ভারতে প্রথমে নিজামউদ্দিন রাঃ ‘র দরগা জিয়ারত শেষে আঞ্চলিক যোগাযোগ ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বৈঠক

0
532
ভারতে প্রথমে নিজামউদ্দিন রাঃ 'র দরগা জিয়ারত
ভারতে প্রথমে নিজামউদ্দিন রাঃ 'র দরগা জিয়ারত

আমার সিলেট ডেস্কঃ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারতের মাধ্যমে তাঁর ৪ দিনের সফর শুরু করেছেন।ভারত সফরের প্রথম দিনেই আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দিল্লিতে পৌঁছার পর সোমবার ৫ সেপ্টেম্বর বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার হোটেল আইটিসি মাওরায় এসে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর।

দিল্লিতে এই হোটেলেই অবস্থান করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত, নেপাল এবং ভুটান থেকে কীভাবে বিদ্যুৎ আনা যেতে পারে সে বিষয়েও আলোচনা হয়। যে দিকটায় বেশি জোর দেওয়া হয়েছে সেটা হলো কানেক্টিভিটি। এই কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে ভারতের যেসব চাওয়া রয়েছে বাংলাদেশের কাছে এবং বাংলাদেশের পক্ষে যেসব পেন্ডিং ইস্যু আছে সেগুলোও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারত, ভুটান, নেপাল-সবমিলে এই পুরো অঞ্চলের কল্যাণের জন্য যেসব প্রজেক্ট হতে পারে সেগুলো নিয়ে আমাদের প্রায়োরিটি হওয়া উচিত। বেশকিছু প্রজেক্ট দেরি হচ্ছে, যেমন-বিবিআইএন আছে, আমাদের পোর্টে নেপাল ও ভুটানের ব্যবহার করার বিষয় আছে। এই কানেক্টিভিটি শুধু যে ফিজিক্যাল কানেক্টিভিটি, তা নয়। এখানে আছে এনার্জি কানেক্টিভিটি, পিপল টু পিপল কানেক্টিভিটি।

তিনি বলেন, গ্রিড কানেক্টিভিটি যার মাধ্যমে আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনতে পারি। একইভাবে নেপাল-ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আনা। ভারতেরও এক অংশ থেকে আরেক অংশে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়ার যে বিষয়গুলো নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তার সঙ্গে সহমত হয়েছেন।

এছাড়া পানির যে ইস্যুগুলো আছে, সেগুলোতে কিভাবে আরও অগ্রগতি আনা যায় সে বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সহিংসতা ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনও সমস্যা হবে কি না সে নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভারতের উদ্বৃত্ত জ্বালানী থাকলে দুই দেশের (বাংলাদেশ ও ভারত) সুবিধার ভিত্তিতে কীভাবে তা আমদানী করা যায় সে নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারতের মাধ্যমে ভারতে তাঁর ৪ দিনের সফর শুরু করেছেন। তিনি সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত এবং ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাত করেন।

প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি প্রেস সচিব কে এম সাখাওয়াত মুন সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেখানে নফল নামাজ আদায় ও মোনাজাতকালে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ কামনা করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পরে নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগার বিভিন্ন অংশে যান। ভারতে সুফি সংস্কৃতির অন্যতম পবিত্রস্থান এই দরগাটি প্রায় ৭০০ বছরের পুরনো। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দিল্লীতে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা নিয়মিত নিজামউদ্দিন দরগায় জিয়ারতে যেতেন।

প্রধানমন্ত্রী ৮ সেপ্টেম্বর ভারত সফরের শেষ দিনে রাজস্থানে আজমির শরীফ দরগা জিয়ারত করবেন।
বাংলাদেশী প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালে আজমির শরীফ জিয়ারত করেন। এর আগে ২০১০ সালে যখন তিনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তখনও আজমির শরীফ জিয়ারত করেন।

বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী আজ ভারতের স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে নয়াদিল্লীর পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। ভারত সফরের প্রথম দিন আজ বিকেলে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শংকর মৌর্য্য হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর স্যুইটের সম্মেলন কক্ষে তাঁর সাথে দেখা করেছেন।

পরে আদানী গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানী একই স্থানে শেখ হাসিনার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যায় ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোহাম্মদ ইমরান ও মিসেস জাকিয়া হাসনাত ইমরান আয়োজিত এক রিসেপশন-কাম-ডিনারে যোগ দেবেন।

সফরের দ্বিতীয় দিনে ৬ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ও একান্ত আলোচনা করবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং তাঁকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে।

দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং পরে একটি প্রেস বিবৃতি জারি করা হবে। শেখ হাসিনা পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তাঁর সম্মানে আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন।

একই দিন শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সাথে পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ৬ সেপ্টেম্বর তিনি রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরের দিন ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি এবং নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী তাঁর সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাত করবেন।

একই দিনে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা করার কথা রয়েছে। ৭ সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সভায় এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর অফিসারদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ফেরার আগে রাজস্থানের খাজা গরীব নওয়াজ দরগাহ শরীফ, আজমির (আজমির শরীফ দরগাহ) জিয়ারত করবেন।