ভূমিকম্পে নেপালে ২হাজার ভারতে-৮৯ ও বাংলাদেশে ৬ জনের মৃত্যুর খবর

    0
    193

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৬এপ্রিলঃ নেপালে ৮০ বছরের মধ্যে ভয়াবহতম ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২ হাজার পেরিয়ে গেছে। এখনো বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকায় এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

    তবে নেপালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত এক হাজার ৮৯৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন চার হাজার ৭০০ জন। রাজধানী কাঠমাণ্ডুতেই চারশ মানুষ নিহত হয়েছেন।

    সরকারি সূত্র বলছে, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ির নিচে বহু মানুষ চাপা পড়ে আছেন। আর যারা বেঁচে গেছেন তাদের অধিকাংশই খোলা আকাশের নিচে রাত পার করেছেন।

    গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪১ মিনিটে রাজধানী কাঠমান্ডুসহ নেপালের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে এ ভূমিকম্পটি। রিখটার স্কেলে ৭.৯ মাত্রার শক্তিশালী এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল কাঠমান্ডু ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর পোখারার মধ্যবর্তী লামজুংয়ের ভূগর্ভের ৯.৩ মাইল গভীরে।  কাঠমান্ডু থেকে লামজুং প্রায় ৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।

    মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এর তথ্য অনুযায়ী- মূল কম্পনের পর অনুভূত হয় আরও বেশ কয়েকটি মাঝারি ও মৃদু মাত্রার কম্পন। প্রথম ভূমিকম্পটির ২৬ মিনিট পর দ্বিতীয় এবং এর ৮ মিনিট পর তৃতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন মাত্রার মোট ১৫-১৭টি কম্পন অনুভূত হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

    নেপালে ভূমিকম্প শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার ভয়ার্ত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়ায়। দেশটিতে বহু প্রাণহানি ছাড়াও ধ্বংস হয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা। এর মধ্যে কাঠমান্ডুর ধারাহারা বা ভীমসেন টাওয়ার একটি। নয়তলাবিশিষ্ট এই ভবনধসে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৮০ জনের। ১৮৩২ সালে নির্মিত এই ভবনটি গুঁড়িয়ে গেছে।

    কাঠমান্ডু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও ভূমিকম্পের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্গত কাঠমান্ডুর রাজপ্রাসাদ, প্রাচীন বেশ কয়েকটি মন্দিরও এই ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

    এদিকে, ভূমিকম্পের কারণে নেপালের হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলেও ব্যাপক তুষার ধসের খবর পাওয়া গেছে।

    ভূমিকম্পের পরপরই অ্যালেক্স গ্যাভেন নামের এক পর্বতরোহী এভারেস্টের একটি বেস ক্যাম্প থেকে তাৎক্ষণিকভাবে তুষার ধসের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে অবহিত করেন।

    ইতোমধ্যেই এভারেস্ট সংলগ্ন হিমালয়ের বিভিন্ন স্থান থেকে থেকে তুষারধসে চাপা পড়ে নিহত ১৮ পবর্তরোহীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়।

    নেপালের বাইরে বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভারতে ৫৪ জন, চীনের তিব্বতে ১২ জন এবং বাংলাদেশে দুই নারীসহ ৪ জন নিহত হয়েছে।

    অপরদিকে, ভূমিকম্পে ভারতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে  ৮৯ জনে দাঁড়িয়েছে। বিহার রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখানে ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিহারের পূর্ব চম্পারন, সীতামারি, দারভাঙ্গা, অররিয়া, মধেপুরা, সুপউল,  সীওয়ান, পশ্চিম চম্পারন, মধুবনী, কাটিহার, লখীসরায়, ছাপড়া, গোপালগঞ্জ, বেগুসরায়, নবাদা, পূর্ণিয়া, বৈশালী, সাসারাম, সমস্তিপুর এবং খগড়িয়াতে মোট ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

    ভূমিকম্পের আতঙ্কে বিহারের পাটনা গান্ধী ময়দানে অনেক মানুষ রাতভর আশ্রয় নিয়েছিলেন। আবহাওয়া দফতর সূত্রে প্রকাশ,  শনিবার বেলা ১১টা ৪৫ থেকে রাত ১১ টা ১৫ পর্যন্ত ২৫ বার কম্পন অনুভত হয়েছে। আরো বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প হতে পারে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর পর  লোকজন, বিভিন্ন পার্ক এবং খোলা জায়গায় রাত কাটান।

    ভূমিকম্পে উদ্ধার কাজ চালাতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাঁচটি দল মজফফরপুর, দারভাঙ্গা, সুপউল এবং গোপালগঞ্জে যাচ্ছে। বিহার সরকারের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে চার লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে।

    ভারতের উত্তরপ্রদেশে ভূমিকম্পে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খণ্ডে চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

    পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ি জেলায় মোট তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ (রোববার)  ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করতে উত্তরবঙ্গ সফরে যাচ্ছেন। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

    পশ্চিমবঙ্গে পার্কস্ট্রিটের উড়ালপুল, তিলজলার ব্রজনাথ বিদ্যাপীঠ, পাকসার্কাস, তিলজলা, বর্ধমানের শাখারিপুকুর এবং হাওড়ার ডোমজুড়সহ বিভিন্ন এলাকায় কতিপয় বাড়িঘরে ফাটল দেখা দিয়েছে। মালদার সুজাপুর ও রতুয়াতে স্কুল বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়লে ছাত্ররা আহত হয়।

    ভারতের অসম রাজ্যে বঙ্গাইগাও, মাজুলি, মঙ্গলদই, বরপেটায় অনেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাতিগাওয়ে এআইইউডিএফ-এর কার্যালয়, বরপেটায় ফকুরুদ্দিন আলী আহমেদ অসামরিক চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় এবং মারিগাওয়ে একটি সুপার মার্কেটের দেওয়ালে ফাটল ধরেছে। এছাড়া গুয়াহাটিতে অনেক ভবন এবং বিদ্যালয়ের দেওয়ালে ভাঙনের চিহ্ন দেখা গেছে। অসমে ৮/৯ রিখটার স্কেল মাত্রায় ভুকম্প হতে পারে বলে আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের এক সতর্কতা প্রকাশ হওয়ায় এখানে মানুষজন ব্যাপক উদ্বেগ ও চিন্তার মধ্যে রয়েছেন।