ভুয়া ওয়ারেন্টের ফাঁদে পড়ে গ্রেফতার ও কারাবাস

    0
    259

    আদালতের ভুয়া পরোয়ানায় গ্রেফতার ও আন্যায়ভাবে কারাবাসের খবর আমাদের দেশে কোন নতুন বিষয় নয়। ভুয়া ওয়ারেন্টের ফাঁদে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ ব্যাপারে আদালতপাড়ার আসাধু লোকজন যেমন জড়িত তেমনি পুলিশের গাফেলতিও বিশেষভাবে দায়ী বলে উল্লেখ করছেন সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগিরা।

    জানা গেছে, একটি চক্র প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে এ ধরনের ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা ডাকযোগে পাঠিয়ে দেয় সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন পুলিশ অথবা জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। এরপর ঐ গ্রেফতারি পরোয়ানা যাচাই-বাছাই না করেই পাঠিয়ে দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট থানায়। এভাবে আদালতের নির্দেশ থানায় পৌঁছার পর বিধি অনুযায়ি পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠিয়ে দেয়। যদিও গ্রেপাতারকৃত ব্যক্তি বা পরিবার মামলা দায়ের বা  পরোয়ানা জারীর ব্যাপারে কোন তথ্যই জানেন না।

    সম্প্রতি একাধিক ভুয়া ওয়ারেন্টের শিকার হয়ে দেশের পাঁচটি কারাগারে ৬৮ দিন হাজতবাস করে অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা আওলাদ হোসেন ।

    ভুক্তভোগী আওলাদ হোসেন জানান, ভুয়া ওয়ারেন্টে তাকে প্রথমে নেয়া হয় কক্সবাজার। কক্সবাজার থেকে কেরানীগঞ্জ তারপর একে একে রাজশাহী, বাগেরহাট, শেরপুর কারাগারে নেয়া হয়। এরপর আবার ঢাকায় পাঠানো হলে জেল কর্তৃপক্ষ যাচাই করে দেখতে পায় যে তার বিরুদ্ধে জারী করা ওয়ারেন্টই ভুয়া। তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন জানান অসাধু আইনজীবী ও আদালতের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে একটি চক্র এ কাজটি করেছে ।

    পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ শাখার সূত্র অনুযায়ি, ২০১৯ সালে ঢাকাসহ সারাদেশে সহস্রাধিক ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা ও মিথ্যা মামলা শনাক্ত করেছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন, একটি চক্র রয়েছে যারা এ ধরনের ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং মিথ্যা মামলা তৈরি করে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা আদায় করে। এ ধরনের চক্রের কয়েকজন সদস্য ইতোমধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তর খুব গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ভুক্তভোগীদের বিষয়ে মেট্রোপলিটন ও জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোর প্রধানদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। এদিকে ভুয়া ওয়ারেন্টের সঙ্গে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে উচ্চ আদালত গত ১০ ডিসেম্বর সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছে। এ বিষয়ে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি)মঙ্গলবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে কমিটি গঠন সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

    সিআইডি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেশ করে আদালতকে জানায়, ভুয়া ওয়ারেন্টের সঙ্গে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করতে  ৪ সদস্যের একটি দল কাজ শুরু করছে। সিনিয়র পুলিশ সুপার মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞার নেতৃত্বে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

    পুলিশের গাফেলতির শিকার শ্রীপুরের এক চা বিক্রেতা। কেবল  নামের মিল থাকায় গাজীপুরের শ্রীপুরে বন মামলায় পরোয়ানাভুক্ত আসামি করাতকল মালিক রফিকুল ইসলাম এর বদলে গত পাঁচ দিন ধরে  জেল খাটছেন এলাকার চা বিক্রেতা  রফিকুল ইসলাম । শ্র্রীপুর বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, লাইসেন্সবিহীন করাতকলে গজারি গাছ চেরাই করার অভিযোগে ২০১৫ সালের ৮ জুলাই শ্রীপুর সদর বন বিট অফিসার সহিদুর রহমান কেওয়া পশ্চিমখণ্ডের বেগুনবাড়ি এলাকার নুর মোহাম্মদের ছেলে করাতকল মালিক রফিকুল ইসলামকে আসামি করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বন) আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত এ মামলায় রফিকুলের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করে শ্রীপুর থানাকে গ্রেফতারের নির্দেশ পাঠায়।

    গত শুক্রবার শ্রীপুর থানা পুলিশের একটি দল গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে দারগারচালা মসজিদ মোড় এলাকায় গিয়ে   প্রকৃত আসামি করাতকলের মালিকের পরিবর্তে চা বিক্রেতা রফিকুল ইসলামকে তার দোকান থেকে গ্রেফতার করে। উপস্থিত এলাকাবাসী পুলিশকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বললেও  তারা সেটা আমলে নেয়নি। এ ব্যাপারে মামলার প্রকৃত আসামি রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে করাতকলের ব্যবসা করে আসছেন। মামলাটি তার বিরুদ্ধেই করা হয়েছিল। এ মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

    এ ব্যাপরে শ্রীপুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আক্তার হোসেন বলেন, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি মামলার প্রকৃত আসামি কি না তা  আদালত সিদ্ধান্ত নিবেন। আটককৃত ব্যক্তি  নিরাপরাধ হলে আইন তার পক্ষে কাজ করবে।পার্সটুডে