করেছি। সারা দেশে যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের সরকারি সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমাদের এ চলমান আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।”

    এদিকে, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিকে ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গুলশান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের  বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করছি তারা যেন সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয়। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।”

    শনিবার বিকেলে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের ফুড কোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবিতে রোববার থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ক্লাস বর্জন এবং আবারও রাজপথে অবস্থান নেয়ার  কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

    সন্ধ্যায় এ-সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এই আন্দোলন কেবলমাত্র সরকারের ভ্যাটবিষয়ক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, কোনোভাবেই সরকারের বিরুদ্ধে না। বরং আমরা সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্লাসে ফিরে গিয়ে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির এই অহিংস আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সকল অপচেষ্টা থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। শিক্ষার্থীদের এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করছি।’

    এতে আরো বলা হয়, ‘সরকার শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি কোনো কর্ণপাত করেনি। বারবার শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানানোর পরও কোনো ফলাফল না আসায় আজ আমরা ক্লাস ছেড়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি।’

    শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- আরোপিত ভ্যাট সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার, ভবিষ্যতে শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো কর আরোপ করা যাবে না, ইস্ট ওয়েস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিচার, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর চিহ্নিত হামলাকারীদের বিচার এবং অর্থমন্ত্রীকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে।

    চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির ওপর সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করে সরকার। শুরু থেকেই এ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজধানীর আফতাবনগর ও রামপুরা এলাকায় পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের লাঠিপেটা ও রাবার বুলেটে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়।

    এর পরদিন বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাজপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে যানজট সৃষ্টি হয়ে গোটা ঢাকা স্থবির হওয়ার উপক্রম হয়। এরই একপর্যায়ে এনবিআর এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, আরোপিত ভ্যাট শিক্ষার্থীদের দিতে হবে না, তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে। পরে রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই কথার পুনরোক্তি করেন।

    এসব ঘোষণার পরও ভ্যাট কে দেবে এ নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দেয়। এর মধ্যেই গতকাল শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) অর্থমন্ত্রী জানান, এ প্রজ্ঞাপনের ব্যাপারে সরকার সমঝোতা করেছে এবং ‘আলটিমেটলি’ আগামী বছর থেকে শিক্ষার্থীদের ঘাড়েই বর্তাবে আরোপিত ভ্যাট।